প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতে হবে এআইসিসির বিশেষ অধিবেশন। রবিবার কংগ্রেসের মহাসচিব কেসি বেণুগোপাল এআইসিসির তরফে এক বিবৃতি দিয়ে এ কথা জানিয়েছেন। বিবৃতি জানানো হয়েছে, আগামী ৮-৯ এপ্রিল গুজরাতের অহমদাবাদ শহরে বসবে অধিবেশন। সারা দেশ থেকে এআইসিসির সব প্রতিনিধিকে এই বিশেষ অধিবেশনে ডাকা হবে বলে জানানো হয়েছে। এই দু’দিনের অধিবেশনে কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কংগ্রেস মহাসচিব বেণুগোপাল জানিয়েছেন, মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতি, সংবিধানের ওপর বিজেপির লাগাতার হামলা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এআইসিসির ভবিষ্যত কার্যসূচি ঠিক করা হবে এই অধিবেশনে। ১৯২৪ সালে মহাত্মা গান্ধী এআইসিসির সভাপতি হয়েছিলেন। সেই ঘটনার শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগেই এআইসিসির এই ধরনের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই পূর্ববর্তী ঘোষণামতোই অহমদাবাদে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এআইসিসি সূত্রে খবর, দেশের সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কংগ্রেস নেতৃত্বকে এই পদযাত্রা আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে কেন গুজরাতেই এই অধিবেশনের আয়োজন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে। তাঁদের একাংশ মনে করছেন, যে হেতু গুজরাত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য, তাই পদ্মগড় থেকেই বিজেপির এই দুই শীর্ষ নেতাকে নিশানা করবেন এআইসিসি নেতৃত্ব।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ক্ষমতা দখল না করতে পারলেও, মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে ধাক্কা দিতে সফল হয়েছিল কংগ্রেস। ৯৯টি লোকসভা আসন জিতে ১০ বছর পর প্রধান বিরোধী দলের তকমা পেয়েছে তারা, বিরোধী দলনেতা হয়েছেন রাহুল। তবে লোকসভা ভোটের ক্ষতে প্রলেপ দিতে সফল হয়েছে বিজেপি। কারণ যে মহারাষ্ট্রে লোকসভা ভোটে ধরাশায়ী হয়েছিল বিজেপি, সেখানেই কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ভব) এবং এনসিপি (শরদ পওয়ার) কে কোণঠাসা করে বিধানসভা ভোটে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। আবার নিশ্চিত হারের মুখ থেকে ফিরে হরিয়ানায় বিজেপি তৃতীয় বার সরকার গড়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে। আর সদ্য দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আপকে গদিচ্যুত করেছেন মোদী-শাহেরা। জম্মু ও কাশ্মীর এবং ঝাড়খণ্ডে পরাজিত হলেও, শক্তিশালী বিরোধী হিসেবে নিজেদের ধরে রাখতেও সক্ষম হয়েছে বিজেপি।
আরও পড়ুন:
এমতাবস্থায় আগামী কয়েক বছরে যে সব রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে, তাতে ভাল ফল করতে মরিয়া কংগ্রেস। আগামী বছর অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যে ভোট রয়েছে। তার পরের বছর ভোট হবে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হিমাচলপ্রদেশ এবং গুজরাতের মতো রাজ্যে। এই সব রাজ্যেও সংগঠনগত ভাবে বিজেপি যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই এখন থেকেই সেইসব যুদ্ধে কোমর বেঁধে নামতে চান বিরোধী দলনেতা রাহুল। সেই মঞ্চ প্রস্তুত করতেই কংগ্রেসের এই বিশেষ অধিবেশন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এআইসিসির এক শীর্ষ নেতা।
এআইসিসি সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের নেতৃত্বে এই অধিবেশন আয়োজিত হবে বলে জানানো হয়েছে। অসুস্থ হলেও, সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধী এই অধিবেশনে যোগদান করবেন বলেও জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল, কংগ্রেসশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বর্ষীয়ান নেতা ও এআইসিসির নেতৃত্ব এই অধিবেশনের আলোচনায় যোগ দেবেন। এ বছর ২৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কংগ্রেস দেশ জুড়ে একটি জনসংযোগ কর্মসূচি করবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বেণুগোপাল ঘোষিত এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে, সংবিধান বাঁচাও রাষ্ট্রীয় পদযাত্রা। এই পদযাত্রা সব রাজ্যেই আয়োজন করা হবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে।