Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Agnipath

Agnipath: ট্রেন ভাঙচুর, আগুন! মোকাবিলায় লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, অগ্নিপথ ঘিরে অগ্নিগর্ভ বিহার

বৃহস্পতিবার বক্সার, নওয়াদা, ছপরা, বেগুসরাই, জেহানাবাদের মতো এলাকায় ছড়িয়েছে বিক্ষোভ। রেলের পাশাপাশি অবরোধ করা হয়েছে জাতীয় সড়ক।

অগ্নিপথ-বিরোধী বিক্ষোভে জ্বলছে ট্রেন।

অগ্নিপথ-বিরোধী বিক্ষোভে জ্বলছে ট্রেন। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।

সংবাদ সংস্থা
পটনা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২২ ১২:৫১
Share: Save:

‘বীরতা সে যুধ্ পর’। অর্থাৎ, ‘বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধে’। ব্রিটিশ জমানায় গঠিত বিহার রেজিমেন্টের এই আদর্শকেই পণ করে যেন নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘মরণপণ যুদ্ধে’ অবতীর্ণ হয়েছেন বিহারের যুবকেরা। অগ্নিপথ প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের প্রতিবাদে সে রাজ্যের নানা প্রান্তে শুরু হয়েছে প্রবল বিক্ষোভ। ক্রমশ যা হিংসাত্মক হয়ে ওঠায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতা করে বুধবার বিহারের গয়া, পটনা, মুজফফ্‌রপুর-সহ নানা জায়গায় চাকুরিপ্রার্থীরা রেললাইন অবরোধ করেন। বৃহস্পতিবার বক্সার, নওয়াদা, ছপরা, বেগুসরাই, আরা, মুঙ্গের, জেহানাবাদের মতো এলাকায় ছড়িয়েছে বিক্ষোভ। মোদীর বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে। রেলের পাশাপাশি অবরোধ করা হয়েছে জাতীয় সড়ক। টায়ার জ্বালানো, পাথর ছোড়া, গাড়ি ও ট্রেন ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ট্রেনলাইনের উপরে জ্বালানো হয়েছে আগুন। এমনকি, ছপরায় ট্রেনেও আগুন ধরানো হয়েছে। নীতীশ কুমার সরকারের পুলিশ বাধা দিতে গেলে বেধেছে সংঘর্ষ। লাঠি ও কাঁদানে গ্যাসে কয়েক জন বিক্ষোভকারীর আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে আরা এবং জেহানাবাদে।

মঙ্গলবার অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ওই প্রকল্পে সাড়ে ১৭-২১ বছরের তরুণ-তরুণীরা চার বছরের জন্য মাসিক ৩০-৪৫ হাজার টাকার চুক্তির ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখায় (স্থল, নৌ এবং বায়ুসেনা) যোগ দিতে পারবেন। তাঁদের বলা হবে ‘অগ্নিবীর’। সেনায় শূন্যপদ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চতুর্থ বছরের শেষে সেই ব্যাচের সর্বাধিক ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে সেনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বাকিদের ১১-১২ লক্ষ টাকা হাতে দিয়ে পাঠানো হবে অবসরে। থাকবে না কোনও পেনশন।

এই পরিস্থিতিতে যে রাজ্যগুলির যুবকদের সেনায় যোগদানের হার বেশি, সেখানে আন্দোলনের সুর আরও চড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই তালিকায় উপরের সারিতে নাম রয়েছে বিহারের। দানাপুরের বিহার রেজিমেন্ট ১৯৪১ সাল থেকে অবিভক্ত বিহারের প্রত্যন্ত জেলাগুলির প্রান্তিক পরিবারের যুবকদের চাকরির অন্যতম ভরসা। অবিভক্ত বিহারের রামগড়েই (বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে) রয়েছে ১৮৪৬ সালে গঠিত শিখ রেজিমেন্টর সদর দফতর। পাশের রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুরে রয়েছে ১৭৭৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জমানায় গঠিত ‘দ্য গ্রেনেডিয়ার্স’-এর সদর দফতর। প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো ওই রেজিমেন্টের সেনাদের বড় অংশই বিহারের বাসিন্দা।

এই পরিস্থিতিতে কর্মসঙ্কোচনের আশঙ্কা ক্রমশ দানা বাঁধছে মগধভূমে। আর সেই সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিক্ষোভ। অভিযোগ, দেশের যুবকদের চাকরির বড় ভরসা হল ভারতীয় সেনা। চাকরিতে স্থায়িত্বের কারণে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণরা সেনার চাকরিকে বেছে নেন। কিন্তু অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ‘অগ্নিবীর’দের ৭৫ শতাং‌শকেই চাকরি পাওয়ার চার বছরের মধ্যে অবসর নিতে হবে। এককালীন কিছু টাকা মিললেও থাকবে না পেনশনের ব্যবস্থা। সে ক্ষেত্রে তাঁদের আবার নতুন করে চাকরির সন্ধান করতে হবে। অনিশ্চিত হয়ে পড়বে ভবিষ্যৎ।

অভিযোগ, বেহাল রাজকোষের কারণের চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের পথে হাঁটছে মোদী সরকার। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের ফলে সেনার অন্দরে স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেবে বলেও প্রাক্তন সেনা আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন। তা ছাড়া চার বছরের কাজের শেষে অবসর নেওয়ার চুক্তিতে নিয়োজিত ‘অগ্নিবীরে’রা কেন সীমান্ত সুরক্ষা বা জঙ্গি দমন অভিযানের সময় জেনে-বুঝে ঝুঁকি নেবেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে সামগ্রিক ভাবে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর আঁচ আসতে পারে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE