ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের দাবি মেনে সাদা পোশাকেই ওটিংয়ে হাজির সেনার তদন্ত দল। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
নাগাল্যান্ডে মন জেলার ওটিংয়ে সেনা কমান্ডোদের গুলিতে ১৩ জন নিরীহ কয়লা শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনী তদন্ত কমিটি গড়েছে। সেই কমিটির প্রতিনিধিরা আজ ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। তদন্ত দলের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল পর্যায়ের এক সেনাকর্তা।
৪ ডিসেম্বর বিকেলের ওই ঘটনার পর থেকে সেনার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় মানুষ। জেলায় সেনা টহল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন তাঁরা। সেনাবাহিনীর তদন্তে বাধা দেওয়ার কথা না বললেও, স্থানীয়দের দাবি ছিল, ফৌজি উর্দিতে আসা চলবে না সেনার তদন্তকারীদের। এই স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে সেনার তদন্তকারীরা এ দিন ওটিংয়ে যান সাদা পোশাকেই। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান তাঁরা। তাঁদের কাছ থেকে বুঝে নেন, ঠিক কী ভাবে আক্রমণ চলেছিল। সেখান থেকে তাঁরা যান টিজিট থানায়। থানায় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। যে চিকিৎসকেরা মৃত ও জখমদের প্রথম দেখেছিলেন, তাঁদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তদন্তকারীরা কথা বলেন ঘটনাস্থলে প্রথম হাজির হওয়া পুলিশকর্মীদের সঙ্গেও।
কিন্তু তাল কাটে তদন্তকারী দলের কয়েক জন সদস্যকে দেখে। কনিয়াক গ্রামবাসীদের দাবি, ৪ ডিসেম্বর গুলি করে গ্রামবাসীদের হত্যার ঘটনায় জড়িত একাধিক কমান্ডো আজ ওটিংয়ের ঘটনাস্থলে সেনার তদন্তকারী হিসেবে হাজির হন। এর তীব্র নিন্দা করে কনিয়াক সংগঠন বলে, “এই ঘটনা সেনার তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। সেনাবাহিনী অভিযুক্তদের সাজা না দিয়ে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে এবং বিশ্বাসঘাতকতা করে হত্যাকারীদের ফের কনিয়াক ভূমিতে নিয়ে আসার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে।” সংগঠন বুধবার রাতেই এক বিবৃতিতে বলে, “হত্যাকারীর সঙ্গে এনে সেনাবাহিনী স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ আরও উস্কে দিল, নিহতদের পরিবারের ক্ষত বাড়িয়ে দিল। তাই স্থানীয় নিয়ম মেনেই সেনার ইচ্ছাকৃত ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কনিয়াক সংগঠনের অভিযোগ, তদন্ত বিলম্বিত করে ও আইনের মারপ্যাঁচ দেখিয়ে আদতে ন্যায় বিচার দিতে চাইছে না সেনা। ৩০ দিনের মধ্যে দোষীদের শাস্তি দাবি করে কনিয়াকরা বলেছে, গ্রামে এসে গ্রামবাসীদের তুষ্ট করার চেষ্টা করে লাভ নেই। যে স্থানে সংঘর্ষ হয়েছিল, ওই এলাকাকে ‘গণহত্যা ক্ষেত্র’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। সেনার তরফে এ দিনও আবেদন জানানো হয়েছে, ঘটনা সম্পর্কিত কোনও প্রামাণ্য ভিডিয়ো বা ছবি বা তথ্য থাকলে তা ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে জানানো যাবে। গোপন রাখা হবে পরিচয়।
নাগাল্যান্ড পুলিশ ঘটনার তদন্তে যে বিশেষ তদন্ত দল বা সিট গঠন করেছে, তার সঙ্গেও পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে সেনা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগেই জানিয়েছিলেন ওটিংয়ে ঘটনায় জড়িত কমান্ডোরা আফস্পার সুরক্ষা পাবেন না। সেনা সূত্রে আজ জানানো হয়, পুলিশের তদন্তকারীরা আগামী দু’দিনের মধ্যে যোরহাটে এসে ঘটনায় জড়িত কমান্ডোদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। সেনার হাতে থাকা তথ্য-প্রমাণ পরীক্ষা করা ও বয়ান নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে পুলিশকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে।
নাগাল্যান্ড পুলিশ সিটের সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে ২২ করেছে। কিন্তু এখনও অভিযুক্তদের বয়ান নেওয়ার কাজ শুরু না হওয়ায় সরকার নির্ধারিত ৫ জানুয়ারির মধ্যে কোনও ভাবেই সিটের রিপোর্ট জমা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
নাগাল্যান্ডে ‘ভুয়ো সংঘর্ষে’ জড়িত কমান্ডোদের জিজ্ঞাসাবাদ করা ও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ‘ভুয়ো সংঘর্ষে’ স্বজন খোয়ানো মণিপুরের পরিবারগুলির যৌথ মঞ্চ ইইভিএফএএম। তারা মণিপুরেও একই নিয়ম মানা অর্থাৎ আফস্পা সুরক্ষা না দেওয়ার দাবি তুলেছে।
ইইভিএফএএম আজ দাবি করে, নাগাল্যান্ডের মতোই মণিপুরেও ভুয়ো সংঘর্ষের সব তদন্তে সিবিআই বা সিটকে নিরাপত্তাবাহিনীর যে কোনও পদমর্যাদার সব অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ও আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়ার স্বাধীনতা দিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy