Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Aged

প্রবীণদের ফুটপাতে ফেলে যাচ্ছে একের পর এক পরিবার

এমনই অসংখ্য ঘটনা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের সরকারি হাসপাতালের (জিএমসিএইচ) চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ঔরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৩৫
Share: Save:

পায়ে ইঁদুর কামড়ে দিয়েছিল। গ্রামের বাড়ি থেকে শহরের হাসপাতালে বাবাকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে এসেছিল ছেলে। কিন্তু হাসপাতালের চত্বরেই বৃদ্ধ বাবাকে একা ফেলে বাড়িতে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে ফিরে গিয়েছে সে। বাবার জায়গা হয়েছে হাসপাতালের সামনের ফুটপাতে। দিন কাটে সেখানেই মানুষের কাছে ভিক্ষা চেয়ে।

এমনই অসংখ্য ঘটনা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের সরকারি হাসপাতালের (জিএমসিএইচ) চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। এই হাসপাতাল তথা মেডিক্যাল কলেজটিতে চিকিৎসা করানোর জন্য রাজ্যের আটটি জেলা থেকে ভিড় করেন মানুষ। স্বাস্থ্যের সমস্যা নিয়ে আসেন প্রবীণ মানুষেরা। তবে সমস্যা আরও গভীরে— চিকিৎসা শেষে প্রবীণ মানুষটিকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বদলে হাসপাতালে ভিড়ের মধ্যে ফেলে রেখে পালিয়ে যেতেই বেশি পছন্দ করেন পরিবারের সদস্যেরা। হাসপাতালের সুপার সুরেশ হারবাদের কথায়, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের শুরুর সময়ে এই ধরনের ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল। প্রবীণদের ফেলে রেখে রেখে যাচ্ছিলেন অনেকে। ঔরঙ্গাবাদ পুরসভাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এ নিয়ে প্রচার শুরু করি। অনেক প্রবীণকে শেল্টার হোমেও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাঁদের অনেকে হোম থেকে পালিয়ে গিয়েছেন।’’

সুপার বলেন, ‘‘ঘরে জায়গা মেলেনি যে মানুষটির, দেখা যাচ্ছে, তিনি হাসপাতাল চত্বরে কিংবা আশপাশের ফুটপাতে থাকতে চাইছেন। সেখানে থাকলে পথচারীদের থেকে টাকাপয়সা কিংবা খাবার জোগাড় করা সহজ মনে করছেন।’’ এ ভাবেই হাসপাতালের আশপাশে ভিড় বাড়ছে প্রবীণদের। সুপার জানিয়েছেন, প্রচার শুরু করার পরে সংখ্যাটা কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু বাবা-মাকে হাসপাতালে ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা ফের বাড়ছে। তাই ফের নতুন করে প্রচার শুরু করতে চায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ কাজে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতা চাইছেন তাঁরা।

আর কাছের মানুষগুলির হাত ঘরে এক দিন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে ঘরে ফেরা হয়নি যাঁদের, তাঁরা কী ভাবছেন? জেলা হাসপাতালের সামনের ফুটপাতে বসে এমনই এক প্রবীণ গল্প শোনান, পাশেরই জালনা জেলার একটি গ্রামে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। এক দিন ইঁদুর কামড়ে দিয়েছিল তাঁকে। চিকিৎসা করাতে এই হাসপাতালেই নিয়ে এসেছিল ছেলে। তিনি ঠিক ভাবে হাঁটতে পারছিলেন না। ভিড়ের মধ্যে ছেলেকে খুঁজে পাননি। পরে জেনেছেন, বাড়িতে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েছে সে। বৃদ্ধ বাবার জায়গা হয়েছে ফুটপাতে। প্রবীণ মানুষটি বলেন, ‘‘ছেলে নিজের পরিবার নিয়েই ব্যস্ত। তবে আমিও ভেবে রেখেছি, যদি এখানেই মারা যাই, আমার অন্ত্যেষ্টির কাজ কেউ না কেউ তো করবেনই! এ কথা ভেবেই শান্তিতে রয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

aged Footpath family members
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE