কংগ্রেস, অকালি দল, বিজেপি-অমরিন্দর সিংহের জনসভায় যাঁরা হাজির হচ্ছেন, তাঁরাই সভা শেষ হলে বলছেন, এ বার আম আদমি পার্টি ভোট টানবে।
ফাইল চিত্র।
নভজ্যোৎ সিংহ সিধুর হয়ে ‘রোড শো’ করতে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা অমৃতসরে গিয়েছিলেন। তাঁর জন্য টিক্কা কাবাব গিয়েছিল লরেন্স রোডের অমরজিৎ সিংহের রেস্তরাঁ থেকে। অমৃতসর গেলে অরুণ জেটলিরও মনে পড়ত অমরজিতের তন্দুরি চিকেন। পঞ্জাবের রাজনীতির তন্দুরে কী রান্না হচ্ছে, অমরজিৎ না কি আগেই তার গন্ধ পান! সেই অমরজিৎ বলছেন, “এ বার অনেকেই চুপচাপ আম আদমি পার্টিকে ভোট দেবেন।”
অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির থেকে পাটিয়ালায় মহারাজা ভূপিন্দর সিংহের তৈরি কালী মন্দিরের সামনে আসুন। সেই ‘চোরাস্রোত’। দিল্লি থেকে আসা সাংবাদিকের পরিচয় পেয়ে সবাই ঘুরে-ফিরে একটাই কথা বলছেন, “শুনেছি, অরবিন্দ কেজরীওয়াল দিল্লিতে দারুণ কাজ করেছেন। স্কুল, হাসপাতালের ভোল পাল্টে দিয়েছেন! এ বার পঞ্জাবেও আম আদমি পার্টির একবার সুযোগ পাওয়া উচিত।”
স্বাধীনতার পর থেকে পঞ্জাবে ক্ষমতার গদিতে হয় কংগ্রেস, না হলে শিরোমণি অকালি দল। এ বার যেন পরিবর্তনের হাওয়া। কংগ্রেস, অকালি দল তো অনেক হল! এ বার আম আদমি পার্টিকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখা যাক! আম আদমি পার্টির প্রচারে গান বাজছে, ‘এক মওকা দেনা কেজরীওয়াল নু, এক মওকা দেনা ভগবন্ত মান নু’। অরবিন্দ কেজরীওয়াল, আপ-এর মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভগবন্ত মানও একটাই সুযোগ চাইছেন। ভগবন্তের কেরিয়ার শুরু কৌতুকশিল্পী হিসেবে। টিভিতে তাঁর ‘জুগনু মস্ত মস্ত’ অনুষ্ঠানে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতার আম আদমিকে বোকা বানানো নিয়ে করুণ রসিকতা পঞ্জাবের মন জিতেছিল। দু’বারের সাংসদ ভগবন্তের এখন সেরা পুঁজি, মানুষের কাছাকাছি থাকা, দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তি।
দিল্লির সীমানায় পঞ্জাবের কৃষকরা এক বছর আন্দোলন করেছিলেন। দিল্লির কেজরীওয়ালের সরকার, দল নীরবে চাষিদের সাহায্য করেছে। পঞ্জাবের গ্রাম বা পিণ্ড-এ কংগ্রেস, অকালিদের মতো সংগঠন আপ-এর নেই। তাই ভোট মিললেও শেষ পর্যন্ত কতগুলো আসন মিলবে, তা নিয়ে সংশয়। কিন্তু সিঙ্ঘু-টিকরি-গাজ়িপুরে বছর কাটিয়ে ফেরা চাষিদের মুখে মুখে দিল্লি সরকারের কাজের গুণগান জালন্ধর থেকে লুধিয়ানার গম, সর্ষের খেতে দোল খাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদী দেশে ‘গুজরাত মডেল’-এর স্বপ্ন বেচেছিলেন। কেজরীওয়ালও পঞ্জাবে ‘দিল্লি মডেল’-এর স্বপ্ন বেচতে সফল।
এবং শেষবেলায় সেই স্বপ্ন ভেঙে দিতে ফের হাজির কেজরীওয়ালের সঙ্গে খলিস্তানিদের যোগাযোগের অভিযোগ। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ২০১৭ সালের পঞ্জাব বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে। সে বার ভোটগ্রহণ ছিল ৪ ফেব্রুয়ারি। ৩০ জানুয়ারি অভিযোগ ওঠে, কেজরীওয়াল মোগায় প্রচারে গিয়ে খলিস্তানি জঙ্গি, গুরিন্দর সিংহের বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। খলিস্তান কমান্ডো ফোর্সের গুরিন্দরের নামে মোগায় বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ ছিল। খলিস্তানিরা আপ-প্রার্থীদের অর্থ সাহায্য করছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
এ বার ২০ ফেব্রুয়ারি পঞ্জাবে ভোট। চার দিন আগে আচমকা কেজরীওয়ালের পুরনো সঙ্গী কুমার বিশ্বাসের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছে বিজেপি। কুমার বলেছেন, কেজরীওয়াল পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হতে না পারলে পৃথক খলিস্তান রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হতে চান। পাঁচ বছর আগেও আপ-এর পক্ষে প্রবল হাওয়া উঠেছিল। মনে হচ্ছিল, দিল্লির পরে আপ পঞ্জাবেও সরকার গড়ছে। কিন্তু ভোটের আগে খলিস্তানি-যোগের অভিযোগের ধাক্কায় ১১৭ আসনের বিধানসভায় মাত্র ২০টি জিতেছিল আপ। এ বারও কি তা-ই হবে?
এত দিন নরেন্দ্র মোদী আপ-কে কংগ্রেসের ফোটোকপি বলছিলেন। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা বলছিলেন, বিজেপি ও আপ একই মুদ্রার এ পিঠ, ও পিঠ। এ বার মোদী, প্রিয়ঙ্কা এক স্বরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে আঁতাঁত নিয়ে কেজরীওয়ালকে নিশানা করেছেন। আর আপ বলছে, তাদের ক্ষমতায় আসা আটকাতে কংগ্রেস, বিজেপি, অকালি দল— সবাই ষড়যন্ত্রে এককাট্টা। ভগবন্তের দাবি, “অকালি দল, কংগ্রেস মিলে পালা করে ৭০ বছর পঞ্জাবকে লুট করছে। আম আদমি পার্টি এই লুট বন্ধ করতে চায় বলেই কেজরীওয়ালকে ঠেকাতে খলিস্তান টেনে আনতে হয়!” আর কেজরীওয়ালের প্রশ্ন, তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী হলে মোদী সরকার তাঁকে গ্রেফতার করছে না কেন?
কংগ্রেস, অকালি দল, বিজেপি-অমরিন্দর সিংহের জনসভায় যাঁরা হাজির হচ্ছেন, তাঁরাই সভা শেষ হলে বলছেন, এ বার আম আদমি পার্টি ভোট টানবে। পাটিয়ালার প্রথম শপিং মলের কর্মী পবন কৌশলের প্রশ্ন, “দিল্লিতে আপ-সরকার তো আমাদের মতো কর্মীদের কমপক্ষে বেতনও অনেক উঁচুতে বেঁধে দিয়েছে শুনেছি। পঞ্জাবে আপ সরকারে এলে আমাদেরও বেতন বাড়বে।” দশ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে পাটিয়ালায় ই-রিকশা চালাতে আসা বিট্টু সিংহের সাফ কথা— কংগ্রেস, অকালি-বিজেপি আম আদমির জন্য কিছুই করেনি। এ বার ঝাড়ুর জাদু!
ঝাড়ু কি সত্যিই জাদু দেখাবে? না কি পরিবর্তনের হাওয়া খলিস্তানি-চাপে পঞ্চনদীর জলে ডুবে যাবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy