Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Inspirational story

পিওন থেকে প্রফেসর! চা-জল-খাতা দেওয়ার ফাঁকেই গবেষণা সম্পূর্ণ, নেট পরীক্ষায় সাফল্যও

২০ বছর ধরে পিওনের চাকরি করেছেন কমল কিশোর মণ্ডল। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতির প্রয়োজনে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিওনের চাকরি নিতে হয়েছিল তাঁকে।

সংবাদ সংস্থা
পটনা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৯:১৩
Share: Save:

নয়ে না হলে নাকি নব্বইয়েও হয় না— প্রচলিত এই লব্জকে ভুল প্রমাণ করে ছাড়লেন ৪২ বছরের কমলকিশোর মণ্ডল। বিহারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। অথচ এই তিনিই কিছু দিন আগে পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই টেবলে টেবলে চা-জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন!

২২ বছর বয়স থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিওনের চাকরি করছেন কমলকিশোর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করেও কেরিয়ার শুরু করেছিলেন নাইট গার্ডের চাকরি দিয়েই। আপাতত তিনি এমএ, পিএইচডি। গত চার বছরে গবেষণা শেষ করে, নেট পরীক্ষায় সফল হয়ে অবশেষে পুরনো কর্মক্ষেত্রে তিনি ফিরে এসেছেন অধ্য়াপক হয়ে। জীবন যতই পরীক্ষা নিক, পরিশ্রম যে বিফলে যায় না তা-ই প্রমাণ করে দিয়েছেন কমলকিশোর।

পারিারিক অনটনের জেরেই স্নাতক পড়াশোনা ছেড়ে কাজে ঢুকতে হয়েছিল। বাবার চায়ের দোকান। সেটি এখনও চালান তিনি। কিন্তু সেই সময়ে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসারের হাল ধরতে হয় কমলকিশোরকে।দোকান সামলে নাইট গার্ডের কাজ করতেন। এরপরই তিলকা মাঝি ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিওনের চাকরির প্রস্তাব আসে। চাকরিটা নিয়েও নেন কমল।

প্রফেসরদের টেবলে চা-জল-খাতা-বই পৌঁছে দেওয়ার কাজ ছিল। কিন্তু ক্লাসরুমে ঢোকা-বেরোনোর ফাঁকে ছাত্র-ছাত্রীদের দেখে তাঁরও ইচ্ছা হতে পড়াশোনা করার। শেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এমএ পড়া শুরুও করে দেন। এমএ শেষ হলে পিএইচডি। তার জন্য অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে বেশ সময় লেগেছিল তাঁর। কিন্তু কমলকিশোরের ইচ্ছেই জিতে গিয়েছিল শেষ পর্যন্ত।

২০১৩ সালে পিএইচডির পড়াশোনা শুরু করেন। চার বছর লাগে গবেষণা সম্পূর্ণ করতে। তার পর থেকেই নেটের প্রস্তুতি শুরু করে দেন কমল। তখনও পিওনের চাকরি করছেন তিনি। কিন্তু লেকচারারের চাকরির জন্যও আবেদন করতে থাকেন।

নেট পাশ করার পর ২০২০ সালে আচমকাই একটা সুযোগ আসে। বিহার স্টেট ইউনিভার্সিটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায় তারা তিলকা মাঝি ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি শূন্য পদে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগ করবে। পুরনো কর্মক্ষেত্র যেখানে পিওন হিসেবে কাজ করেছেন, সেখানে অধ্যাপক হয়ে ফেরা যাবে! মনে হতেই চাকরির আবেদন করেন তিনি। সম্প্রতি ফল বেরোয়। কমলকিশোর জানতে পারেন তিনি যে বিভাগে পিওনের চাকরি করতেন সেখানেই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে যোগ দিতে চলেছেন। বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়।

সম্প্রতি এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কমলকিশোর বলেন, ‘‘কষ্ট করতে হয়নি তা নয়। কিন্তু আমি আমার দারিদ্রকে আমার বিদ্যার্জনের পথে বাধা হয়ে আসতে দিইনি। সকালে ক্লাস করে দুপুরে কাজ করতাম। রাতে বাড়ি ফিরেও চলত পড়াশোনা।’’

কমল কিশোরকে নিয়ে গর্বিত প্রফেসাররাও। অনেকেই যাঁরা কমলের দুঃসময়ে তাঁকে দেখেছেন, তাঁরা বলছেন, ‘‘ওঁর কাহিনি অনেককে অনুপ্রেরণা দেবে। আশাহতরা নতুন করে বাঁচতে শিখবে ওঁকে দেখলে। ওঁর কথা জানলে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy