Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

‘অভিনন্দন ভারত’! মোদী মুগ্ধ, দেশি টিকায় তবু ‘সংশয়’

বিরোধী শিবিরের নেতাদের জিজ্ঞাসা, বেশি তাড়াহুড়ো করে দুই প্রতিষেধককে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হল না?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩২
Share: Save:

রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ কোভিডের দুই প্রতিষেধককে (কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন) নিয়ন্ত্রক ডিসিজিআই ছাড়পত্র দিতেই ভেসে এল নরেন্দ্র মোদীর অভিনন্দন-বার্তা। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘‘অভিনন্দন ভারত। বৈজ্ঞানিক, আবিষ্কর্তাদের অভিনন্দন’’। দাবি করলেন, অতিমারির বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে এ এক ‘নির্ণায়ক মুহূর্ত’।

কিন্তু প্রশ্ন উঠতেও দেরি হল না। বিরোধী শিবিরের নেতাদের জিজ্ঞাসা, বেশি তাড়াহুড়ো করে দুই প্রতিষেধককে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হল না? অভিযোগ, চিন ও রাশিয়ার পরে ভারতই প্রথম দেশ, যেখানে কোনও করোনার প্রতিষেধকের তৃতীয় দফার পরীক্ষা বা ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই অন্তত জরুরি ভিত্তিতে তা প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হল।

বিরোধী শিবিরের দাবি, যে সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল, তথ্য-পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দুই টিকা ছাড়পত্র পেল, আন্তর্জাতিক প্রথা মেনে তা প্রকাশ করা হোক। কংগ্রেসের শশী তারুর থেকে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি— অনেকেরই আশঙ্কা, সব দিক যাচাই না-করে, তড়িঘড়ি প্রতিষেধক প্রয়োগে বিপদ হতে পারে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের ব্যাখ্যা চেয়েছেন। মন্ত্রীর পাল্টা বক্তব্য, এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনীতি করা লজ্জাজনক।

আরও পড়ুন: দুই টিকাই ১১০ শতাংশ নিরাপদ, আশ্বস্ত করলেন ডিসিজিআই

মোদী করোনার প্রতিষেধকের জন্য আজ বৈজ্ঞানিক, গবেষকদের কৃতিত্ব দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন এর কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীকেও দিতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের যুক্তি, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব অনেকখানি ফারাক গড়ে দেয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারতের পরিকল্পনাকে জোরদার করতে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিষেধককে ছাড়পত্র এক নতুন মাইল ফলক হয়ে উঠবে।’’

মোদীকে কৃতিত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপির এই ‘স্বদেশি’ টিকার প্রতি মোহ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি শুক্রবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার তৈরি কোভিশিল্ডে ছাড়পত্র দিয়েছিল। পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট এ দেশে তা তৈরি করবে। এই টিকার ক্ষেত্রে অন্তত ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় তিন দফার পরীক্ষার ফলাফল রয়েছে। কিন্তু হায়দরাবাদের সংস্থা ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তিনটি ধাপের মধ্যে দু’টির ফলাফলের ভিত্তিতে। প্রশ্ন উঠছে, কোভিশিল্ডের সঙ্গে পাল্লা দিতেই কি ‘স্বদেশি’ কোভ্যাক্সিনকে তড়িঘড়ি সায়?

আরও পড়ুন: দেশজ জ়াইকোভ-ডি টিকা পরীক্ষা বাংলাতেও

প্রধানমন্ত্রী অবশ্য দু’টি প্রতিষেধককেই এ দিন ‘মেড ইন ইন্ডিয়ার’ তকমা দিয়েছেন। জয়রাম বলেন, ‘‘ভারত বায়োটেক প্রথম সারির সংস্থা। কিন্তু হেঁয়ালি হল, তিন দফার পরীক্ষার আন্তর্জাতিক প্রথা কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে বদলে গেল।’’

তারুরের অভিযোগ, ‘‘কোভ্যাক্সিনের ছাড়পত্র আগেভাগে দেওয়া হয়েছে। তা বিপজ্জনক হতে পারে। পুরো পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে এর প্রয়োগ না-করাই উচিত। আপাতত অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার প্রয়োগ শুরু হোক।’’

ইয়েচুরির যুক্তি, দুই প্রতিষেধকের ছাড়পত্রের সঙ্গে সমস্ত বৈঠকের বিবরণ, পরীক্ষায় ফলাফল, তথ্য প্রকাশ করা হোক। তা হলে মানুষের মনে আস্থা তৈরি হবে। সারা দুনিয়ায় এমন হচ্ছে। তাঁর মতে, ‘‘ভারতে গণটিকাকরণের রেকর্ড গর্ব করার মতো। ভারতের ওষুধ সংস্থাগুলি বহু বছর ধরে যে সুনাম তৈরি করেছে, রাজনৈতিক লাভের জন্য ছাড়পত্রের প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো হলে, তা নষ্ট হবে।’’ একাধিক তথ্যের অধিকার কর্মী এ দিন জানিয়েছেন, কিসের ভিত্তিতে প্রতিষেধককে ছাড়পত্র দেওয়া হল, তা জানতে চাওয়া হবে।

শনিবারই সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছিলেন, তিনি বিজেপিকে ভরসা করেন না বলে প্রতিষেধকও নেবেন না। তাঁর দলের এক নেতার মন্তব্য, এই টিকা নিলে, পুরুষত্বহীনতার সমস্যা হতে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জবাব, ‘‘বিজ্ঞানসম্মত প্রথা মেনে ছাড়পত্র পাওয়া প্রতিষেধকের কুখ্যাতি করবেন না।’’

ডিসিজিআই প্রধান বলেন, ‘‘কোনও আশঙ্কা থাকলে, ছাড়পত্র দেওয়াই হত না। প্রতিষেধক ১১০ শতাংশ নিরাপদ। অল্প জ্বর, ব্যথা হতেই পারে। কিন্তু তা বলে এই সব পুরুষত্বহীনতার প্রসঙ্গ বাজে কথা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Vaccines
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy