করমণ্ডল ট্রেন দুর্ঘটনার একটি ছবি। —ফাইল চিত্র।
বালেশ্বরের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ১৫টা দিন। দুর্ঘটনায় বহু নিহতের পরিবার উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দাখিল করে দেহ নিয়ে চলে গিয়েছে। যে দেহগুলি এখনও শনাক্ত করা যায়নি, সেগুলির ডিএনএ পরীক্ষা করানো হবে বলে জানিয়েছে রেল। আহতদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু এখনও বাড়ি ফেরেননি সে দিনের করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ট্রেনের চালক গুণনিধি মোহান্তি! গুণনিধির ফেরার আশায় দিন গুনছেন তাঁর বাবা, ভাই, দাদা-সহ পরিবারের সকলে। ‘হিন্দুস্থান টাইমস’-এর একটি প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
গত ২ জুন ওড়িশার বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস, ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। তীব্র গতিতে চলতে চলতে হঠাৎই লুপ লাইনে ঢুকে গিয়ে মালগাড়িকে ধাক্কা মেরে উল্টে গিয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের ইঞ্জিনটি উঠে গিয়েছিল মালগাড়ির একটি কামরার উপরে। দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই ট্রেনটির চালক কেমন আছেন, কোথায় রয়েছেন, তা নিয়ে একাধিক জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছিল। রেল সূত্রে জানা যায়, আহত গুণনিধিকে ভুবনেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, তাঁর পাঁজরের তিনটি হাড় ভেঙে গিয়েছে এবং মাথাতেও চোট রয়েছে।
দুর্ঘটনার দু’দিন পর গুণনিধিকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন গুণনিধির ভাই রঞ্জিত মোহান্তি। তিনি ‘হিন্দুস্তান টাইমস’কে জানিয়েছেন, ফোন নিয়ে তাঁকে আইসিইউ-এ ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, বুকে রক্ত জমে গিয়েছে গুণনিধির। অসহ্য যন্ত্রণা হওয়ার কারণে তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই বলেও জানান চিকিৎসকেরা। গুণনিধির স্ত্রীকেও ভিতরে গিয়ে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন রঞ্জিত। তাঁর কথায়, “আমি নিশ্চিত নই যে, বৌদিকে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, না কি দেওয়া হয়নি।” গুণনিধির দাদা, পেশায় আইনজীবী সঞ্জয় মোহান্তিও জানিয়েছেন যে, হাসপাতালে গিয়েও আহত ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি।
অন্য দিকে, গুণনিধিকে চার-পাঁচ দিন আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বেসরকারি হাসপাতালটি। ওই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক এবং পদাধিকারী জানিয়েছেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের আহত চালক এবং সহ-চালককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোথায়? গুণনিধির ভাই বলছেন, “আমরা হাসপাতালে এখনও অপেক্ষা করছি। আমাদের কেউ বলেনি যে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ছাড়া হলে তো সে আমাদের বাড়িতেই আসবে।” এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে ইস্ট কোস্ট রেলও। ইস্ট কোস্ট রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ‘হিন্দুস্থান টাইমস’কে বলেন, “স্বাস্থ্য মানুষের ব্যক্তিগত একটি বিষয়। আমরা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারি না।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “দু’টি তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই এবং সিআরএস) দুর্ঘটনার তদন্ত করছে। আমরা এখনই এই বিষয়ে কিছু বলতে পারি না।”
চালক গুণনিধির পথ চেয়ে বসে আছেন তাঁর অশীতিপর বাবা বিষ্ণুচরণ মোহান্তিও। স্বগতোক্তির ভঙ্গিতেই তিনি বলছেন, “সবাই ভাবছে, দুর্ঘটনার জন্য আমার ছেলেই দায়ী। ও ২৭ বছর ধরে ট্রেন চালাচ্ছে। কখনও কোনও ভুল করেনি।” দুর্ঘটনার পর ছেলের সঙ্গে এখনও অবধি কথা না হলেও, ছেলের ফেরার আশায় বসে রয়েছেন তিনি। কটক শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নাহারপদ গ্রামে বাড়ি গুণনিধিদের। এলাকায় গুণনিধিকে নিয়ে নানা গুঞ্জন চললেও তাতে কান দিতে চাইছেন না পরিবারের সদস্যেরা। উল্লেখ্য, গত ২ জুনের ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৯১ জন মারা যান, আহত হন ১১০০ জন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন সে দিনের করমণ্ডলের চালক গুণনিধিও। কিন্তু বর্তমানে তিনি কোথায় রয়েছেন, আপাতত তা জানা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy