ফাইল চিত্র।
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পিছনে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা গোড়া থেকেই উড়িয়ে দেয়নি রেল। বরং প্রাথমিক ভাবে দুর্ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে জানিয়েও রবিবার তার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। এরই সঙ্গে ওড়িশার বালেশ্বর থানায় ‘অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি’দের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ভাবে কর্তব্যে গাফিলতি, ট্রেনে যাত্রীদের সুরক্ষা বিঘ্নিত করা, অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে রেলের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ দায়ের করেছে রেল পুলিশ। তদন্ত শুরু হয়েছে তার উপরে ভিত্তি করেও।
সূত্রের খবর, সোমবার রেল বোর্ডের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে সবিস্তার জানানো হয়েছে। সূত্রের দাবি, প্রাথমিক ভাবে দুর্ঘটনার পিছনে ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং সিস্টেম বা পয়েন্ট মেশিনে পরিকল্পিত হস্তক্ষেপকেই দায়ী করা হয়েছে।
প্রথম থেকেই রেলের বক্তব্য, করমণ্ডলের জন্য আপ মেন লাইনের সিগন্যাল সবুজ থাকলেও, পয়েন্টের অভিমুখ খোলা ছিল লুপ লাইনের দিকে। তাতে ঢুকে পড়েই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে আছড়ে পড়েছিল ট্রেনটি। যা হওয়ারই কথা নয়। রেলকর্তাদের মতে, ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং বা পয়েন্ট মেশিনে পরিবর্তনে কী ভাবে এই ‘বিচ্যুতি’ হল কিংবা তাতে কারও হাত ছিল কি না, সেটি খতিয়ে দেখা জরুরি। সেই কারণেই যে যে ধারায় রেল পুলিশ মামলা করেছে, তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, ‘অপরাধমূলক উদ্দেশ্য’ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলেই তদন্তের দায় বর্তেছে সিবিআইয়ের উপরেও। ওই কাজে সোমবার তাদের ১০ সদস্যের দল খুরদা রোড স্টেশনে যায় বলে খবর।
তবে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির পাশাপাশি করমণ্ডল-কাণ্ডে নিজেদের মতো করে তদন্ত করবেন রেলওয়ে সেফটি কমিশনার। ঘটনার কার্যকারণ খতিয়ে দেখবে রেলের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি, জিআরপি-ও।
এর মধ্যে রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের তদন্ত দুর্ঘটনার দায় নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি রুখতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তারও সুপারিশ করবে। ঘটনার পিছনে অপরাধমূলক উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা জানতে তদন্তে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে বলে রেল সূত্রের খবর।
সোমবার খড়্গপুরে তদন্ত শুরু করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ভারপ্রাপ্ত সেফটি কমিশনার অনন্ত মধুকর চৌধুরি। এ দিন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক আধিকারিক এবং রেলকর্মীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৫-৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁরা ট্রেনের কর্মী এবং চালক। গ্রামবাসীদের সাক্ষ্য এখনও নেওয়া হয়নি। কেউ সাক্ষ্য দিতে চাইলে, তা গ্রহণ করার জন্য রেল প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন কমিশনার। তাঁর কথায়, ‘‘তদন্তে আরও অন্তত ২-৩ দিন সময় লাগবে।’’
এ দিন রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের দল বাহানাগা স্টেশনের প্যানেল রুম পরিদর্শন করে বিভিন্ন নথি খতিয়ে দেখার পাশাপশি একাধিক যন্ত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। ওই প্রতিনিধিদলের তরফে আর কে শর্মা বলেন, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তদন্তকারী দলের একাংশ খড়্গপুরে ডিভিশনের সিস্টেম টেকনিক্যাল স্কুলেও যায়। ফরেনসিক দলের প্রতিনিধিরা ডিআরএম ভবনের রেল পরিচালন বিভাগে যান।
রেলওয়ে সেফটি অফিসার এ এম চৌধুরি বলেন, ‘‘আমরা সোম এবং মঙ্গলবার তদন্ত করছি। খতিয়ে দেখছি লাইন এবং সিগন্যালিং ব্যবস্থা ঠিক কী ছিল। কয়েক জন রেলকর্মীকে ডেকে এ দিন কথাও বলা হয়েছে। আরও কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। গ্রামবাসীদের সঙ্গেও কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy