Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Plane Crash

মেঙ্গালুরুর পরে ফের প্রশ্নে ‘টেবলটপ’ রানওয়ে

শুক্রবারের দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া পাইলট দীপক বসন্ত শাঠের পরিবারও টেবলটপ রানওয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ০৩:২২
Share: Save:

দশ বছর আগে মেঙ্গালুরুর বিমান দুর্ঘটনায় ১৫৮ জনের প্রাণহানির পরে প্রথম প্রশ্ন উঠেছিল দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের টেবলটপ রানওয়েগুলির নিরাপত্তা নিয়ে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কোঝিকোড়ে রানওয়ে থেকে বিমান পিছলে পাশের খাদে পড়ে দু’টুকরো হয়ে ১৮ জনের মৃত্যুর পরে সেই প্রশ্ন এখন সরকার এবং উড়ান কর্তৃপক্ষকে কার্যত তাড়া করে ফিরছে। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এখনও সাফাই গাইছেন— এত দিন তো দিব্যি বিমান ওঠানামা করছে এই রানওয়ে দিয়ে! তদন্তে বোঝা যাবে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ।

কী এই টেবলটপ রানওয়ে?

কোনও পাহাড়ের মাথা কেটে এক কিলোমিটারের বেশি একটানা লম্বা যে রানওয়ে বানানো হয়, তারই এই নাম। রানওয়েটি উঁচু জায়গায় হওয়ায় তাকে ঘিরে থাকে গিরিখাদ। প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিমান অবতরণের সময়ে পিছলে গেলে বা রানওয়ের নির্দিষ্ট দূরত্বে বিমানটিকে থামানো না গেলে সেটি খাদে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ২০১০-এর ২২ মে মেঙ্গালুরুতে এবং কাল কোঝিকোড় বিমানবন্দরে ঠিক সেই বিষয়টিই দেখা গিয়েছে। মেঙ্গালুরুতে বিমানটি পাশের খাদে আছড়ে পড়ার পরে দাউদাউ করে জ্বলে যায় সেটি। ফলে ১৫৮ আরোহী দগ্ধ হয়ে বা ধোঁয়ায় দম আটকে মারা যান। কাল কোঝিকোড়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমানটি অবতরণের সময়ে এত বৃষ্টি পড়ছিল যে সেটিতে আগুনও জ্বলতে পারেনি। উদ্ধারকারীরা বলছেন, এর ফলে প্রাণহানি কম হয়েছে। কারণ বিমানটি যে ভাবে দু’টুকরো হয়েছে, তাতে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বালে তাঁরা প্রাথমিক ভাবে আশঙ্কা করেছিলেন।

শুক্রবারের দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া পাইলট দীপক বসন্ত শাঠের পরিবারও টেবলটপ রানওয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ এ দিন নাগপুরে শাঠের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে গেলে পাইলটের স্বজনেরা তাঁকে বলেন, টেবলটপ রানওয়ে নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। সেই রানওয়েই প্রাণ কেড়ে নিল এই অভিজ্ঞ পাইলটের। এমন যাতে আর না ঘটে, সরকারের সেটা দেখা উচিত বলে জানিয়ে‌ছেন তাঁর পরিবার।

আরও পড়ুন: নিজের জীবন দিয়ে অধিকাংশ যাত্রীর প্রাণ বাঁচালেন বায়ুসেনার পদকপ্রাপ্ত পাইলট​

আরও পড়ুন: কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত দুই যাত্রীর কোভিড পজিটিভ, নিভৃতবাসে যেতে বলা হল উদ্ধারকারীদের​

তবে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন টেবলটপ রানওয়ে নিয়ে অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, ‘‘৭ মে থেকে কোঝিকোড়ের এই রানওয়েতে একশোর বেশি বিমান নির্বিঘ্নে ওঠানামা করেছে। দুর্ঘটনা নানা কারণে ঘটতে পারে। শুক্রবার কী ভাবে বিমানটি রানওয়ে থেকে পিছলে গেল, তার পিছনে প্রযুক্তিগত কোনও ত্রুটি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তখনই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ বোঝা যাবে।’’ শনিবারই তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির ‘ব্ল্যাক বক্স’ বা ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এই যন্ত্রাংশটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। শেষ সময় পর্যন্ত বিমানটির অবস্থানের সবিস্তার তথ্য, পাইলটদের কথোপকথন এবং দুর্ঘটনা এড়াতে পাইলট ও তাঁর সহকারী কী কী করেছিলেন, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে তাঁদের কথোপকথন— সবই রেকর্ড থাকে উজ্জ্বল ফ্লুরোসেন্ট কমলা রঙের এই ‘ব্ল্যাক বক্স’-এ।

কোঝিকোড়ের দুর্ঘটনার পরে আরও একটি বিষয় শনিবার জানিয়েছে ডিজিসিএ। নিরাপত্তার বেশ কিছু গাফিলতির জন্য কোঝিকোড় বিমানবন্দরের ডিরেক্টরকে শো-কজ় করেছিলেন এই উড়ান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে-ও গত বছর ১১ জুলাই। সৌদি আরবের দাম্মাম থেকে আসা একটি বিমানের লেজ ২০১৯-এর ২ জুলাই ঠুকে গিয়েছিল কোঝিকোড়ের এই টেবলটপ রানওয়েতে অবতরণের সময়ে। তার পরে রানওয়ে পরিদর্শন করে ডিজিসিএ-র কর্তারা দেখেন, বিস্তর গাফিলতি রয়েছে এই রানওয়ে দেখভালের কাজে। বর্ষায় জল জমে থাকে। বারে বারে বিমান ওঠানামার কারণে রানওয়েতে টায়ারের রাবারের যে আস্তরণ পড়ে যায়, নিয়মিত পরিষ্কার হয় না তা। এমনকি, বিমান ঠিক যে জাযগাটিতে মাটি ছোঁয়, ঠিক সেখানে একটি বডসড় ফাটল রয়েছে, দীর্ঘদিন যা সারানো হয়নি। রানওয়ের অন্যত্র এবং অ্যাপ্রন এরিয়ার নানা জায়গাতেও বহু ফাটল তাঁদের চোখে পড়ে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় তেমনই কোনও গাফিলতি শুক্রবার বিমানটিকে রানওয়ের নির্দিষ্ট পরিসরে থামতে দেয়নি— এমনটাও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Plane Crash Kozhikode Air India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE