Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Karnataka Assembly Election 2023

প্রভাব বাড়ল রাহুলের, দর কি থাকবে তৃণমূলের ‘অ্যালার্জি’র

গত দু’বছরে বারবার কংগ্রেস সম্পর্কে ‘অ্যালার্জি’ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে। মল্লিকার্জুন খড়্গের ডাকা বিরোধী দলগুলির সংসদীয় কৌশল তৈরির বৈঠকে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থেকেছেন তৃণমূলের নেতারা।

Rahul gandhi and Mamata Banerjee

কর্নাটকের জয় প্রসঙ্গে কংগ্রেস বা রাহুলের নামই মুখে আনেননি মমতা। ছবি: পিটিআই এবং ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৮:৩০
Share: Save:

কর্নাটকে কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর জাতীয় স্তরে বিরোধী রাজনীতির কর্তৃত্বরক্ষার প্রশ্নে কিছুটা সমস্যায় পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস। আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল অথবা এসপি-র অখিলেশ সিংহ যাদবের অকংগ্রেসি-অবিজেপি বিরোধী তত্ত্বও কিছুটা ধাক্কা খেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

আজ যদিও কর্নাটকের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রকাশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া বিরোধী জোট নীতিকেই সামনে নিয়ে এসে বলেছে, যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, সেখানে বাকিরা তাকে সমর্থন করলে বিজেপি-কে হঠানো সম্ভব তা প্রমাণ হল। তবে মমতা নিজে কর্নাটকের জয় প্রসঙ্গে কংগ্রেস বা রাহুলের নামই মুখে আনেননি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও আজ রাহুল গান্ধীর ভারত যাত্রার প্রভাবকে গুরুত্ব দিতে চাননি।

রাজনৈতিক মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, এর আগে গোয়ায় কংগ্রেস ছিল বিজেপি-র মূল প্রতিপক্ষ। কিন্তু সেখানে আলাদা লড়েছিল তৃণমূল এবং আপ। একই ভাবে কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপি-র বিরুদ্ধে তৃণমূলকে লড়তে দেখা গিয়েছে মেঘালয় এবং ত্রিপুরায়। এই কর্নাটক নির্বাচনেও দু’শোটির বেশি আসনে প্রার্থী দিয়ে নাক কাটা গিয়েছে কেজরীওয়ালের দলের।

গত দু’বছরে বারবার কংগ্রেস সম্পর্কে ‘অ্যালার্জি’ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে। সংসদ অধিবেশন চলাকালীন মল্লিকার্জুন খড়্গের ডাকা বিরোধী দলগুলির সংসদীয় কৌশল তৈরির বৈঠকে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থেকেছেন তৃণমূলের নেতারা। সাম্প্রতিক বাজেট অধিবেশনে অবশ্য তৃণমূলের সংসদীয় নেতারা না গেলেও পাঠানো হয়েছে সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জহর সরকারকে। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর ‘অ্যালার্জি’ কিছুটা কাটিয়ে তৃণমূল নেত্রীর পক্ষ থেকেও ঘটনার নিন্দা করা হয়েছিল। তৃণমূলের দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা ছিল এসপি, আপ অথবা পরবর্তী সময়ে বিআরএস-র মতো দলগুলি তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধী কৌশল নিয়ে সমন্বয় করতে বেশি স্বচ্ছন্দ। তৃণমূলের যুক্তি ছিল, কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছে এনসিপি, ডিএমকে, এনসিপি-র মতো দল, যারা রাজ্যে রাজ্যেও কংগ্রেসের জোট সঙ্গী। সম্প্রতি নীতীশ কুমারের সঙ্গে দীর্ঘ জোট বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে মমতাকে। যাদের কর্নাটকে কার্যত ভরাডুবি হল, সেই জেডিএস-এর কুমারস্বামী এসে ভোটের আগে মমতার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছিলেন এবং আজ মমতার অভিনন্দনও পেয়েছেন। তখন জানানো হয়েছিল, কুমারস্বামী এমন বিরোধী নেতার সঙ্গে সংশ্রবে থাকতে চান, যিনি কংগ্রেসের তাঁবে নেই। তৃণমূলও চাইছিল বিরোধী দলের বৈঠক পটনায় হোক, দিল্লিতে নয়। কারণ, দিল্লিতে বৈঠক মানেই সেখানে কংগ্রেসের আধিপত্য থাকবে।

স্বাভাবিক ভাবেই আজ কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর বিরোধী শিবিরে রাহুল গান্ধীর দলের কর্তৃত্ব এক লাফে অনেকটাই জোরদার হল। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাকে আজ প্রশ্ন করা হয়, চব্বিশের লোকসভা ভোটে রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী করা হবে কি না। প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘কর্নাটক জয়ের পর আমাদের উপর দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে গেল। মানুষই বলবেন এর পর কী হবে।” রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রিয়ঙ্কা এখনই বিষয়টি নিয়ে সরব না হলেও, বিরোধী নেতৃত্বের রাশ অনেকটাই চলে গেল রাহুল তথা কংগ্রেসের হাতে। এ বার বিজেপি-বিরোধী কোনও আলোচনায় কংগ্রেসের নেতৃত্বকে না মানা বা এড়িয়ে গিয়ে ‘অ্যালার্জি’ প্রকাশ তৃণমূলের পক্ষে সহজ হবে না।

এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন অবশ্য বলেন, “এই পরাজয় মোদী শাহ এবং বিজেপি-র। ডাবল ইঞ্জিনের একটি দু’বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে পুড়েছিল, অন্যটা পুড়ল আজ কর্নাটকে! আমাদের নেত্রী বলেছিলেন যে বিরোধী দল যেখানে শক্তিশালী তাকে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়তে দেওয়া হোক। কর্নাটকেও তাই হয়েছে।” কিন্তু কর্নাটকে তো আপ-কে লড়তে দেখা গেল, যারা তৃণমূলের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলে? জেডিএস নেতাও এসে দেখা করে গিয়েছিলেন মমতার সঙ্গে? ডেরেকের বক্তব্য, “আপ যেটা করেছে আমাদের সঙ্গে কথা বলে তো করেনি। ওরা যে ভুল করেছে তা ফলাফলেই প্রমাণিত। অন্য দিকে জেডিএস কর্নাটকের পুরনো শক্তিশালী আঞ্চলিক দল। তারা তো তৃণমূলের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে না। আখেরে দেখা যাচ্ছে ভোট কাটাকুটিতে জেডিএস থাকায় কংগ্রেসের সুবিধাই হয়েছে।” রাজ্যসভায় তৃণমূলের সচেতক সুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তব্য, “শুধু কর্নাটকেই নয়, গোটা দেশে বিজেপি সরকার কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ বাজারে হাত দিতে গিয়ে ছ্যাঁকা খাচ্ছেন। দু’বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে বিজেপি-কে হারানো সম্ভব। সেটা আবার প্রমাণিত হল।”

কংগ্রেসের এই সাফল্যের পাশাপাশি আজ উত্তরপ্রদেশে পুরনিগমের মেয়র নির্বাচনে অখিলেশের এসপি সুবিধা করতে পারেনি। কংগ্রেসকে রাজ্যে প্রতিযোগী হিসাবে ধরে নিয়ে তিনিও একাধিকবার জানিয়েছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই তিনি জোটের নেতা হিসাবে দেখতে চান। আজ রাতে কারও নাম না করে তিনি বলেন, “কর্নাটকের বিজেপি-র নেতিবাচক সাম্প্রদায়িক, বিভাজনকামী, মিথ্যা প্রচারের শেষের শুরু হল। নতুন ভারত বেকারত্ব, দুর্নীতি, দ্বেষের বিরুদ্ধে।”

তবে ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন কংগ্রেসকে অভিনন্দন জানিয়ে রাহুল গান্ধীকে ‘ভাই’ সম্বোধন করেছেন। তাঁর কথায়, “দ্রাবিড়ভূম থেকে বিজেপি উৎখাত হল। আমাদের চব্বিশের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।” এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারও বলেন, ‘‘কর্নাটকের ফলাফলের যে ধারা তা চব্বিশের লোকসভা ভোটেও অব্যাহত থাকবে। আমাদের লক্ষ্য বিজেপিকে হারানো।’’ আর কাশ্মীরের নেত্রী পিডিপি-র মেহবুবা মুফতির কথায়, “প্রধানমন্ত্রী ধর্মীয় বিভাজনের দিকে প্রচার নিয়ে গিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও রাজ্যের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে কর্নাটকবাসী ভোট দিয়েছেন।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy