বিজেপির বিদ্রোহী মুখ ‘বিহারিবাবু’ শত্রুঘ্ন সিন্হার অভিনন্দন নীতীশ কুমারকে। সোমবার পটনায়। —পিটিআই।
বিহারে জিতলে বিজেপি শিবিরে জয়ধ্বনি উঠত নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের নামে। কিন্তু হারের পর দলের ভিতর থেকে মোদী-অমিত জুটি ও আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবতের উপরে আঘাত আসতেই তাঁদের আড়াল করতে ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে চাইল বিজেপি। কবুল করল মহাজোটের শক্তি বুঝতে ভুল হয়েছে। এবং হারের দায় ঠেলে দিল দলের সামগ্রিক নেতৃত্বের ঘাড়ে।
কাল থেকেই বিক্ষোভের সুর দানা বাধতে শুরু করেছে বিজেপিতে। দলের বিক্ষুব্ধ নেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা সরাসরি মোদী ও অমিতকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, ‘তালি ও গালি’ দু’টোই ক্যাপ্টেনের প্রাপ্য। জোট-শরিক শিবসেনাও তুলোধোনা করেছে এই দু’জনকেই। বিহারে বিজেপির শরিক নেতা জিতেনরাম মাঁঝি এক ধাপ এগিয়ে সংরক্ষণ নিয়ে ভাগবতের ও পাকিস্তানে পটকা ফাটানো নিয়ে অমিতের মন্তব্যের সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘এর জন্য এনডিএ-কে খেসারত দিতে হয়েছে। সুবিধে পেয়েছে মহাজোট।’’ বিজেপির সাংসদ হুকুমদেব নারায়ণ যাদবও সঙ্ঘ-নেতৃত্বকে নিশানা
করে বলেন, ‘‘ভাগবত (সংরক্ষণ নিয়ে) মন্তব্যটি করেছেন অসময়ে। পিছিয়ে পড়া শ্রেণি ও দলিতদের খেপিয়ে তুলেছে। দলের ভাবা উচিত, কেন তাঁরা মহাজোটকে সমর্থন করলেন। সবাই তো আর আরএসএস সমর্থক নয়।’’
দলে এই রকম বিরুদ্ধ সুর মাথা চাড়া দিচ্ছে দেখেই তড়িঘড়ি আজ সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক ডাকা হয়। তার আগে সকালে অমিত বৈঠক করেন ভাগবতের সঙ্গে। বিজেপি সূত্রের মতে, অমিতের কাছে ভাগবত পাল্টা অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সংরক্ষণ-ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যে মন্তব্য তিনি করেছিলেন, বিজেপি নেতৃত্ব তার প্রেক্ষাপট ঠিকমতো ব্যাখ্যা করতে পারেননি। বিহারে হারের জন্য তাঁকে দায়ী করা ঠিক নয়। অমিতও তাঁকে আশ্বস্ত করেন, হারের পিছনে এটিকে আদৌ কারণ বলে মনে করছে না বিজেপি। এর পরে সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক শেষে অরুণ জেটলিও একই কথা বলেন সাংবাদিক বৈঠকে। বিহারের ফল প্রকাশের চব্বিশ ঘণ্টা পরে প্রথম বার আনুষ্ঠানিক ভাবে সামনে এসে জেটলি বলেন, ‘‘এই হারের দায় সামগ্রিক নেতৃত্বের। ভাগবতের মন্তব্যের জন্য দলকে নির্বাচনে খেসারত দিতে হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।’’
একই সঙ্গে রণকৌশলের ভুলও স্বীকার করে নেন জেটলি। মহাজোটের জাতপাতের পাটিগণিতই যে বাজি মেরেছে, তা কবুল করে নেন। বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে লালুপ্রসাদ, নীতীশ কুমার ও কংগ্রেস আলাদা লড়ায় বিজেপির সুবিধা হয়েছিল। বিজেপি ভেবেছিল, এ বারে তাদের জোট হলেও একে অন্যের ভোট পাবে না। মোদী সরকারের উন্নয়নের কথা মেলে ধরেই মহাজোটকে ছাপিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু তা হয়নি। তিনটি দল একসঙ্গে মিলে বাজি মেরেছে জাতপাতের সমীকরণে।’’
এরই সঙ্গে জেটলি দাবি করেন, বিজেপি এ বারে সুবিধে করে উঠতে না পারলেও দলের যে ভিত তৈরি হয়েছে, সেটিকে পুঁজি করেই ভবিষ্যতে শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, স্বয়ং জেটলিই যখন প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের জোরে ছাপিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন, তা হলে বিহারের নির্বাচনকে মোদী সরকার সম্পর্কে জনমত হিসেবে কেন ধরা হবে না? আর অমিতই যখন ভোটের পুরো রণকৌশল তৈরি করেছেন, তবে তিনিই বা কেন কৌশলের ভুলের দায় নেবেন না?
জেটলির যুক্তি, এর মধ্যে আরও অনেক কারণ রয়েছে। লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের চরিত্র আলাদা। প্রেক্ষাপটও ভিন্ন। লোকসভা নির্বাচনে এই মানুষই উন্নয়নের প্রশ্নে রায় দিয়েছেন। এখন ভোট দিয়েছেন জাতপাতের ভিত্তিতে। তা ছাড়া অমিতের নেতৃত্বেই দল হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ডে জিতেছে। জয় পেয়েছে আরও অনেক স্থানীয় নির্বাচনে। পরাজয় হয়েছে মাত্র দু’টিতে, দিল্লি ও বিহারে। ভোটে হার-জিত থাকেই। জিতলে যেমন দলের সামগ্রিক জয়, হারলেও তা-ই। জেটলির বার্তাটি স্পষ্ট, এই হারের জন্য দল কোনও মতেই মোদী-শাহ জুটি কিংবা ভাগবতকে কাঠগড়ায় তোলার পক্ষপাতী নয়।
মোদী-অমিত নিজেরা কী বলছেন এ ব্যাপারে? প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি কেউই। অমিত সাধারণত, হারের পরেও সংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ বারে সামনেই আসেননি। মোদী সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে এলেও চোখেমুখে জৌলুস ছিল না। সাংবাদিকদের দেখে আগের মতো চেনা ছন্দে হাতও নাড়াননি আজ।
আর ভাগবত? তিনি এ দিন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সাধারণত দিওয়ালির আগে তিনি এক বার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু সম্প্রতি অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে যে ভাবে আরএসএসের দিকে আঙুল উঠছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এ দিনের বৈঠককে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
জেটলি বিহারের হারের জন্য দলের কিছু নেতার দায়িত্বহীন মন্তব্যকে দায়ী করেছেন প্রকাশ্যেই। কিন্তু বিজেপি নেতাদের মুখে এখনও লাগাম পরানো যায়নি। ক’দিন আগেই শাহরুখ খান সম্পর্কে মন্তব্য করে তা প্রত্যাহার করতে হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের দলীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে। বিজেপির বিদ্রোহী নেতা শত্রুঘ্ন আজ ১৭৮ কেজি লাড্ডু নিয়ে নীতীশ কুমারকে অভিনন্দন জানিয়ে এসেছেন। এই প্রসঙ্গে ‘কুকুরের’ সঙ্গে ‘শটগান’-এর তুলনা টেনে বসেছেন কৈলাস। বলেন, ‘‘অনেক সময় গাড়ির নীচে চলে এলে কুকুর মনে করে, গাড়িটা তার জন্য চলছে। অথচ দল চলে এক বিরাট সংগঠনের মাধ্যমে।’’
জেটলি দলের নেতাদের সংযত হতে বললে কী হবে, বিজেপি সেই কুবাক্যের তিমিরেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy