Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সকালে বর্জন, ‘বিদ্রোহের’ মুখে পড়ে রাতেই রাজনাথকে গ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর

গত কাল থেকেই মন্ত্রিসভার কমিটিগুলির বিন্যাস ধাপে ধাপে ঘোষণা করছিল মোদী সরকার। তাতে স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে আনা রাজনাথ সিংহের ডানা ছাঁটা হচ্ছিল অল্প অল্প করে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।—ছবি পিটিআই।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৯ ০৩:৩০
Share: Save:

প্রবল পরাক্রমী নতুন সরকারের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় দলের মধ্যে প্রথম বড় ‘বিদ্রোহের’ মুখে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার জেরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পিছু হটতে হল তাঁকে। প্রথমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আটটি কমিটির মধ্যে দু’টি বাদে সব ক’টি থেকে রাজনাথ সিংহকে বাদ দিলেন। আবার রাতের মধ্যেই ওই দু’টির পাশাপাশি আরও চারটি কমিটিতে রাজনাথকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী।

গত কাল থেকেই মন্ত্রিসভার কমিটিগুলির বিন্যাস ধাপে ধাপে ঘোষণা করছিল মোদী সরকার। তাতে স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে আনা রাজনাথ সিংহের ডানা ছাঁটা হচ্ছিল অল্প অল্প করে। আর তার থেকেও বেশি গতিতে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ওজন বাড়ানো হচ্ছিল। গত দু’দিনে পর্যায়ক্রমে মোট আটটি কমিটি ঘোষণার পরে দেখা গেল, সব ক’টিতেই রয়েছেন অমিত। এমনকি দু’টির নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনি। নির্মলা সীতারামনের মতো নেত্রীও সাতটি কমিটিতে রয়েছেন। পীযূষ গয়াল রয়েছেন পাঁচটিতে। কিন্তু খাতায়-কলমে সরকারের ‘নম্বর টু’ রাজনাথ রয়েছেন দু’টিতে। মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক বিষয়ের মতো কমিটি থেকেও বাদ পড়েছেন তিনি।

বিজেপির এক নেতার কথায়, মোদী জমানায় রাজনীতি বিষয়ক কমিটির আলাদা কোনও মূল্য নেই। কারণ, যাবতীয় সিদ্ধান্ত মোদী-শাহই নেন। তা সত্ত্বেও যে কমিটিতে দেশের রাজনৈতিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা, যেটিকে চিরাচরিত ভাবে ‘সুপার ক্যাবিনেট’ বলা হয়— সেখানে প্রথমে রাজনাথকে না-রাখা অবশ্যই একটি বার্তা। অথচ সেই কমিটিতে মোদী-শাহ ছাড়াও নির্মলা, পীযূষ, নিতিন গডকড়ী, রবিশঙ্কর প্রসাদের পাশাপাশি রামবিলাস পাসোয়ান, হরসিমরত কৌর বাদল, অরবিন্দ সবন্তের মতো শরিক দলের নেতাদের রাখা হয়েছিল।

বার্তা স্পষ্ট। সুষমা স্বরাজ মন্ত্রিসভায় ডাক পাননি। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অরুণ জেটলি মন্ত্রিসভায় যোগ দেননি। তাঁর আপত্তিতে পীযূষকে অর্থ মন্ত্রক না-দেওয়া হলেও ঘুরপথে গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে। সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ গডকড়ীরও ঠাঁই হয়নি প্রধান চার মন্ত্রকে। আর রাজনাথের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেড়ে প্রতিরক্ষায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। বিজেপির অনেকের দাবি, রাজনাথ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাখতে চাইলে মোদী সেখান থেকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও কাশ্মীরের বিষয়টি আলাদা করে অমিতের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন।

অসন্তোষ বাড়ছিল তখন থেকেই। সেটি চরমে উঠল গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলি থেকে রাজনাথ বাদ পড়ায়। কংগ্রেসও প্রশ্ন তুলল, রাজনাথের মতো অভিজ্ঞ মন্ত্রীকে কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না? বিজেপি সূত্রের মতে, দিনভর পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে, ঘনিষ্ঠ মহলে রাজনাথ বলেন, এর পরে তাঁর মন্ত্রিসভায় থাকার কোনও অর্থ হয় না। আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। দিনভর বিতর্ক আর বিদ্রোহের আঁচ পেয়ে সন্ধের পরে পিছু হটতে হয় মোদীকে। গত এক সপ্তাহ ধরে যিনি অমিতকে সঙ্গে নিয়ে তিনশো পারের ‘দাপট’ দেখাচ্ছেন।

রাজনাথের দফতর থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, তিনি আদৌ ইস্তফা দিতে চাননি। সঙ্ঘের হস্তক্ষেপেরও প্রশ্ন নেই। কিন্তু এই যুক্তির পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, রাজনাথকে বাদ দিয়ে মোদী কমিটি গড়েছিলেন কেন এবং সন্ধে হতে না-হতেই সেই কমিটি নতুন করে সাজাতে হল কেন? কেনই বা অমিতকে সরিয়ে একটি কমিটির দায়িত্ব রাজনাথের হাতেই তুলে দিতে হল? কেনই বা আটটির মধ্যে ছ’টিতেই রাজনাথকে রাখতে বাধ্য হলেন মোদী?

দিনভর উত্তেজনা দেখে আজ দলের সদর দফতরেও কোনও বড় নেতা পা বাড়াননি। সাংবাদিকদের মুখোমুখিও হননি কোনও নেতা। কিন্তু দলের অনেকেই মানছেন, তিনশোরও বেশি আসন নিয়ে আসা মোদীকে যদি প্রথমেই দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মুখে পড়তে হয়, তা হলে এর পরিণতি কোথায়? কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলের নেতারা মনে করছেন, এ তো সবে শুরু। লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীর পরে সুষমা-জেটলিকেও কোণঠাসা করে দিয়েছে মোদী-শাহ জুটি। জেটলি চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, অসুস্থতার কারণে ‘কিছু সময়ের’ জন্য তিনি মন্ত্রিসভার কোনও দায়িত্ব নিতে পারবেন না। কিন্তু এখন মন্ত্রিসভায় যাবতীয় আর্থিক বিষয়েও নজরদারি শুরু করেছেন অমিত শাহ, নিজের মন্ত্রকে বাকি সব মন্ত্রীকেও ডেকে পাঠাচ্ছেন। এবং প্রধানমন্ত্রীও যাবতীয় দায়িত্ব তাঁর হাতে সঁপে দিচ্ছেন। এর পরে জেটলি সুস্থ হলেও তাঁর ফিরে আসার যাবতীয় পথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিরোধী দলের নেতারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Defense Minister Rajnath Singh Cabinet Committee Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy