গোপাল কান্ডা
মেয়েটির স্বপ্ন ছিল আকাশে ওড়ার। পূরণও হয় সেই স্বপ্ন। বিমানসেবিকার চাকরি হয় হরিয়ানার একটি বিমান সংস্থায়। সেই চাকরিই যে তাঁকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেবে, তা হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি শর্মা পরিবার। কাজে যোগ দেওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণার শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে ২০১২ সালে দিল্লির অশোক বিহারের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন তরুণী। সুইসাইড নোটে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার কথা লিখে যান। তাঁর পরিণতির জন্য দায়ী করেন সিরসার বিধায়ক তথা হরিয়ানার তৎকালীন হুডা সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গোপাল গয়াল কান্ডা ও তাঁর বন্ধু অরুণা চড্ডাকে। যে বিমান সংস্থায় ওই তরুণী কাজ করতেন, তার মালিক ছিলেন কান্ডা।
লোকহিত পার্টির বিধায়ক, সেই গোপাল কান্ডা নাকি এ বারের ত্রিশঙ্কু হরিয়ানার কিং মেকার হতে চলেছেন। গত কালই তিনি দাবি করেছিলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-পাওয়া বিজেপির জন্য সরকার গড়ার চাবিকাঠি রয়েছে তাঁর হাতে! যার প্রমাণ দিতে গত কাল রাতেই জয়ী নির্দল বিধায়কদের নিয়ে দিল্লির বিমান ধরেন কান্ডা। বিমানসেবিকার মৃত্যুর পরে যে কান্ডার বিরুদ্ধে এক সময়ে ধর্ষণ, আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া ও ফৌজদারি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল, তাঁর হাত ধরে বিজেপি সরকার গড়ার চেষ্টা শুরু হতেই ঝড় ওঠে রাজনীতিতে।
ওই বিমানসেবিকার ভাই, বিরোধী কংগ্রেস ও আপ সরব হন। কান্ডার সঙ্গে হাত মেলানোর প্রশ্নে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায় বিজেপি নেতৃত্বও। মনোহরলাল খট্টররা যখন কান্ডার হাত ধরে সরকার গড়তে মরিয়া, তখন বিজেপির একাংশ প্রশ্ন তোলে, যে দলের মুখ নরেন্দ্র মোদী, তাদের সরকার বানানোর জন্য কেন এক জন অভিযুক্তের প্রয়োজন হবে! উমা ভারতী প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘ওই কান্ডার জন্য একটি মেয়ে ও তাঁর মা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ভোটে জিতে আসা মানেই কারও সব দোষ খারিজ হয়ে যাওয়া নয়। ভোটে অনেক ভাবেই জেতা যায়। বিজেপি যেন দলীয় নৈতিকতার বিষয়টি ভুলে না যায়।’’
• ’৯০-এর দশকে জুপিটার মিউজিক হোমে রেডিয়ো সারিয়ে দিন গুজরান করা কান্ডা পরে ভাইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিরসায় প্রথমে জুতোর দোকান ও পরে জুতোর কারখানা তৈরি করেন। •ব্যবসার সুবাদে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বংশীলালের পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু সেই সরকার পড়ে যেতেই চৌটালা শিবিরে ভিড় জমান কান্ডা। •রাজনৈতিক পরিচয়কে ব্যবহার করে গুরুগ্রামে জমি-বাড়ির ব্যবসা শুরু করেন কান্ডা। •২০০৭ সালে এমডিএলআর বিমান সংস্থা চালু করেন। •২০০৮ সালে আয়কর দফতরের অফিসারদের মারধর। ওই বছরেই প্রাক্তন ভারতীয় পেস বোলার অতুল ওয়াসনের গাড়ি কান্ডার গাড়িকে ওভারটেক করায় মারধর করার অভিযোগ। •২০০৯ সালে আইএনএলডি-র টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে লড়ে সিরসার বিধায়ক হন। হুডা সরকারকে সমর্থন। •২০১২ সালে বিমানসেবিকার আত্মহত্যা। দশ দিন পালিয়ে থাকার পরে গ্রেফতার। ধর্ষণ, আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জেল। •২০১৩ সালে আত্মহত্যা করেন বিমানসেবিকার মা। অভিযোগের আঙুল কান্ডার দিকে। •২০১৪ সালে জামিনে ছাড়া পান কান্ডা। ধর্ষণের অভিযোগ থেকে মুক্তি পান। •২০১৯ ফের লোকহিত পার্টির পক্ষে সিরসা থেকে জয়ী। বিজেপিকে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে কিং মেকারের ভূমিকা নেওয়ার দাবি।
হরিয়ানায় ২০০৯-এর নির্বাচনের পরেও কংগ্রেসের হুডা সরকারকে ৬ বিধায়কের সমর্থন জুগিয়ে মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদটি দখল করেছিলেন নির্দল বিধায়ক কান্ডা। বিমানসেবিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত হতেই তাঁর বিরুদ্ধে মুখর হন দিল্লির বিজেপি নেতারা। সংসদে কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হন সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলির মতো বিরোধী নেতারা। পরে গ্রেফতারও হন কান্ডা। জেলে ছিলেন প্রায় দেড় বছর। ২০১৪ সালে জামিনে মুক্তি পান কান্ডা। বিজেপির অন্দরমহলে তাই প্রশ্ন ওঠে, ক্ষমতা দখলে দল কি এতটাই মরিয়া যে, কান্ডার মতো অভিযুক্তের সাহায্য নিতে হচ্ছে! কান্ডাকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা সরাসরি নিশানা করেন মোদীকে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা টুইট করেন, ‘‘প্রথমে কুলদীপ সেঙ্গার, তার পর নিত্যানন্দ রাই, এখন গোপাল কান্ডা... এর পরেও বিজেপি ও তার নেতারা নারী সম্মানের কথা বললে প্রত্যেক ভারতীয় মহিলার উচিত তাদের বয়কট করা। কংগ্রেসের মহিলা মোর্চার সভানেত্রী সুস্মিতা দেব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে বলেন, ‘‘যে দল বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও স্লোগান দেয়, তারাই এখন কান্ডার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়তে চাইছে। এই চেষ্টা দলটির দ্বিচারিতাকেই দেশের নারী সমাজের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে।’’
সরব হয়েছেন প্রথমে বোন ও তাঁর ছ’মাসের মধ্যে মায়ের আত্মহত্যার সাক্ষী থাকা ওই তরুণী বিমানসেবিকার ভাই। তাঁরও প্রশ্ন ‘‘কান্ডার বিরুদ্ধে ১৮০০ পাতার চার্জশিট জমা পড়েছে। বোনের সঙ্গে কী করেছে, তার প্রমাণ রয়েছে। তা সত্ত্বেও সময়ে শুনানি না-হওয়ায় সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে বয়ান বদলানো হয়েছে। যে বিজেপি এক সময়ে কান্ডার বিরুদ্ধে পথে নেমেছিল, তারাই আজ তাঁর হাত ধরেছে। তা হলে কি ধরে নিতে হবে, বিজেপির পাশে দাঁড়ানোয় কান্ডার সব অপরাধ মাফ হয়ে গেল!’’
এর জবাব নেই বিজেপি নেতৃত্বের কাছে। তবে শেষ পর্যন্ত দুষ্মন্ত চৌটালার সমর্থন আদায় করে অস্বস্তি এড়ালেন অমিত শাহ, মোদী। সরকার গড়তে অঙ্কের হিসেেব কান্ডাকে দরকার হবে না। মন্ত্রীও করা হবে না তাঁকে। কান্ডার সমর্থন ছাড়াই সরকার গড়ার কথা পথে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy