মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
বিহার ভোটের মধ্যেই মহাদলিত প্রকল্প রূপায়ণ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসায় চাঞ্চল্য তৈরি হল রাজনৈতিক শিবিরে। জেএনইউ এবং আইআইটি রুরকির যৌথ সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি ওই রিপোর্টে তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ‘উদ্দেশ্য ভাল থাকলেও’, সরকারি প্রকল্প ‘বাস্তবায়নের’ প্রশ্নে ব্যাপক গাফিলতি থেকে গিয়েছে। যার ফলে, বিহারের দলিত সম্প্রদায়, সেই তিমিরেই।
রাজ্যের ১৮টি দলিত সম্প্রদায়ের জন্য ‘বিহার মহাদলিত বিকাশ মিশন’ গড়ে যে সব আর্থ-সামাজিক প্রকল্প সরকার চালু করেছিল, সেগুলির সুফল সংশ্লিষ্ট মানুষের কাছে পৌঁছয়নি বলে দাবি করছে রিপোর্ট। অথচ গত দশ বছরে নীতীশের ভোটব্যাঙ্ক বলে চিহ্নিত এই মহাদলিত সম্প্রদায়ের জন্য রাজ্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আবাসন, বৃত্তি, শিক্ষাঋণ, জমি-সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে তাঁদের সুযোগও বাড়ানো হয়।
কিন্তু আইআইটি রুরকির সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগ এবং জেএনইউ-র ‘সেন্টার ফর স্টাডি অব সোশ্যাল এক্সক্লুশন অ্যান্ড ইনক্লুশন পলিসি’-র পক্ষ থেকে করা এই সমীক্ষা বলছে, এখনও দারিদ্রসীমার নীচে থাকা, শিক্ষার সুযোগহীন মানুষের সংখ্যা দলিত সমাজে বিপুল। যেমন, মুশার সম্প্রদায়ের ৭৩ শতাংশই দারিদ্রসীমার তলায় বসবাস করেন। মাসে সাড়ে চার হাজার টাকার বেশি আয় করে এমন মুশার পরিবারের সংখ্যা মাত্র ৩ শতাংশ। ২৩ শতাংশ পরিবারের মহিলারা নিজের নামটুকু লিখতে পারেন, বাকিদের বর্ণপরিচয় হয়নি।
আরও পড়ুন: দিন চলে না, তবু নীতীশই ভরসা দলিতদের
আরও পড়ুন: কীসের জন্য ক্ষমা চাইব? পুলওয়ামা বিতর্কে প্রতিক্রিয়া তারুরের
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ‘বিহার মহাদলিত বিকাশ মিশন’-এর নীতি ও কর্মসূচিগুলি খাতায়-কলমে খুবই আকর্ষণীয় এবং সব দিকে নজর রেখেই তৈরি করা হয়েছিল। জল সরবরাহ, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন, শৌচাগার, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষতাকেন্দ্র তৈরি, বিনামূল্যে স্কুলের পোশাক-সহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর রাখা হয়েছে তাতে। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তার যোগ ছিল খুবই কম। ফলে এই সম্প্রদায়গুলির সামাজিক অবস্থান এবং উপার্জন-সূচক গত দশ বছরে বদলায়নি। জাতীয় গড়ের অনেক নিচেই থেকে গিয়েছে। দলিত যুবকদেকে হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া, কাজের ব্যবস্থা করার মতো উদ্যোগের অভাব রয়েছে। মহাদলিতদের দক্ষতা বাড়াতে রাজ্য সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু করেছিল ‘দশরথ মাঝি কৌশল বিকাশ যোজনা’। কিন্তু সেই প্রকল্পেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। দিশি মদ এবং অন্যান্য নেশার হাত থেকে তাঁদের উদ্ধার করার কোনও প্রয়াসও নেয়নি সরকার, জানাচ্ছে রিপোর্ট।
বিহারের রাজনৈতিক সূত্রের মতে, মহাদলিতদের জন্য প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার মূল কারণ, দুর্নীতি। এত বার সতর্কতা জারি হয়েছে এবং অনুসন্ধান কমিটি বসেছে যে, প্রকৃতপক্ষে গতি হারিয়েছে প্রকল্পগুলির রূপায়ণ। অথচ, প্রতি বছর মহাদলিত প্রকল্পগুলির জন্য অন্তত ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রতিটি ওয়ার্ড এবং পঞ্চায়েতে রাজ্য সরকার নিযুক্ত ‘বিকাশ-মিত্র’ নামে একটি পদই রয়েছে, যার কাজ সরকারের সঙ্গে দলিত সম্প্রদায়ের সংযোগ ঘটানো। প্রশ্ন উঠছে, এই টাকা কোথায় যাচ্ছে তা নিয়েও। মহাদলিতদের নিয়ে কাজ করা এনজিও ‘সামাজিক শিক্ষাসৈনিক বিকাশ কেন্দ্র’-র আহ্বায়ক দীপক ভারতী বলেন, ‘‘বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা বা আবাসন তৈরির মতো কিছু প্রকল্পে দলিতরা সামান্য লাভবান হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বেশিরভাগ প্রকল্পই থেকে গিয়েছে খাতায় কলমে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy