Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Black Fungus

দু’টি ভিন্ন প্রজাতি, সম্পূর্ণ আলাদা দু’টি রোগ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এবং মিউকরমাইকোসিস

বিশেষজ্ঞরা জানান, মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলেই এই সংক্রমণ হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চন্দন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২১ ০৫:৫৪
Share: Save:

করোনা আবহের মধ্যে নতুন করে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। অনেকেই ছত্রাক ঘটিত এই সংক্রমণকে মিউকরমাইকোসিস বলেও অভিহিত করছেন!

কিন্তু ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এবং মিউকরমাইকোসিস কি এক?

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর হিউম্যান অ্যান্ড অ্যানিম্যাল মাইক্রোলজির প্রেসিডেন্ট তথা চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অধ্যাপক-চিকিৎসক অরুণালোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ও মিউকরমাইকোসিস সম্পূর্ণই আলাদা।’’

বিশেষজ্ঞরা জানান, মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলেই এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত মাটি, গাছপালা, পচনশীল ফল ও শাকসবজিতে এই ছত্রাক দেখা যায়। এমনকি পরিবেশের যে কোনও জায়গাতেই তা থাকতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কিন্তু করোনায় সুস্থ হলেও অনেকের মধ্যেই রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তলানিতে পৌঁছয়। তখনই এই জাতীয় ছত্রাক শরীরে বাসা বাঁধছে। এর পাশাপাশি যে সব রোগীকে দীর্ঘ দিন আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা করাতে হয়েছে এবং যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস রয়েছে, তাঁদের শরীরের এই জাতীয় সংক্রমণের দেখা মিলছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারও নির্দেশিকা বা চিঠিতে মিউকরমাইকোসিস-শব্দটিই ব্যবহার করেছে।

এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, নাক, চোখ ও মস্তিষ্কে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে। প্রাথমিক ভাবে মুখের একপাশে ব্যথা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া অথবা ‘ডাবল ভিশন’ এই রোগের লক্ষণ। এ ছাড়া নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে কালো অথবা বাদামি রঙের জল পড়া এই রোগের লক্ষণ হতে পারে। এমনকি, ফুসফুস-সহ একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংক্রমিত করতে পারে মিউকরমাইকোসিস। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করা না হলে এ ক্ষেত্রে ফল হতে পারে মারাত্মক।

করোনা আক্রান্ত বা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের মধ্যে এই সংক্রমণ দেখতে পাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে অরুণালোকের বক্তব্য, ‘‘সাধারণত করোনা রোগীর ক্ষেত্রে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ঠিক রাখার দিকেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে অবহেলিত থাকছে। এমনকি, করোনা সংক্রমণ রুখতে রোগীর শরীরে মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েডের ব্যবহার করতেই দেখা যাচ্ছে। দিনের পর দিন মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েডের ব্যবহার করা আর এই স্টেরয়েডের অপব্যবহার করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দেওয়ারও কারণ হতে পারে।’’

এমনকি ডায়াবিটিস না থাকলেও করোনার জেরে অনেকেরই ব্লাডসুগার বেড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে মারাত্মক ভাবে। এ ক্ষেত্রে ভয় তাঁদেরও বলেই জানান চিকিৎসকরা।

এই বিষয়ে কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর সুপার তথা মাইক্রো বায়োলজির অধ্যাপক রূপালি দে বলেন, ‘‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এবং মিউকরমাইকোসিস সম্পূর্ণ আলাদা। আমাদের চিকিৎসার পরিভাষায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি সংক্রমণ হিসেবেই দেখানো আছে। যার সাথে মিউকরমাইকোসিসের যোগ নেই।’’

ভাইরোলজিস্ট নিমাই ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এবং মিউকরমাইকোসিস কোনও ভাবে এক নয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মূলত ডিমেটিসিয়াস প্রজাতির ফাঙ্গাস। মাইক্রোস্কোপের তলায় রেখে দেখলে এর রং দেখতে পাওয়া যায় কালো। মিউকরমাইকোসিস কোনও ভাবেই কালো নয়। মিউকরমাইকোসিস জ়াইগোমাইসিটিস প্রজাতির ফাঙ্গাস।’’

নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে কালো অথবা বাদামি রঙের জল পড়া-সহ প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা গেলেই চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু হলে সে ক্ষেত্রে সহজেই যে কোনও ধরনের বিপর্যয় আটকানো যাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এক জন করোনা রোগীর ক্ষেত্রে মিউকরমাইকোসিস ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের থেকে বেশি বিপজ্জনক। সাধারণ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই ব্ল্যাঙ্ক ফাঙ্গাসকে প্রতিরোধ করা যায়। তবে ভবিষ্যতে কী হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলেই জানালেন চিকিৎসকরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Mucormycosis Black Fungus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy