Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Pragya Singh Thakur

প্রজ্ঞা-মতে শূদ্ররা অজ্ঞ, কৃষকেরা দেশবিরোধী

ক্ষত্রিয় মহাসভা আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে প্রজ্ঞা এমন অনেক কিছু বলেছেন, যা ভারতীয় সংবিধানের মূল আদর্শ ও ধারণার বিপরীত।

ফের বিতর্কিত মন্তব্য করলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা। ছবি: পিটিআই।

ফের বিতর্কিত মন্তব্য করলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:২৬
Share: Save:

আন্দোলনরত কৃষকদের ‘দেশবিরোধী’ তথা ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ আখ্যা দিয়ে ও শূদ্রদের ‘অজ্ঞ’ ঠাউরে আবার বিতর্কে বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর। হিন্দু বর্ণাশ্রম প্রথার পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “ধর্মশাস্ত্রে সমাজ ব্যবস্থার জন্য চারটি বর্গ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ক্ষত্রিয়কে ক্ষত্রিয় বললে খারাপ লাগে না। ব্রাহ্মণকে ব্রাহ্মণ বললে, খারাপ নাগে না। বৈশ্যকে বৈশ্য বললে খারাপ লাগে না। শূদ্রকে শূদ্র বললে খারাপ লাগে। এর কারণ কী? অজ্ঞতা। (ওরা)বুঝতেই পারে না।”

ক্ষত্রিয় মহাসভা আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে প্রজ্ঞা এমন অনেক কিছু বলেছেন, যা ভারতীয় সংবিধানের মূল আদর্শ ও ধারণার বিপরীত। যেমন সংবিধান বলে, যে কোনও নাগরিকের যে কোনও পেশায় থেকে জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। প্রজ্ঞার মত উল্টো। তাঁর পরামর্শ, “প্রত্যেকের উচিত নিজ জাতি বা বর্ণের জন্য নির্দিষ্ট পেশা বা বৃত্তিতে নিয়োজিত থাকা।”

এই মুহূর্তে কৃষকেরা আন্দোলন চালাচ্ছেন মোদী সরকারের আনা তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে। কৃষি ক্ষেত্রে কর্পোরেটদের প্রবেশের পথ খুললেও ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কমে যেন তারা ফসল কিনতে না-পারে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করাও তাঁদের অন্যতম্ লক্ষ্য। নিজ অধিকার ও সুরক্ষার জন্য আন্দোলনে নামা এই কৃষকেরা প্রজ্ঞার মতে ‘দেশবিরোধী’। তাঁর কথায়, “কৃষকের পরিচয়ে যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁরা দেশবিরোধী। এঁরা আসলে কৃষকই নন। কৃষকের ছদ্মবেশে কংগ্রেসের লোকজন ও বামপন্থীরাই দেশবিরোধী কথা বলছেন, ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন। (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লির) শাহিন বাগে ঠিক এমনটাই করেছিলেন ওঁরা।

পরিবারে সন্তানের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে না এ দেশের সরকার। তবে পরিবার পরিকল্পনা যে দেশের ও পরিবারের জন্য সুফলদায়ী, সেটা বোঝানো হয়ে থাকে। প্রজ্ঞা এই ক্ষেত্রেও উল্টো মতের হোতা। তাঁর বক্তব্য, “দেশবিরোধী এবং যাঁরা দেশের জন্য বাঁচেন না, পরিবার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন শুধু তাঁদের ক্ষেত্রে।” তাঁর পরামর্শ, “নিজেদের দায়িত্ব বুঝতে হবে ক্ষত্রিয়দের। আরও বেশি করে সন্তান উৎপাদন করে তাদের সেনাবাহিনীতে পাঠাতে হবে। যাতে তারা দেশের জন্য লড়তে পারে ও মজবুত করতে পারে দেশের সুরক্ষা। কাজ বা শিক্ষায় সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে তর্ক দীর্ঘদিনের। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হলেও দলিতদের সমাজে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়। মূলত এই যুক্তিতেই সংবিধানে জাতপাত ভিত্তিক সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং এখনও তা বহাল রয়েছে। প্রজ্ঞার দাবি, জাতপাতের ভিত্তিতে নয়, শুধুমাত্র আর্থিক ভাবে অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণ থাকা উচিত।

বিতর্কিত মন্তব্য করে প্রজ্ঞার শিরোনামে আসা ও পরে ক্ষমা চাওয়া, মোটেই নতুন কিছু নয় ক্ষেত্রে। প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে এক সময় তদন্ত করেছিলেন হেমন্ত কারকারে। ২৬/১১ হামলার মোকাবিলা করতে গিয়ে এটিএস প্রধান হেমন্ত প্রাণ দিলে, সাধ্বী বলেছিলেন, তাঁর ‘অভিশাপে’ এই মৃত্যু। এর জন্য ক্ষমা চাইতে হয় তাঁকে। নাথুরাম গডসেকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলেও দু’বার সংসদে ক্ষমা চেয়েছেন অতীতে। গোমুত্র খেয়ে তাঁর ক্যানসার সেরেছে বলে দাবি করে হাসির খোরাকও হয়েছেন বিজেপির এই সাধ্বী-সাংসদ।

অন্য বিষয়গুলি:

Pragya Singh Thakur Farmers' Protest in Delhi Caste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy