জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনের ফাঁকে সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বললেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধী পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে একই অবস্থানে রয়েছেন। দু’জনেই চাইছেন, যাঁরা নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের যেন চাকরি না যায়। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার মাপকাঠি খুবই সঙ্কীর্ণ।
এই জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনের মঞ্চেই পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের একমাত্র বক্তা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় দাবি করলেন, চাকরিহারাদের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে রাহুল গান্ধী আসলে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তার জন্য রাজ্যের সমস্ত মানুষ, সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা রাহুল গান্ধীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
গত শনিবার দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারানো পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাহুল। সে সময়েই তিনি কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী সিঙ্ঘভির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সিঙ্ঘভি সুপ্রিম কোর্টে যোগ্য প্রার্থীদের হয়েই মামলা লড়েছিলেন।
মঙ্গলবার আমদাবাদে কংগ্রেসের অধিবেশন থেকেই রাহুল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখে যোগ্যদের চাকরি বজায় রাখার বিষয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ চান। তারপরে সিঙ্ঘভির সঙ্গে ফের কথা বলেন। অন্য দিকে, কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মনু সিঙ্ঘভি-সহ আইনজীবীরা রায় পুনর্বিবেচনার আর্জির বিষয়টি দেখছেন।
সিঙ্ঘভি আজ বলেন, “রাহুল গান্ধীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের মামলায় একটি নির্দোষ গোষ্ঠী ছিল, যাঁদের সম্পর্কে সিবিআইও বলেছিল, এঁদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ নেই। সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিলাম, এঁদের আলাদা করে দিন। বাকিদের সাজা হতে পারে। কিন্তু সেই কাজটা অনেক বড় হয়ে যাবে বলে সুপ্রিম কোর্ট সকলের চাকরি খারিজ করে দিয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের একই বেঞ্চ অতিরিক্ত পদ তৈরি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করেছে। চাকরি খারিজের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টই সর্বোচ্চ আদালত। তার রায়ই শেষ রায়। সেখানে রায় পুনর্বিবেচনার মাপকাঠি খুবই সঙ্কীর্ণ। তবে রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দু’জনেই আমাকে পুনর্বিবেচনা নিয়ে বার্তা দিয়েছেন।”
কিছু ক্ষণ পরেই পশ্চিবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় দলীয় অধিবেশনের মঞ্চে বলেন, রাহুল গান্ধী চাকরিহারাদের নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে তৃণমূলের দুর্নীতি এবং বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সেই সময় রাহুল মঞ্চে ছিলেন। আশুতোষ বলেন, “প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার চাকরিহারা শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে রাহুল গান্ধীর কাছে যাওয়ায় তিনি দেখা করেছেন, রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখেছেন, এ জন্য কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা গর্বিত।”
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবির সঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও নিশানা করেছিলেন শুভঙ্কর। আশুতোষ বলেন, “আমরা রাজ্যে প্রতিদিন তৃণমূলের দুর্নীতি দেখতে পাচ্ছি। বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতিও দেখছি। বাংলায় বিজেপি বাড়ছে, তা আটকাতে হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)