কংগ্রেসকে খোঁচা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের সরকার নানা ধরনের কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের মাথা নত করাতে পারবেন না, এই কথা বারেবারেই বলে থাকেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব। সেই দাবি করতে গিয়েই এ বার কংগ্রেসকে খোঁচা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সংস্থার ভয়ে কংগ্রেসের মতো দল ‘ঘরে বসে’ গেলেও তাঁরা আরও শক্তি বাড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বেন। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে জাতীয় স্তরে বিরোধী দলগুলি যখন সমন্বয় গড়ে তুলে লড়াই চালাচ্ছেন, সনিয়া গাঁধীর ডাকা বৈঠকে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই সময়ে কংগ্রেসের দিকে ইঙ্গিত করে অভিষেকের এমন মন্তব্য চাঞ্চল্য তৈরি করেছে রাজনৈতিক শিবিরে।
দিল্লিতে ইডি-র দফতরে সোমবার হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রসঙ্গ এনে অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি ভাবতে পারে, এতে তৃণমূল হার মেনে নেবে, ভয় পেয়ে যাবে, ঝুঁকে যাবে। অন্য রাজনৈতিক দলের মতো, বা নির্দিষ্ট করে বলছি, কংগ্রেসের মতো ঘরে বসে যাবে! আমরা আরও শক্তি দিয়ে লড়ব আপনাদের বিরুদ্ধে। যেখানে ওরা গণতন্ত্রের হত্যা করেছে, সেই সব রাজ্যে আমরা যাব।’’ বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েই অভিষেকের মন্তব্য, ‘‘যা করার আছে, করে নাও! বিজেপির স্বৈরাচার পরাজিত হবেই। বিজেপি আমাদের বিরুদ্ধে সমস্ত শক্তি, সম্পদ, অস্ত্র কাজে লাগিয়ে দিক। কিন্তু আমার কথা মনে রাখবেন, ওদের সমস্ত হাতিয়ার মুখ থুবড়ে পড়বে! আগামী নির্বাচনে তৃণমূলই বিজেপিকে হারাবে।’’
অভিষেক কংগ্রেসকে নিশানা করায় তার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা ওঁদের নতুন আবিষ্কার! প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বাড়িতে কী ভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থা হানা দিয়েছিল, কী ভাবে তাঁকে জেল খাটতে হয়েছিল, ওঁরা ভুলে গেলেও মানুষ সব দেখেছেন। কংগ্রেস সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য করার অধিকার কারও নেই!’’ অধীরবাবুর সংযোজন, ‘‘আগে বিজেপির সঙ্গে ঘর করে এসে এখন ওঁরা বিজেপি-বিরোধিতার পাঠ শেখাতে চাইছেন অন্যদের! সারা দেশে কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে লড়েছে এবং লড়ে যাবে, তৃণমূলের পছন্দ না হলেও এটাই বাস্তব।’’
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্যের আগে কংগ্রেস নেতারা অবশ্য ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র প্রতিবাদই করেছিলেন। দলের নেতা তারিক আনোয়ার এ দিন বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা অন্য বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে যে ইডি, সিবিআই অভিযান হচ্ছে, তা তো আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে হচ্ছে না, রাজনৈতিক কারণে হচ্ছে। বিরোধী শিবিরের কণ্ঠ দমন করার জন্য হচ্ছে। বিজেপি যখন থেকে ক্ষমতায় এসেছে, তখন থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।’’
মাথা নত না করার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশিই এ দিন অভিষেক প্রশ্ন তুলেছেন, ক্যামেরার সামনে যাঁদের হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের কেন ধরছে না ইডি বা সিবিআই? সেই প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘উনি ঠিক বলেছেন। কিন্তু ভুলে যাবেন না, সেই তালিকায় সৌগত রায়, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়েরা আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তৃণমূল ব্যবস্থা নিতে পারবে?’’ কেন্দ্রে ইডি-সিবিআই বা রাজ্যে সিআইডি-কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়ে সুজনবাবুর অভিযোগ, ‘‘মনে করিয়ে দিতে চাই, বস্তপচা গল্প সামনে এনে প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে সিআইডি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখত। জেলেও পাঠানো হয়েছিল তাঁকে।’’
দল ভাঙানো থেকে শুরু করে বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের নামে ‘মিথ্যা মামলা’— বিভিন্ন বিষয়েই তৃণমূলের মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি, এই কারণ দেখিয়েই ভবানীপুরে উপনির্বাচনে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে চাইছে বাংলার কংগ্রেস। যার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মুখপাত্র তাপস রায়ের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে হেঁটে বিধানসভায় প্রতিনিধিহীন হয়েছে বঙ্গ কংগ্রেস। এই ঈর্ষা ও সংকীর্ণ রাজনীতি তাদের কানাগলিতে পৌঁছে দেবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy