দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আদিত্য ঠাকরে। রবিবার মুম্বইয়ে। ছবি পিটিআই।
শিবসেনা বিধায়কদের ভিড় একনাথ শিন্ডের শিবিরে যত বাড়ছে, সরকার বাঁচাতে মহারাষ্ট্রের আম শিবসৈনিকদের ততই আঁকড়ে ধরতে চাইছে ঠাকরে পরিবার। জারি রয়েছে প্রচ্ছন্ন হুমকিও। আজ খোদ উদ্ধব-পুত্র আদিত্য ঠাকরে বিক্ষুব্ধ শিবিরের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে বলেছেন, মুম্বই বিমানবন্দর থেকে বিধানসভার রাস্তা শিবসেনা-অধ্যুষিত ওরলি হয়েই যায়!
গত কয়েক দিনে ঠাকরেদের সমর্থকেরা রাস্তায় নেমেছিলেন। আজ পাল্টা শক্তি দেখাতে পথে নামেন শিন্ডের সমর্থকেরা। দু’পক্ষের স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যেই শুক্রবার গভীর রাতে গুজরাতের বরোদায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে শিন্ডে দেখা করেছেন বলে খবর। যদিও উভয় শিবিরই ওই দাবি খারিজ করেছে। ঘটনাচক্রে, তার পরেই বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের মধ্যে ১৬ জনকে ওয়াই-প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি দেখে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লার কাছে বাড়তি আধাসেনা চেয়েছেন রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি। সব মিলিয়ে সরকারের ভাঙা-গড়া ঘিরে এখনও মুম্বইতে টানটান উত্তেজনা। রাতে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, খুব দ্রুতই বিক্ষুব্ধ মন্ত্রীদের বরখাস্ত করবেন উদ্ধব।
আজ ঠাকরেদের উদ্বেগ বাড়িয়ে শিন্ডের শিবিরে যোগ দিতে রাজ্যের আর এক প্রতিমন্ত্রী উদয় সামন্ত গুয়াহাটি পৌঁছে যান। এখনও যে চার মন্ত্রী বাকি আছেন, তাঁদের মধ্যে আদিত্য একমাত্র বিধায়ক। বাকি তিন জন বিধান পরিষদের সদস্য। বিক্ষুব্ধ মন্ত্রীদের বরখাস্ত করা হবে বলে পওয়ার ইঙ্গিত দিলেও শিন্ডে-ঘনিষ্ঠ দীপক কেসরকরের কিন্তু দাবি, এই মুহূর্তে তাঁদের গোষ্ঠীতে ৫১ জন রয়েছেন। দীপক বলেন, ‘‘আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি। তার পরে মহারাষ্ট্রে ফিরে যাব।’’ বিক্ষুব্ধেরা গুয়াহাটিতে ঘাঁটি গাড়ার পরে তাঁদের বাড়ি-অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলে বিক্ষুব্ধেরা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যেরাও মানসিক চাপে রয়েছেন বলে খবর।
এ দিকে, ঠাকরে পরিবার সাধারণ শিবসেনা সমর্থকদের রাস্তায় নামিয়ে সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ দলের ঘনিষ্ঠ নেতা সঞ্জয় রাউতের ধাঁচেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আদিত্য। বলেছেন, ‘‘মুম্বই বিমানবন্দর থেকে বিধানসভা যেতে হবে ওরলি দিয়েই।’’ ঠাকরে পরিবারের অনুগামী শিবসেনা সমর্থকদের ঘাঁটি ওরলি। আদিত্য বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিক্ষুব্ধেরা শিন্ডে-শিবির না ছাড়লে তাঁদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। শিন্ডেরাও বুঝতে পারছেন, বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের বাড়ি ও পরিবারের উপরে হামলা হলে তাঁদের বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না। তাই এ মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন দীপক কেসরকর। তাঁদের আশ্বস্ত করতেই তড়িঘড়ি ১৬ জন বিধায়ককে ওয়াই-প্লাস নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু বিক্ষুব্ধ বিধায়কের বাড়ির সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। অনেকের মতে, বিক্ষুব্ধ বিধায়কেরা ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ায় শিন্ডে-শিবির চাইছে, দ্রুত হস্তক্ষেপ করুন বিজেপি নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, মূলত সেই দাবি জানাতেই শুক্রবার রাতে বিশেষ বিমানে বরোদা উড়ে যান শিন্ডে। বৈঠক করেন শাহ ও ফডণবীসের সঙ্গে। দ্রুত বিধানসভায় ভোটাভুটি না হলে বিধায়কদের ধরে রাখা কঠিন হবে বলে জানান। তার পরেই বিক্ষুব্ধদের পরিবারের নিরাপত্তা বাড়ানোর আশ্বাস দেয় কেন্দ্র।
এ দিকে, হুইপ অমান্য করায় দু’দিন আগেই ১৬ জন বিধায়কের পদ বাতিলের আর্জি জানিয়ে ডেপুটি স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন উদ্ধব। সেই মতো নোটিস জারি করেন ডেপুটি স্পিকার। শিন্ডের বদলে অজয় চৌধুরিকে পরিষদীয় দলনেতা করেন উদ্ধব। দুই সিদ্ধান্তেরই বিরোধিতা করে আজ সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে শিন্ডে-শিবির। ডেপুটি স্পিকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের সিদ্ধান্তকেও কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছেন তাঁরা। আগামিকাল বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালার অবকাশকালীন বেঞ্চে সেই আবেদনের শুনানি হবে। বিরোধীদের বক্তব্য, ‘পরিষদীয় দলনেতা’ একনাথ শিন্ডেকেই নেতা হিসেবে সমর্থন জানিয়েছেন অধিকাংশ বিধায়ক। তাই অন্য কাউকে পরিষদীয় দলনেতা বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ম-বিরুদ্ধ। একই সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের দাবি, অধিকাংশ বিধায়ক যেখানে শিন্ডের সঙ্গে রয়েছেন, তখন দলীয় হুইপ ভাঙার প্রশ্নই নেই। তবে বিষয়টি আদালতে চলে যাওয়ায় এই জটিলতার নিষ্পত্তি যে সময়সাপেক্ষ, তা বুঝতে পারছে উভয় পক্ষই।
বিক্ষুব্ধ শিবিরকে যে কোনও ভাবেই সমর্থন করা হবে না, তা আজ ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন পওয়ার। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের প্রথম আড়াই বছরে কাজ করতে একনাথের কোনও সমস্যা হল না। হঠাৎ আজ কী এমন সমস্যা হল? পরিস্থিতি যা-ই হোক, কোনও ভাবেই বিক্ষুব্ধদের সমর্থনের প্রশ্ন নেই। আমরা উদ্ধব ঠাকরেকেই সমর্থন করব।’’ এ দিকে, একনাথ শিন্ডে আজ টুইটারে লেখেন, ‘‘দাউদ ইব্রাহিম ও মুম্বই বিস্ফোরণের অন্য চক্রীদের সঙ্গে যাদের সরাসরি যোগ, বালাসাহেব ঠাকরের শিবসেনা কী ভাবে তাদের সমর্থন করল? তাই আমরা এমন পদক্ষেপ করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy