ফাইল চিত্র।
দিন সাতেকের মধ্যেই অসমে এনআরসির কারণে আটকে থাকা আধার কার্ডের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে চলেছে। ‘বায়োমেট্রিক লক’ ও আধার না মেলার সমস্যা নিয়ে তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবের করা মামলার শুনানিতে কেন্দ্র ও রাজ্য জানাল, তারা ১৮ নভেম্বরের মধ্যেই বিষয়টির স্থায়ী সমাধানসূত্র আদালতে জমা দেবে। মামলাটিরও নিষ্পত্তি হয়ে যেতে পারে ওই দিন।
অভিযোগ, এনআরসি জটের কারণে অসমে প্রায় ২৭ লক্ষ মানুষ আধার নম্বর পাচ্ছেন না। ফলে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন সরকারি সুযোগসুবিধা থেকে। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সুস্মিতা। এ নিয়ে কেন্দ্র সরকার ও অসম সরকারের জবাব তলব করেছিল শীর্ষ আদালত। এত দিন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত এবং বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি চলে ছিল।
বুধবার সেই মামলা প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়, বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি জামশেদ বি পাদ্রিওয়ালার বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। কেন্দ্র ও অসম সরকারের বক্তব্য তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটার জেনারেল। তৃণমূলের পক্ষে সওয়াল করেন মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব। শুনানির শুরুতে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, এ বছর অগস্টেই কেন্দ্র এই সমস্যার সমাধানের জন্য একটি ‘অফিস মেমোরেন্ডাম’ জারি করেছিল। তার মাধ্যমে সব সমস্যার স্থায়ী সমাধানসূত্র খোঁজা হচ্ছে। কেন্দ্র জানায়, সমস্যা মেটাতে ১৮ নভেম্বর একটি কংক্রিট ও বাস্তবমুখী প্রস্তাব জমা দেওয়া হবে আদালতে। যাতে সেই দিনই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যেতে পারে। কেন্দ্রের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে আদালত ১৮ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।
উল্টো দিকে, বিপক্ষের আইনজীবী বিশ্বজিৎ জানান, অসম সরকারের দাবি, এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হলেও, সেই তালিকাকে স্বীকৃতি দিয়ে ‘নোটিফাই’ করেনি রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া বা আরজিআই। তাই, ‘বায়োমেট্রিক লক’ খোলা যাচ্ছে না। কিন্তু, ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের উপস্থিতিতে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, তাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘ফাইনাল এনআরসি’ বলা হয়েছিল। এনআরসি-র ওয়েবসাইটেও তার উল্লেখ রয়েছে। আদালতও তাকেই ‘চূড়ান্ত এনআরসি’ বলে মেনে নিয়েছে। আদালতে সুস্মিতার আইনজীবীর দাবি, সে ক্ষেত্রে অবিলম্বে আধার কর্তৃপক্ষ ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই)-এর সঙ্গে বায়োমেট্রিক তথ্যগুলি শেয়ার করতে বাধ্য আরজিআই।
বিশ্বজিৎ যুক্তি দেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোথাও বলা হয়নি যে, এনআরসি না হওয়া পর্যন্ত আধার নম্বর দেওয়া যাবে না। আরজিআইয়ের সঙ্গেও আধারের কোনও সম্পর্ক নেই। ২০০৩ নাগরিকত্ব আইনের ৭ নম্বর রুল অনুযায়ী, ‘ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড’ দেওয়ার ক্ষেত্রে আরজিআইয়ের কর্তৃত্ব রয়েছে। অথচ, খামোকা সুপ্রিম কোর্টের নিয়মাবলীর দোহাই দিয়ে অসমে ২৭ লক্ষাধিক মানুষের বায়োমেট্রিক তথ্য ‘লক’ করে রেখেছে এনআরসি দফতর।
বিশ্বজিৎবাবুর মতে, আধার আইনে বলা হয়েছে যে, কেউ ভারতে ১৮২ দিনের বাসিন্দা হলে বা আধারের জন্য আবেদন করার আগে ১২ মাস ভারতে থাকলেই আধার নম্বর পেতে পারেন। আধার নম্বরের সঙ্গে নাগরিকত্বেরও কোনও যোগ নেই। তাই, নাগরিকত্ব আইন বা প্রস্তাবিত এনআরসির জন্য আধার আটকে রাখা এবং এত জন মানুষকে তাঁদের প্রাথমিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা ‘আইনবিরুদ্ধ’ ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সুস্মিতা এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলেই সেই জট অবশেষে খুলতে শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy