নজিরবিহীন অভিযোগ জগন্মোহন রেড্ডির। —ফাইল চিত্র
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরির নামে। অভিযোগকারী যে সে ব্যক্তি নন। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগন্মোহন রেড্ডি। অভিযোগও যেমন-তেমন নয়। জগন্মোহনের অভিযোগ, রাজ্যে তাঁদের বিরোধী দল তেলুগু দেশমের নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডুর হয়ে বিচারপতি এন ভি রমণা অন্ধ্রের সরকারে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন।
সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত বিচারপতি, তা-ও আবার যিনি পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধান বিচারপতি, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর এমন অভিযোগ অভূতপূর্ব। আর সেই অভূতপূর্ব ঘটনা নিয়েই এখন দিল্লির রাজনীতি তোলপাড়। জল্পনা চলছে, জগন্মোহনের এই অভিযোগের পিছনে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতির থেকেও কোনও বড় রাজনীতি কি লুকিয়ে রয়েছে?
জগন্মোহন রেড্ডি গত ৬ অক্টোবর দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সে দিনই তিনি প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডেকে চিঠি লিখে বিচারপতি রমণার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। আগামী বছরের এপ্রিলে বর্তমান প্রধান বিচারপতি বোবডে অবসর নেবেন। তাঁর পরে প্রবীণতম হিসেবে বিচারপতি রমণারই প্রধান বিচারপতি হওয়ার কথা।
আরও পড়ুন: চাষির ভাল চাই বলেই রাগ: মোদী ॥ পাল্টা প্রশ্ন বিরোধীদের
সরকারি ভাবে এ নিয়ে মন্তব্য না করলেও বিরোধী শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, বিচারপতি রমণার প্রধান বিচারপতি হওয়ার পথে কি বাধা তৈরির চেষ্টা চলছে? বিচারপতি রমণা অবসর নেবেন ২০২২-এর অগস্টে। হিসেব অনুযায়ী, প্রবীণদের মধ্যে তাঁর পরে প্রধান বিচারপতি হওয়ার কথা বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের। যদিও মাত্র সাড়ে তিন মাসের জন্য। বিচারপতি রমণা প্রধান বিচারপতি না-হলে ওই পদে বিচারপতি ললিত অনেক বেশি দিন থাকতে পারবেন। বিচারপতি ললিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থেকেই বিচারপতি পদে উঠে এসেছেন। গুজরাতে পুলিশের ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় তিনি অমিত শাহের হয়ে সওয়াল করেছিলেন।
কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি বলেন, “বিচার বিভাগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। যাঁর কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে, বিষয়টি এখন তাঁর এক্তিয়ারেই রয়েছে। কোনও দলেরই এখন এ বিষয়ে টিপ্পনী করা ঠিক নয়।”
জগন্মোহন প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে অভিযোগ জানিয়েছেন, বিচারপতি রমণা সুপ্রিম কোর্টে বসেই অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টে কার বেঞ্চে কোন মামলার শুনানি হবে, তাতে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। বিগত তেলুগু দেশম সরকার সংক্রান্ত মামলা যাতে বাছাই করা কয়েক জন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি হয়, তা দেখছেন তিনি। চন্দ্রবাবুর সঙ্গে তাঁর পুরনো ঘনিষ্ঠতারও উল্লেখ করেছেন জগন্মোহন। অমরাবতীকে অন্ধ্রের নতুন রাজধানী ঘোষণা করার আগে সেখানে বিচারপতি রমণার দুই মেয়ের জমি কেনাবেচা সংক্রান্ত তদন্তের কথাও জানিয়েছেন। জগন্মোহনের অভিযোগ, গত বছর মে মাসে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই চন্দ্রবাবুর আমলের যাবতীয় চুক্তি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলন। এর পরেই বিচারপতি রমণা অন্ধ্রের হাইকোর্টে প্রভাব খাটাতে শুরু করেছেন।
চন্দ্রবাবু অনেক আগেই এনডিএ ছেড়েছেন। তেলুগু দেশমের নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জগন্মোহনের নিজের বিরুদ্ধেই সিবিআই, ইডি-র একগুচ্ছ দুর্নীতির মামলা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ১৩টি চার্জশিট জমা পড়েছে। বিচারপতি রমণা রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে জমে থাকা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগী হয়েছেন। তাতেই জগন্মোহন আতঙ্কিত। কিছু দিন ধরেই তিনি মোদী সরকারকে সব বিষয়ে সমর্থন করছেন। তাঁর আসল উদ্দেশ্য দুর্নীতির মামলা থেকে মুক্ত হওয়া। এনডিএ-র পুরনো শরিকরা একে একে বিদায় নেওয়ায় বিজেপিও জগন্মোহনের দল ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো দলগুলিকে এনডিএ-তে টানতে চাইছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy