প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে চিঠি লিখলেন এক পড়ুয়া। —ফাইল ছবি।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে দিল্লিতে আসা পড়ুয়াদের ‘নরক যন্ত্রণা’ সহ্য করতে হচ্ছে। দিল্লিতে কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে তিন আইএএস পড়ুয়ার জলে ডুবে মৃত্যুর পরে দেশের প্রধান বিচারপতিকে এই মর্মে চিঠি লিখেছেন অবিনাশ দুবে নামে এক পড়ুয়া। তাতে তাঁর হাহাকার, ‘নরকে বাস করছি...’। এই চিঠি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে দিল্লির বহু এলাকায় পুর-পরিষেবার নিদারুণ চিত্র। এই চিঠি কোনও মামলার আবেদন হিসেবে গৃহীত হবে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেননি প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। আজ সংসদেও পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনাটি উঠেছিল। তবে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তা নিশ্চিত করবে সরকার।
পশ্চিম দিল্লির রাজেন্দ্রনগরের ‘রাও’স আইএএস স্টাডি সার্কল কোচিং সেন্টার’-এর বেসমেন্টে শনিবার জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে শ্রেয়া যাদব, তানিয়া সোনি এবং নেভিল ডালউইনের। এই মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে কোচিং সেন্টারগুলির পরিকাঠামো নিয়ে। তার মধ্যেই অবিনাশের চিঠি সামনে নিয়ে এসেছে দিল্লির রাজেন্দ্র নগর, মুখার্জি নগরের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থাকে। তিনি লিখেছেন, ‘স্যর, পুরসভার অবহেলায় রাজেন্দ্র নগর, মুখার্জি নগরের বাসিন্দাদের প্রতি বছর জমা জলের সমস্যায় ভুগতে হয়। এই এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত জল জমে। ড্রেনের জল উঠে আসে বাড়িতে। তার মধ্যে দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। আমাদের মতো পড়ুয়ারা এই সব এলাকায় নরকের জীবনযাপন করছি। তার মধ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
বেহাল নিকাশির বিস্তারিত তথ্য দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠিতে অবিনাশ লেখেন, ‘রবিবারের ঘটনা প্রমাণ করল, আমাদের মতো পড়ুয়াদের জীবন নিরাপদ নয়। দিল্লি সরকার এবং পুরসভা আমাদের এমন ভাবে (পোকামাকড়) জীবনযাপন করতে বাধ্য করছে’। তাঁর আর্জি, ‘স্যর... সুস্থ পরিবেশে পড়াশোনা করা আমাদের মৌলিক অধিকার। বেসমেন্টে তিন পড়ুয়ার প্রাণহানির ঘটনা হৃদয়বিদারক ও উদ্বেগজনক। জল জমার কারণে কোচিং সেন্টারগুলিতে পড়ুয়াদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে...।’ অবিনাশের আবেদন, শীর্ষ আদালত অবিলম্বে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুক এবং স্থায়ী সমাধানের নির্দেশ দিক।
লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল জানতে চান, ‘‘দিল্লিতে অনেক কোচিং সেন্টার রয়েছে, যারা অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণ করে, কোনও সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে সংস্থা চালাচ্ছে। এরা মাফিয়ায় পরিণত হয়েছে... সরকার কী পদক্ষেপ করছে?’’ এর সরাসরি উত্তর দেননি ধর্মেন্দ্র। তিনি বলেছেন, কোচিং সেন্টার পরিচালনার জন্য গত জানুয়ারিতে নির্দেশিকা জারি করেছিল সরকার। কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের মতে, ‘জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের নিয়মকানুন ব্যাপক লঙ্ঘনের’ কারণেই রাজেন্দ্র নগরের ঘটনা ঘটেছে। তিন আইএএস পড়ুয়ার মৃত্যুর তদন্তে কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিক, দিল্লি প্রশাসনের আধিকারিক, পুলিশ ও দমকলের কর্তারা কমিটিতে থাকছেন। এক মাসের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে।
রাজ্যসভায় আজ তিন আইএএস পড়ুয়ার মৃত্যু নিয়ে আলোচনার নোটিস দিয়েছিলেন তিন সাংসদ। কিন্তু কংগ্রেস শুধুমাত্র দিল্লির ঘটনা নিয়ে আলোচনায় আপত্তি জানায়। তাদের দাবি, মণিপুর, নিট-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পড়ুয়ারা যে হেনস্থার শিকার হচ্ছে তা নিয়ে আলাদা করে আলোচনা হোক। ফলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় গত পরশুর ঘটনা নিয়ে আলোচনা আপাতত স্থগিত রাখেন।
এ দিকে, কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে তিন পড়ুয়ার মৃত্যুর তদন্তে উঠে আসছে বিভিন্ন প্রশ্ন। ওল্ড রাজেন্দ্রনগরের ওই কোচিং সেন্টারের বেসমেন্ট বেআইনি ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের অগস্টে দিল্লি পুরসভার কাছ থেকে কোচিং সেন্টার চালানোর অনুমতি পেয়েছিল ওই সংস্থা। সেই সংক্রান্ত নথিতে লেখা রয়েছে, বেসমেন্ট শুধু গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে। গৃহস্থালির জিনিসপত্র গুদামজাত করা যাবে সেখানে। তা সত্ত্বেও কেন সেখানে গ্রন্থাগার তৈরি হল, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। দিল্লির দমকল দফতরের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেয়েছিল ওই কোচিং সেন্টার। সেই সংক্রান্ত নথিতে বলা হয়েছে, কোচিং সেন্টারটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সেই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
নথি বলছে, বেসমেন্টে উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা রাখতে হবে। যদি কোনও কারণে বেসমেন্ট ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হয়, রাখতে হবে ঢোকার এবং বেরোনোর একাধিক দরজা। কিন্তু রাজেন্দ্রনগরের কোচিং সেন্টারে এক চিলতে বেসমেন্টেই তৈরি করা হয়েছিল গ্রন্থাগার। একটি ঘরে ক্লাসও নেওয়া হত। বেসমেন্ট থেকে বেরোনোর জন্য ছিল একটিমাত্র দরজা! বেসমেন্টে কেন গ্রন্থাগার, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বলা হচ্ছে, তাতে খরচ কম। প্রতি ক্লাস-পিছু যা আয় হয়, তা গ্রন্থাগার পরিষেবা থেকে প্রাপ্ত অর্থের থেকে বেশি। তাই উপর তলার ঝাঁ-চকচকে ঘরগুলি বরাদ্দ শ্রেণিকক্ষ হিসাবে। আর বেসমেন্টে গ্রন্থাগার বানিয়ে ফেলতে পারলেই অনেক টাকা সাশ্রয়! পড়ুয়া রবিকান্ত দুর্গ জানিয়েছেন, গ্রন্থাগার ব্যবহারের জন্য প্রত্যেক ছাত্রকে মাসে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা দিতে হয়। ভাড়া বাড়িতে থাকা বহু পড়ুয়ার কাছে গ্রন্থাগারে পড়াশোনা করা অনেক স্বস্তির।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ওই কোচিং সেন্টারের সামনে দিয়ে একটি এসইউভি তীব্র বেগে জল ভেঙে যাচ্ছে। আর জলের ধাক্কায় কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টের দরজা ভেঙে গিয়েছে। ভিতর থেকে ‘বাঁচানোর আর্তি’। আজ পুলিশ ওই গাড়ির চালককে গ্রেফতার করেছে। এই নিয়ে তিন আইএএস পড়ুয়ার মৃত্যুতে সাত জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
এই ঘটনার জন্য আপ সরকারের অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছে বিজেপি। আপ মন্ত্রী অতিশী ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। দিল্লির মেয়রের নির্দেশেও তদন্ত শুরু হয়েছে। নড়েচড়ে বসেছে পুরসভাও। দিল্লি জুড়ে বেআইনি কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে তারা। রাজেন্দ্রনগর এলাকার ১৩টি কোচিং সেন্টার সিল করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। আজ সকাল থেকে বুলডোজ়ার নিয়ে বেআইনি নির্মাণও ভাঙা শুরু করেছে দিল্লি পুরনিগম। সঙ্গে রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy