Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Lovely Professional University

লকডাউনের আতঙ্কে বাইকে ২৬০০ কিমি

এ বছরও প্রায় একই সময়ে করোনার সংক্রমণ মাত্রাছাড়া হয়ে উঠছে। মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।

ইন্দ্ররূপ গোস্বামী।

ইন্দ্ররূপ গোস্বামী। নিজস্ব চিত্র

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৩৬
Share: Save:

গত বছরের করোনা-সঙ্কট ও লকডাউনের স্মৃতি আজও তাড়া করে। এ বার সেই সঙ্কটে পড়তে চাননি বছর উনিশের ইন্দ্ররূপ গোস্বামী। লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির মাস-কমের ছাত্র পঞ্জাবের জালন্ধর ২৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেন মোটরসাইকেলে। ফিরে এলেন অসমে শিলচরের বাড়িতে।

গত বছর করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে আচমকাই ছাত্রাবাস ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাত্রাবাস ছেড়ে বাড়িতে ফিরবেন কী করে, মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে উত্তর-পূর্বের পড়ুয়াদের জন্য পাঁচটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু পথে কোথাও খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। দেশজোড়া লকডাউন। এক সময় জলও ফুরিয়ে যায়। সে সব ভাবলে আজও শিউরে ওঠেন চতুর্থ সিমেস্টারের পড়ুয়া ইন্দ্ররূপ৷

এ বছরও প্রায় একই সময়ে করোনার সংক্রমণ মাত্রাছাড়া হয়ে উঠছে। মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কোথাও লকডাউনের মতো পরিস্থিতি, কোথাও নৈশ কার্ফু। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে অফলাইন ক্লাস চালুর পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। ইন্দ্ররূপের চোখের সামনে ভেসে ওঠে গত বছরের ফেরার দিনগুলির ছবি। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, এ বার আর বাসে ফেরা নয়। এমনকি বিমানেও নয়৷ কারণ শিলচরের বিমানের জন্য জালন্ধর থেকে দিল্লি যেতে হয় ট্রেনে। মানুষের সংস্পর্শে যে কোনও জায়গায় করোনা সংক্রমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা৷

ঝুঁকিটা মেপে নিতে ইন্টারনেট-ম্যাপে জালন্ধর-শিলচর রাস্তাটা ভাল করে দেখে নেন ১৯ বছরের ইন্দ্ররূপ ওরফে বনি। মোটরসাইকেলের কাগজপত্রগুলি ভাল করে পরীক্ষা করেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স তো ঠিকই আছে, কয়েক মাস আগেই তৈরি করা হয়েছে। সে সব নিয়ে সোমবার সকালে জালন্ধর থেকে রওনা দেন। বাড়িতে জানিয়েছিলেন, চলে আসতে পারি। কিন্তু শিক্ষক পিতামাতাকে মোটরসাইকেলের কথাটা বলার সাহস পাননি। শুক্রবার রাতে কলিং বেল টিপতেই মা দরজা খুলে হতবাক। হেলমেট পরে ছেলে, উঠোনে মোটর সাইকেল! দেখে বেশ কিছু ক্ষণ কথা সরছিল না তাঁর।

বনির কথায়, “গত বছর থেকে অনেক স্বচ্ছন্দে এসেছি। প্রতিদিন জাতীয় সড়ক ধরে ৫০০-৬০০ কিলোমিটার চালিয়েছি। রাতে হোটেলে থেকেছি। সমস্যা হয়নি। পৌঁছে গিয়েছি পাঁচ দিনে।”

কিন্তু জালন্ধরে ফেরার সময়? ছেলে আস্তে করেই বলছিলেন, “দেখা যাক।” বাবা বিভূতিভূষণ গোস্বামী জোর গলায় জানিয়ে দেন, “তখন বিমানেই যাবে। মোটরসাইকেল ক্যুরিয়ারে যাবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE