গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
দিনের পর দিন দু’জনের কাছে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। তার জেরে গর্ভবতীও হয়ে পড়ে বছর পনেরোর কিশোরীটি। এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে উল্টে মেয়েটিকেই ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে স্থানীয় এক স্বঘোষিত পঞ্চায়েত। শুধু তাই নয়, তার সন্তানকে বিক্রি করে সে টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে নিয়ে নিতে নিদান দেয় তারা।
ঘটনা বিহারের মুজফ্ফরপুর জেলার। এই ঘটনার পর পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে মেয়েটি। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারিণী মেয়েটি কাতরা গ্রামের এক দিনমজুরের মেয়ে। মৌলানা মকবুল ও মহম্মদ শোয়েবের নামে ধর্ষণের অভিযোগ করেছে সে। সোমবার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশে অভিযোগের পর থেকে দুই অভিযুক্ত পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশিও শুরু হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের গোড়ায়। সে সময় মুজফ্ফরপুরের স্থানীয় মসজিদে থাকত এক ধর্মগুরু মৌলানা মকবুল। ওই মেয়েটির হাত দিয়ে গ্রামের লোকজন তাকে খাবার পাঠাত। অভিযোগ, এক দিন মাদক মেশানো মিষ্টি খাইয়ে তাকে ধর্ষণ করে মকবুল। মাস দুয়েক ধরে তার অত্যাচারের শিকার হয় সে। ঘটনার কথা যাতে জানাজানি না হয়, সে জন্য মকবুল মেয়েটিকে খুনের হুমকিও দিত বলে দাবি গ্রামের এক বাসিন্দার। তবে ওই ঘটনার কথা জানতে পেরে যায় স্থানীয় এক ইলেকট্রিশিয়ান মহম্মদ শোয়েব। এর পর শোয়েবের কাছেও ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রের ঢেউ ঝাড়খণ্ডে! আসন সমঝোতা নিয়ে শরিকি চাপে বিজেপি, ভাঙনের মুখে এনডিএ
কাতরা গ্রামের এক মসজিদ কমিটির সদস্য মহম্মদ সাদ্রে জানিয়েছেন, গোটা ঘটনা নিয়েই স্থানীয় মসজিদ কমিটির ‘স্বঘোষিত পঞ্চায়েত’ বেশ ক্ষুব্ধ। চলতি বছরের গোড়াতেই কমিটির কাছে ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়েছিল মেয়েটি। গত মাসে প্রসবের পর সন্তানের পিতৃপরিচয় জানতে চেয়ে অভিযুক্তদের ডিএনএ টেস্টেরও আবেদন করেছিল সে। তবে সে আবেদন খারিজ করে ওই মেয়েটিকেই দোষী সাব্যস্ত করে মসজিদের পঞ্চায়েত কমিটি। মহম্মদ সাদ্রে বলেন, ‘‘ওই মেয়েটিকে দোষী বলে আমাদের পঞ্চায়েত ওই শিশুটিকে বিক্রি করে দিতে নির্দেশ দেয়। বিক্রির টাকা ওই মেয়েটিকে নিয়ে নিতে বলেছিল কমিটি। যত দূর আমি জানি, সমস্তিপুর জেলার তাজপুরের এক পরিবারের সঙ্গে ১ লাখ টাকায় রফাও হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সন্তান বিক্রি হয়েছিল কি না, তা জানি না।’’
আরও পড়ুন: টানটান নাটক মহারাষ্ট্রে, পওয়ারের সঙ্গে কথা সনিয়ার, মুম্বই পাঠালেন নেতাদের
কাতরা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান অরুণ কুমার জানিয়েছেন, ধর্ষণের বিচার চেয়ে ওই মেয়েটি তাদের কাছেও এসেছিল। তবে তাকে পুলিশের কাছে যেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন অরুণ কুমার। কিন্তু তার বদলে সে মসজিদ কমিটির কাছে যায়। এর পর মসজিদ কমিটির নিদান শুনে অবশেষে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায় মেয়েটি। স্থানীয় থানা থেকে ওই মেয়েটিকে মুজফ্ফরপুরের পুরোপুরি মহিলা কর্মী দ্বারা পরিচালিত এক থানায় পাঠানো হয়। ওই থানার আধিকারিক সরিতা দেবী জানিয়েছেন, ওই দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো (প্রোটেকসন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট) ছাড়াও বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের খোঁজে তিন বার গ্রামে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তাদের খোঁজে গ্রামে পোস্টারও সাঁটানো হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: আধার কার্ডে ঠিক কত বার এই তথ্যগুলি বদল করা যাবে, জানেন?
মুজফ্ফরপুরের পুলিশ সুপার জয়ন্ত কান্ত বলেন, ‘‘ওই দুই অভিযুক্ত ছাড়াও ওই পঞ্চায়েতের সদস্যদের বিরুদ্ধেও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইস্ট) অমিতেশ কুমারের নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী দল দুই অভিযুক্তের খোঁজ করছে।’’
পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগকারিণীর সন্তানের পিতৃপরিচয় জানার জন্য ডিএনএ টেস্ট করার কথা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy