প্যাঙ্গোলিন সমাজে এত দিন ভারত, এবং চিনের প্রজাতিরই উপস্থিতি ছিল। কিন্তু সেই তালিকায় নতুন সংযোজন ‘ইন্দো-বার্মা’-র বাসিন্দারাও। সম্প্রতি ভারতীয় প্রাণী সর্বেক্ষণের বিজ্ঞানীরা প্যাঙ্গোলিনের একটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্দো-বার্মিজ়’ প্যাঙ্গোলিন (মানিস ইন্দোবার্মানিকা)। অরুণাচল এবং অসমে এই প্রজাতির সন্ধান মিলেছে বলে খবর। অনুমান করা হচ্ছে, নেপাল, ভুটান এবং মায়ানমারেও এদের বাসস্থান থাকতে পারে। চোরাশিকারিদের তালিকায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী প্যাঙ্গোলিনের তালিকায় এই নতুন সংযোজনকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন জীববিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, এই আবিষ্কার এক দিকে যেমন জিনগত বৈচিত্র, বিবর্তন ইত্যাদি বুঝতে সাহায্য করবে তেমনই প্যাঙ্গোলিন সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রাণী সর্বেক্ষণের অধিকর্তা ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘জীববৈচিত্র সংক্রান্ত গবেষণায় এই আবিষ্কার বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ভারত-মায়ানমার অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই এই প্রজাতির প্যাঙ্গোলিনের সংরক্ষণ অতি গুরুত্বপূর্ণ।’’ বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞেরাও বারবার এই প্রাণীটির সংরক্ষণের কথা বলেছেন। বন্যপ্রাণ পাচার দমনের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ট্র্যাফিক’-এর রিপোর্ট বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এ দেশে অন্তত এক হাজার প্যাঙ্গোলিন চোরাশিকারের কবলে পড়েছে। প্যাঙ্গোলিনের আঁশ এবং দেহাবশেষ উদ্ধারের ঘটনাও বন দফতর মাঝেমধ্যেই জানিয়ে থাকে। চিন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে ‘হাতুড়ে’ ওষুধ প্রস্তুতে এগুলি ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ।
প্যাঙ্গোলিন (গ্রামবাংলায় যার অন্য নাম বনরুই) এক ধরনের পিপীলিকাভুক প্রাণী। অর্থাৎ, নিরীহ এই প্রাণীগুলির খাদ্যতালিকার মূল অংশ পিঁপড়ে, উই জাতীয় পোকামাকড়। প্যাঙ্গোলিনের যে তিনটে গোত্রের কথা জানা যায়, তার মধ্যে একটি এশীয় প্যাঙ্গোলিন। ভারতীয়, চিনা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় প্যাঙ্গোলিন (সুন্দা) তার মধ্যেই পড়ে। এশিয়ার আরেকটি প্যাঙ্গোলিনের প্রজাতি (জায়ান্ট এশিয়ান প্যাঙ্গোলিন) বহু আগেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি অরুণাচল থেকে প্যাঙ্গোলিনের একটি প্রজাতির সন্ধান পান প্রাণী সর্বেক্ষণের বিজ্ঞানীরা যার জিনোমের গঠন বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানিয়েছেন যে এটি একটি ভিন্ন প্রজাতি। প্রায় ৩৪ লক্ষ বছর আগে ভূতাত্ত্বিক এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সময় চিনা প্যাঙ্গোলিন থেকে পৃথক হয়ে এই প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছিল। এই গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী মুকেশ ঠাকুরের মতে, ‘‘এই নতুন প্রজাতির আবিষ্কার শুধু প্যাঙ্গোলিন সংক্রান্ত নতুন তথ্য তুলে ধরবে না। বরং অঞ্চলভেদে সংরক্ষণের নীতি-পদ্ধতি তৈরি করতেও সাহায্য করবে।’’ এই গবেষণায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লেনরিক কোংচোক ওয়াংমোর। তিনিও প্যাঙ্গোলিন সংরক্ষণের উপরে বিশেষ জোর দিচ্ছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)