সন্তান খুনে অভিযুক্ত সূচনা শেঠ। ছবি: পিটিআই।
হোটেলের ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ছুরি, একটি তোয়ালে আর একটি বালিশের সূত্র ধরে তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। শিশু খুনের রহস্যের জট খুলতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছেন তদন্তকারীরা। এ বার মিলল একটি চিঠি! তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, চিঠির বয়ানের সূত্র ধরে বাকি জটও ছাড়ানো সম্ভব হবে। স্পষ্ট হয়ে যাবে খুন হওয়া শিশুর মা তথা বেঙ্গালুরুর মাইন্ডফুল এআই ল্যাব-এর সিইও সূচনা শেঠের ভূমিকা।
পুলিশ সূত্রে খবর, উদ্ধার হওয়া চিঠিতে লেখা, ‘‘আমার স্বামীকে আমার সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া নিয়ে আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, সেটা আমি মেনে নিতে পারছি না।’’ ইতিমধ্যেই চিঠিটি ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে হাতের লেখা পরীক্ষা করে দেখার জন্য। চিঠির হাতের লেখা সূচনার কি না, তা-ই দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
কর্নাটকে ছেলের দেহ-সহ ধরা পড়া সূচনাকে ট্রানজিট রিমান্ডে গোয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছ’দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে তাঁকে। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, জেরায় জানা গিয়েছে, দাম্পত্য সমস্যায় জর্জরিত সূচনা ও তাঁর স্বামী বেঙ্কটরামনের বিবাহ-বিচ্ছেদ মামলা শেষ পর্বে পৌঁছেছে। ২০১০ সালে বিয়ে। ২০১৯ সালে ছেলের জন্ম। ২০২১ সাল থেকে আলাদা থাকছিলেন সূচনা ও বেঙ্কট। গত বছর অগস্টে স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার মামলা করেন তিনি। অভিযোগ ছিল, বেঙ্কট ছেলেকে ও তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করেন। পাশাপাশি, স্বামীর থেকে প্রতি মাসে আড়াই লক্ষ টাকা খোরপোশের দাবিও করেন। সূচনা আদালতে জানান, তাঁর স্বামী বছরে কোটি টাকারও বেশি অর্থ উপার্জন করেন। গত ১২ ডিসেম্বরে আদালত বেঙ্কটকে মামলা চলাকালীন মাসে ২০ হাজার টাকা করে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, সূচনার বাড়িতে ঢুকতে, ফোন বা মেসেজ করে যোগাযোগ রাখতে নিষেধ করে। একই সঙ্গে, প্রতি রবিবার ছেলের সঙ্গে বাবাকে দেখা করার অনুমতিও দেয় আদালত। সম্ভবত, এই রায়ে ভেঙে পড়েছিলেন সূচনা। তদন্তকারীরা আগেই অনুমান করেছিলেন, বাবার সঙ্গে দেখা হওয়া আটকাতেই রাগের বশে ছেলেকে খুন করে থাকতে পারেন সূচনা। হোটেলের ঘর থেকে চিঠি উদ্ধার হওয়ার পর সেই অনুমান আরও কিছুটা পোক্ত হল বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
গোয়ার ক্যান্ডোলিম বিচে যে হোটেলে ছেলেকে নিয়ে উঠেছিলেন সূচনা, সেই ঘর থেকেই ওই ছুরি, তোয়ালে, বালিশ ও দু’টি কাশির সিরাপের খালি বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, সূচনা ওই হোটেলে উঠেছিলেন গত ৬ জানুয়ারি। হোটেল ছেড়েছিলেন ৮ জানুয়ারি। ছাড়ার পর হোটেলের এক কর্মী ওই ঘরে গিয়ে রক্তের দাগ লেগে থাকা তোয়ালে উদ্ধার করেন। রাত ১টা নাগাদ সূচনা তড়িঘড়ি হোটেল ছাড়ার সময়েই কর্মীদের সন্দেহ হয়েছিল তাঁর হাবেভাবে। এর পর ঘর সাফাইয়ের সময় তোয়ালেতে রক্তের দাগ দেখে সেই সন্দেহ তীব্র হওয়ায় পুলিশে খবর দেওয়া হয় হোটেল থেকে। পুলিশকে জানানো হয়, হোটেল বুক করার সময় সূচনার সঙ্গে তাঁর ছোট্ট ছেলে ছিল। কিন্তু বেরোনোর সময় তাকে দেখেননি হোটেলের কর্মীরা। সূচনার হাতে থাকা ভারী ব্যাগটির কথাও হোটেল কর্মীরাই জানিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, তদন্তকারীরা সূচনার সঙ্গে যোগাযোগ করে তোয়ালেতে রক্তের দাগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঋতুস্রাবের কারণে ওই দাগ লেগেছে তোয়ালেতে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শিশুর ময়নাতদন্ত করেছেন যিনি, সেই চিকিৎসক জানিয়েছেন, সম্ভবত কাশির ওষুধ বেশি পরিমাণে খাইয়ে ছেলেকে বেহুঁশ করে নাকে-মুখে বালিশ, তোয়ালে চাপা দিয়ে বা তার জাতীয় কিছু গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। ছেলের দিক থেকে প্রতিরোধের কোনও চেষ্টাই চোখে পড়েনি চিকিৎসকের। তার পরে সম্ভবত হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন সূচনা। কিন্তু পরে মন বদলান। সেখান থেকে তাঁর হাতে ক্ষত হয়ে থাকতে পারে। তবে খুনের কথা এখনও স্বীকার করেননি গোয়ার মাপুসা জেলে বন্দি মা। বার বার বলছেন, ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান ছেলে মারা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy