গত দু’মাসেরও বেশি দিন ধরে জ্বলছে মণিপুর। —ফাইল চিত্র।
তিনি কার্গিলের যুদ্ধে লড়েছেন। শ্রীলঙ্কায় কাজ করেছেন ভারতীয় শান্তিসেনার সদস্য হিসেবে। কিন্তু আজ নিজের গ্রামের মাটিকে যুদ্ধক্ষেত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে তাঁর। বলছেন, ‘‘দেশের সম্ভ্রম রক্ষা করতে আমি লড়াই করেছি। কিন্তু নিজের দেশে নিজের স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারিনি।’’
গলা ধরে আসছে প্রাক্তন সেনার। সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত মণিপুরে গত ৪ মে যে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে এক জন তাঁরই স্ত্রী। মণিপুরের প্রাক্তন সেনা বার বার বলছেন, ‘‘দেশকে বাঁচালাম। কিন্তু নিজের বাড়ি, স্ত্রী, গ্রামের মানুষগুলো— কাউকেই তো বাঁচাতে পারলাম না!’’ গ্রামপ্রধান তো তিনিই, ১৮ মে এই ঘটনার প্রথম এফআইআর তিনিই করেছিলেন।
চার বছরের এক ছেলে আছে এই দম্পতির। দুঃস্বপ্নের শেষে তিন জনের দেখাও হয়েছে আবার। কিন্তু এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেননি বছর চুয়াল্লিশের নির্যাতিতা। ঘটনার দিন, সেই ৪ মে যিনি দুষ্কৃতীদের কাকুতি-মিনতি করে বলেছিলেন, ছেলের মুখ চেয়ে তাঁকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। লোকগুলো বলেছিল, ‘‘বাঁচতে হলে কাপড় খোল।’’
ওই নির্যাতিতা জানিয়েছেন, গত ৪ মে মেইতেই জনতা কাঙ্গপোকপি জেলায় তাঁদের বি ফাইনম গ্রামের দিকে আসছে শুনেই কয়েক জন কুকি মহিলার সঙ্গে ছেলেকে জঙ্গলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বামী এবং নিজে যখন পালানোর চেষ্টা করছেন, তখনই দুষ্কৃতীরা আসে। দু’জনকে দু’দিকে নিয়ে চলে যায়। নির্যাতিতার কথায়, ‘‘আমাকে বলা হল, এক মেইতেই মহিলাকে নাকি আমাদের গোষ্ঠীর লোকেরা ধর্ষণ করেছে (একটি ভুয়ো ভিডিয়ো থেকে সেই গুজব ছড়ায়)। তাই ওরাও আমাদের সঙ্গে একই কাজ করবে। আমার সঙ্গে আর একটি মেয়ে ছিল। তার বাবাকে মেরে ফেলা হল চোখের সামনেই।’’
সেই ‘অন্য মেয়েটিকেও’ বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয় সে দিন। মেয়েটির বাবা শুধু নন, কিশোর ভাইকেও খুন করে জনতা। সেই ছেলেমেয়ের মা বলছেন, ‘‘বড় ছেলের চাকরি নেই। ছোট ছেলেটাই ছিল আশা। কষ্ট করে স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। ওকে মারল, ওর বাবাকেও। আমাদের সব শেষ। ঘর-জমি পুড়িয়ে দিয়েছে। কী করব আর গ্রামে ফিরে?’’
প্রাক্তন সেনার স্ত্রী জানাচ্ছেন, প্রায় হাজার লোকের ভিড় সে দিন যৌন নিগ্রহ করেছিল তাঁদের। শেষে বাঁচিয়েছিলেন কয়েক জন মেইতেই যুবকই। পোশাকের ব্যবস্থা হওয়ার পরে অন্য মেয়েটিকে তাঁর বাবা আর ভাইয়ের দেহের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু দেহ উদ্ধার করা আর হয়নি। কার্গিলের যোদ্ধা বলছেন, তাঁর প্রাণ বেঁচেছিল বরাতজোরে। হামলাকারীদেরই মধ্যে ছিল তাঁর কয়েক জন বন্ধুর ছেলে। চিনতে পেরে তারাই তাঁকে পালিয়ে যেতে দিয়েছিল। পরে জঙ্গলে তিনি খুঁজে পান স্ত্রী-সন্তানকে। কিন্তু এর পর কী হবে? সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পরে নিজের ব্যবসা শুরু করেছিলেন, একটা মিনি ট্রাক কিনেছিলেন। সেই পোড়া ট্রাক এখন দাঁড়িয়ে তাঁর বাড়ির পাশে। প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর আর্জি, ‘‘সুবিচার দিন মেয়েদের।’’
বিরোধীদের যদিও প্রশ্ন, সেনাদের সঙ্গে দীপাবলি কাটিয়ে সমাজমাধ্যমে ছবি পোস্ট করা প্রধানমন্ত্রী এক প্রাক্তন সৈনিকের সেই আর্জি শুনছেন তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy