Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

লঞ্চে বিসর্জনের প্রস্তুতি, ভিতরে নমাজ

অসহিষ্ণুতা নিয়ে যখন দেশ জুড়ে বিস্তর বিতর্ক, নানা রকম অবাঞ্ছিত ঘটনা, সেই সময়ে ৫৭ বছর বয়সি সুবহানের অভিজ্ঞতা কিন্তু ভিন্ন।

বরাক নদীর সদরঘাটে সুবহান। নিজস্ব চিত্র

বরাক নদীর সদরঘাটে সুবহান। নিজস্ব চিত্র

উত্তমকুমার সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০১:১৩
Share: Save:

লঞ্চের উপরে চলছে দুর্গা ঠাকুর বিসর্জনের প্রস্তুতি। ওই লঞ্চের ভেতরে গামছা পেতে নামাজ সেরে নিলেন আব্দুস সুবহান লস্কর। রাজ্য জলপরিবহণ দফতরের লঞ্চ-চালক তিনি। ১৯৯২ সালে সাধারণ কর্মী হিসেবে চাকরিতে যোগদান। ১২ বছর পরে পদোন্নতি পেয়ে মাস্টার বা লঞ্চ-চালক হন। সেই থেকে বিসর্জনের লঞ্চ তিনিই নোঙর করেন বরাক নদীর সদরঘাটে। সন্তানদের নিয়ে দেবী শিলচর থেকে তাঁর লঞ্চেই রওনা হন কৈলাসের পথে।

অসহিষ্ণুতা নিয়ে যখন দেশ জুড়ে বিস্তর বিতর্ক, নানা রকম অবাঞ্ছিত ঘটনা, সেই সময়ে ৫৭ বছর বয়সি সুবহানের অভিজ্ঞতা কিন্তু ভিন্ন। বললেন, ‘‘দাড়ি-লুঙ্গি দেখে দেড় দশকে কেউ কখনও কটূক্তি করেননি। এমনকি একই লঞ্চে নমাজ আদায়েও কোনও আপত্তি ওঠেনি।’’ তবে সন্ধ্যা ও রাতের নমাজের সময় তিনি নদীতীরে কাছারি মসজিদে চলে যান। তা-ও কোনও ভয়ভীতি বা অস্বস্তিতে পড়ে নয়। লাউডস্পিকারের বিকট শব্দে লঞ্চে নমাজ আদায়ে অসুবিধা হয়। সুবহান জানালেন, প্রশিক্ষণের সময়ই শেখানো হয়েছে, ডিউটি চলাকালে কোনও ভেদাভেদ নেই। তাই শুধু লঞ্চ নোঙর করে বসে থাকা নয়, প্রতিমা বিসর্জনে হাতও লাগিয়েছেন বহু বছর। বছর চারেক ধরে অবশ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী দায়িত্ব নেওয়ায় অন্যদের আর দরকার পড়ে না। তবে বিসর্জন চলাকালে নদীর জলস্তরের ওঠা-নামায় বিসর্জন-পর্বে যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, সে দিকে তাঁকেই সারা ক্ষণ খেয়াল রাখতে হয়।

বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া লঞ্চ এখন আর বরাকের জলে চলে না। মাস্টাররা এখন মোটরবোট চালান। সুবহান বললেন, ‘‘আমার মোটরবোটে কত বিশ্বকর্মা মূর্তি যে এ পার-ও পার হয়। অনেকে মনসা প্রতিমা নিয়ে বোটে ওঠেন। মাঝনদীতে বিসর্জন দেন।’’ পূজাবাড়ির মানুষ সঙ্গে থাকলেও নিরাপদে ফেলার কাজটা তাঁকেই করতে হয়। সুবহানের কাছে জল প্রকৃত অর্থেই জীবন। জলই জীবিকা। তাই নদীদূষণ তাঁকে পীড়া দেয়। এ বার কাছাড়ের জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করেন। পূজার ফুল, মালা, অলঙ্কার, অস্ত্র বিসর্জনের আগে খুলে নেওয়া হয়। বিসর্জনের পরও বেশি সময় প্রতিমাকে নদীতে ভাসতে দেওয়া হয়নি। ঘাটের ১০০ মিটার দূরে ৫টি মোটরবোট জল থেকে প্রতিমাগুলিকে তুলে রাখে। সুবহানের কথায়, সব প্রতিমা তোলা যায়নি বটে, কিন্তু উদ্যোগটাও কম কথা নয়।

এই বছর সম্প্রীতির উদাহরণ গড়েছেন কাছাড় জেলার সোনাইয়ের এক দল মুসলিম যুবকও। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের তাঁরা জল পান করান। নিজেরা জলের বোতল কিনে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত তা বিতরণ করেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Religious Harmony Tolerance Intolerance India Religion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy