হ্রদগুলি গত তিন দশক ধরে বরফে গলা জলে তৈরি হয়েছে বলে অনুমান। ছবি: পিক্সাবে।
কুমায়ুন হিমালয়ের গোরি গঙ্গা অঞ্চলে খোঁজ মিলল ৭৭টি নতুন হিমবাহ গলা জলে তৈরি হ্রদের। আর সেই হ্রদগুলি যে কোনও মুহূর্তে হড়পা বানের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের করা সমীক্ষায় এই ৭৭টি নতুন হ্রদের খোঁজ মেলার তথ্য উঠে এসেছে। ৩,৫০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত এই হ্রদগুলি গত তিন দশক ধরে অর্থাৎ, ১৯৯০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বরফে গলা জলে তৈরি হয়েছে বলে অনুমান।
উত্তরাখণ্ডের গোরি গঙ্গা অঞ্চলে প্রধানত মিলম, গোঁখা, রালাম, লওয়ান এবং মার্তোলি হিমবাহ রয়েছে। এই ৭৭টি হ্রদের মধ্যে সব থেকে বড় হ্রদটির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে গোঁখায়। এই হ্রদের ব্যাস ২.৭ কিলোমিটার।
কুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সমীক্ষায় উল্লেখ রয়েছে, ‘‘ভবিষ্যতে যে কোনও ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপ হ্রদটির বাঁধ ফেটে যেতে পারে। যা হড়পা বানের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।’’
কুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈনিতাল ক্যাম্পাসের ভূগোলের অধ্যাপক দেবেন্দ্র পারিহার বলেন, ‘‘২০২০ সাল নাগাদ ওই ৭৭টি হিমবাহ গলা জলে তৈরি হ্রদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে সর্বাধিক ৩৬টি হ্রদ রয়েছে মিলমে, সাতটি হ্রদ গোঁখায়, ২৫টি রালামে, তিনটি লওয়ানে এবং ছয়টি হ্রদ মার্তোলি অঞ্চলে রয়েছে। ’’
তবে এই হ্রদগুলি গোরি গঙ্গা এলাকার বিপুল ক্ষতিসাধন করতে পারেও বলে জানিয়েছেন দেবেন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘‘গত ১০ বছরে গোরি গঙ্গা এলাকা অনেকগুলি হড়পা বান দেখেছে। যার ফলে সম্পত্তি এবং কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন এই হ্রদগুলির কারণে হড়পা বান এলে তা ওই অঞ্চলের জনজীবনকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে।’’
ঘন ঘন বন্যার কারণে গোরি গঙ্গা উপত্যকা এলাকার টলি, লুমতি, মাওয়ানি, ডোবরি, বরম, সানা, ভাদেলি, দানি বাগদ, সেরা, রোপার, সেরাঘাট, বাগিচাবগড়, উমাদগড়, বঙ্গপানি, দেবীবাগ-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামকে দুর্যোগপ্রবণ বলে ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন ।
২০২১-এর নভেম্বরে চামৌলিতে হড়পা বানের কারণে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের একটি অনুমান অনুসারে, উত্তরাখণ্ডের উঁচু পর্বত অঞ্চলে হাজারটিরও বেশি হিমবাহ এবং ১২০০টিরও বেশি ছোট-বড় হিমবাহ গলা জলে তৈরি হ্রদ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২ জানুয়ারি থেকে উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠের জনজীবনও বিপর্যস্ত। গাড়োয়াল হিমালয়ের ওই গুরুত্বপূর্ণ জনপদে ৮০০-রও বেশি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। চওড়া ফাটল দেখা গিয়েছে শহরের রাস্তা-মন্দির-জমিতে। আতঙ্কে রাতারাতি ভিটেমাটি ছাড়া সেই শহরের বহু মানুষ। ঠাঁই হয়েছে আশ্রয় শিবিরে। বহু পরিবারকে ত্রাণশিবিরে পাঠানো হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনের তরফে করা উন্নয়নকেই দায়ী করেছেন স্থানীয়রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy