Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

৫৬ ইঞ্চির মোদীই রক্তের দালাল, রাহুলের মতে

নরেন্দ্র মোদী জাতীয় রাজনীতিতে আসা ইস্তক মাত্র এক বারই তাঁর প্রশংসা করেছেন রাহুল গাঁধী! সেই এক বারের প্রশংসাও বেমালুম গিলে ফেলে ফের তাঁকে তেড়েফুঁড়ে তুলোধোনা করতে নামলেন কংগ্রেস সহসভাপতি!

নয়াদিল্লিতে যন্তরমন্তরের সভায় রাহুল গাঁধী। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

নয়াদিল্লিতে যন্তরমন্তরের সভায় রাহুল গাঁধী। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:১৬
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী জাতীয় রাজনীতিতে আসা ইস্তক মাত্র এক বারই তাঁর প্রশংসা করেছেন রাহুল গাঁধী! সেই এক বারের প্রশংসাও বেমালুম গিলে ফেলে ফের তাঁকে তেড়েফুঁড়ে তুলোধোনা করতে নামলেন কংগ্রেস সহসভাপতি!

নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে গিয়ে ভারতীয় সেনা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ সেরে আসার পরে সব বিরোধী দলই পাশে দাঁড়িয়েছিল মোদী সরকারের। যে সনিয়া গাঁধী এক সময়ে মোদীকে ‘মওত কা সওদাগর’ বলে বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন, তিনিও সরকারের এই পদক্ষেপের সমর্থনে মুখ খোলেন। শ্লেষের সঙ্গে হলেও রাহুলকে প্রশংসা করে বলতে হয়, ‘‘এই প্রথম মোদী প্রধানমন্ত্রী-সুলভ কোনও কাজ করলেন।’’ কিন্তু বিজেপি যে ভাবে ওই সেনা অভিযান নিয়ে ঢাক পেটাতে শুরু করেছে এবং এটিকে ভোটের হাতিয়ার করে তুলেছে, তাতেই সুর বদলে যাচ্ছে বিরোধীদের। কৃষক যাত্রার শেষে দিল্লিতে ফিরে আজ যন্তরমন্তরের সভা থেকে রাহুল তাই সাম্প্রতিক কালের মধ্যে তীব্রতম ভাষায় আক্রমণ করেন মোদীকে। বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরে জওয়ানরা রক্ত ঝরিয়েছেন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছেন। আপনি আড়ালে থেকে তাঁদের রক্ত নিয়ে দালালি করছেন! এটা একেবারেই ঠিক নয়। সেনা সেনার কাজ করেছে। আপনি আপনার কাজ করুন। সপ্তম বেতন কমিশনে সেনাদের পয়সা বাড়ান। তার জন্যই মানুষ আপনাকে নির্বাচিত করেছে।’’ শুধু কংগ্রেস নয়, বিরক্ত এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারও। তিনি এ দিন মনে করিয়ে দেন, তাঁর সময়েও চার বার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে। কিন্তু তাঁরা সংযমী ছিলেন। ঢাক পেটাননি। বিরোধী শিবিরের এই ওজনদার নেতাটিই ২৯ সেপ্টেম্বরের সেনা অভিযানের পরে বিরোধীদের ডেকে বিষয়টি তাঁদের বুঝিয়েছিলেন।

সন্দেহ নেই, ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এ বিরোধীদের সমর্থন প্রথম ক’দিন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিল বিজেপি। রাহুল-শরদদের মন্তব্যে আজ তার রেশ কেটে যায়। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘এটি রাহুলের হামলা নয়, নীচতা। ঈশ্বর রাহুলকে শুভবুদ্ধি দিন। দালালির প্রতি গাঁধী পরিবারের পুরনো ঘনিষ্ঠতা আছে। বফর্স থেকে শুরু করে স্পেকট্রাম, কয়লা, সাবমেরিন-জল-স্থল-আকাশ সর্বত্রই দালালির ভাগ খেয়ে এসেছে রাহুলের পরিবার। তাই সেনাবাহিনী সম্পর্কেও এমন কথা মুখ থেকে বেরোয়।’’ দলের সভাপতি অমিত নিজে আজ এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও কাল তিনি এ নিয়ে মুখ খুলবেন। রাহুলের মন্তব্য নিয়ে তিনি এক দফা কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এ দিন অমিতের উপস্থিতিতেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের কটাক্ষ, ‘‘রাহুল যে ভাবে সেনাবাহিনীকেও অপমান করছেন, তাতে তিনিই দায়িত্ব নিয়ে কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ে ফেলবেন।’’

আসলে উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে সেনা অভিযান নিয়ে তরজা বাড়লে বিজেপিরই লাভ। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘দলিত বা সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে আক্রমণ এলে বিজেপির পক্ষে তা মোকাবিলা করা কঠিন। কিন্তু জাতীয়তাবাদ নিয়ে পিএচডি করা আছে বিজেপির। এ নিয়ে আক্রমণ হলে মোক্ষম জবাব দেবে দল। সে দিক থেকে রাহুল আজ সেমসাইড গোল করলেন। তিনি সঞ্জয় নিরুপমের থেকেও এক কাঠি উপরে উঠতে চাইছেন।’’

কী বলছে কংগ্রেস? রাহুলের উত্তরপ্রদেশ সফর শুরুই হয়েছিল খাটিয়া-লুঠ বিতর্ক দিয়ে। কৃষকযাত্রার শেষ দিনটিতেও পিছু ছাড়েনি গোষ্ঠী কোন্দল। অথচ বিজেপি সেনা অভিযানের হাওয়ায় ভর করে এগিয়ে চলেছে উত্তরপ্রদেশে। এর একটা মোক্ষম জবাব দেওয়ায় দায় ছিল রাহুলের। রাহুল-ব্রিগেডের নেতা জিতিন প্রসাদের ব্যাখ্যা, ‘‘গোটা উত্তরপ্রদেশ চষে রাহুল যা অনুভব করেছেন, সেটাই বলেছেন। সংসদেও কংগ্রেস এ নিয়ে সরব হবে।’’

প্রধানমন্ত্রী বলছেন বুক ঠুকে জাহির করার দরকার নেই। যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হবে শুধু তিনিই শুধু বলবেন এ নিয়ে। কিন্তু বিজেপি যে সেনা অভিযানকে পুঁজি করেই ভোটের ঘুঁটি সাজাচ্ছে, তা আজ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে উত্তরপ্রদেশে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি কেশবপ্রসাদ মৌর্য আগরায় সেনা অভিযান নিয়ে দলের উৎসব পালনের মঞ্চ তৈরি করে সেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। যে আগরায় এক সময় দলিতদের জড়ো করতে না পেরে অমিত শাহের সভা বাতিল হয়েছিল, মায়াবতী সেখান থেকেই লক্ষ লোক নিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন। সেখানেই আজ সেনা অভিযানের জন্য মোদীর ৫৬ ইঞ্চি ছাতির তারিফে উচ্ছ্বসিত হন বিজেপি নেতারা। আর পর্রীকর বলেন, ‘‘মোদীর নেতৃত্বে সীমান্ত নিরাপদ। সকলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।’’ সেনা অভিযান নিয়ে যাঁরা সংশয় প্রকাশ করেছেন, তাঁদের উদ্দেশে পর্রীকর বলেন, ‘‘সেনার প্রতি আস্থা না রেখে যাঁরা অভিযান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন, তাঁরা দেশের প্রতি দায়বদ্ধ নন। আমাদের সেনা ১০০% নিখুঁত অভিযান চালিয়েছে, যা গোটা বিশ্বে বিরল। আমি নিজে সাদাসিধে হলেও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্যারাও হতে পারি।’’ এরই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর স্পষ্ট ঘোষণা, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যা বেরিয়েছে, তার পরে আর সরকারের তরফে কোনও ভিডিও বা প্রমাণ দেখানোর দরকার নেই। যা প্রকাশ পেয়েছে, সেটাই যথেষ্ট।

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul gandhi modi blood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy