সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কারা শাসক দলকে আর্থিক সাহায্য করছে, সেই তথ্য গোপন রাখা গেলেও একই প্রকল্পে বিরোধীদের পাওয়া টাকার সূত্র প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলাগুলির আজ ছিল দ্বিতীয় দিনের শুনানি। শাসক ও বিরোধী দলের নির্বাচনী বন্ডের গোপনীয়তা রক্ষায় সমতা থাকবে কি না, এ দিন সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। এমনকি, শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনী বন্ড ব্যবহারের সুযোগ না দিয়ে সেই টাকা নির্বাচন কমিশনের হাতে দেওয়া যেতে পারে। কমিশন সে ক্ষেত্রে দলগুলির শক্তি অনুযায়ী তা বণ্টন করতে পারবে। কিন্তু এই আলোচনায় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা পাল্টা জানান, সে ক্ষেত্রে হয়তো কমিশনের ঘরে কোনও টাকাই পৌঁছবে না। গোটাটাই নগদের লেনদেন হবে। তাঁর এই আশঙ্কার কথা কার্যত মেনে নেন প্রধান বিচারপতিও।
দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, তা হল, নির্বাচনী বন্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে তথ্য গোপন রাখার বিভেদ। মঙ্গলবার, প্রথম দিনের শুনানিতে আদালত পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, বিরোধী দলগুলিকে অনুদান দেওয়া ব্যক্তি বা সংস্থা যাতে ক্ষমতাসীন দলের রোষের শিকার না হয়, হয়তো সেটা ভেবেই নির্বাচনী বন্ডে গোপনীয়তার পরিসর রাখা হয়েছে। তার উল্টো পিঠে রাজনীতির ময়দানে সমতা ক্ষুণ্ণ হবে কি না, এ দিনের শুনানিতে সেই প্রশ্নটাই উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণ, নির্বাচনী বন্ড সুযোগ বুঝে বেনামি বা গোপন থাকতে পারে।
আজকের শুনানিতে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, কেউ নির্বাচনী বন্ড কিনে বিরোধী দলকে অর্থ সাহায্য করলে তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সহজেই পরিচয় বার করে ফেলতে পারে। কিন্তু সেই সুযোগ বিরোধী দলগুলির থাকছে না। বিচারপতি সঞ্জীব খন্না বলেন, ‘‘তথ্য বার করার পথ এবং পদ্ধতি দু’টোই আছে আর সেটা ক্ষমতায় থাকা দলের পক্ষে সহজ। শঙ্কার জায়গাটা হল, এই বাছাই গোপনীয়তার ফলে বিরোধী দল জানতে পারবে না আপনার (ক্ষমতাসীন দল) তহবিলদাতা কারা। কিন্তু বিরোধী দলের তহবিলদাতা কারা, তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে অন্তত সেটা নির্ণয় করে ফেলা যায়।’’ আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিরোধীদের তহবিল নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের অনুদান নিয়ে তাদের প্রশ্ন তোলার জো থাকবে না।
কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা অবশ্য দাবি করেন, দু’-এক জনের হাতে অপব্যবহারের আশঙ্কা নির্বাচনী বন্ড বাতিল করে দেওয়ার ভিত্তি হতে পারে না। তিনি জানান, এই বন্ড আসার আগে কুড়ি হাজার টাকার কম অঙ্কের এক-একটি ব্যক্তিগত অনুদান দেখিয়ে মোটা তহবিলের উৎস গোপন রাখা যেত। মেহতার দাবি, এ ভাবে
৬৯ শতাংশ রাজনৈতিক অনুদানই ‘অজ্ঞাত উৎস’ থেকে এসেছে বলে দেখানো হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এ দিন পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, রাজনীতির কার্যক্রমে সাদা টাকা আনার চেষ্টাই রয়েছে নির্বাচনী বন্ডের বর্তমান প্রকল্পে। তথ্যের ব্যাপারে একটা ফাঁক দেওয়া থাকছে, সমস্যা সেটাই। তিনি বলেন, ‘‘উদ্দেশ্য প্রশংসনীয় হতেই পারে। প্রশ্নটা হল, পদ্ধতিতে সামঞ্জস্য বজায় থাকছে কি না।’’ রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচরণ থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কি না, সেটা সরকারকে ব্যাখ্যা করতে বলেছে আদালত। বিচারপতি খন্না বলেছেন, ‘‘গোপনীয়তার অবকাশ দেওয়া হলে কিছুর-বদলে-কিছু পাইয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি যে দেখা দেবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে
কী করে?’’
এ দিনের শুনানিতে আবেদনকারীদের তরফে সওয়াল শেষ হয়েছে। পরবর্তী শুনানি বৃহস্পতিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy