এখান থেকেই উদ্ধার হয় তরুণীর পোড়া দেহ। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
ছক কষা হয়েছিল ঘণ্টা তিনেক আগে। সেই মতো পশু-চিকিৎসক তরুণীর স্কুটারের চাকা ফাঁসানো হয়েছিল, সারিয়ে দেওয়ার নাম করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই স্কুটার। তার পরে চার জন মিলে গণধর্ষণ করেছিল তাঁকে। শেষে খুন করে পেট্রল-ডিজেল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছিল দেহটা।
তেলঙ্গানায় গত বুধবারের এই ঘটনায় শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। গত কাল ২৬ বছরের ওই তরুণীর আধপোড়া দেহাংশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে সাইবারাবাদ পুলিশ। মহম্মদ আরিফ (২৬), জল্লু শিবা (২০), জল্লু নবীন (২০) এবং চিন্তকুন্ত চেন্নাকেশভুলু (২০) নামে এই চার জনই ট্রাকের কর্মী। হায়দরাবাদের কাছে শামশাবাদ টোল প্লাজ়ায় গত বুধবার রাতে যাদের দেখে বোনকে ফোন করে তরুণী বলেছিলেন, ‘‘প্রচুর অচেনা লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে। আমার সঙ্গে কথা বলতে থাক।’’
আর সেই ফোন নিয়েই প্রশ্ন তুলে বিতর্ক তৈরি করেছেন তেলঙ্গানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ মাহমুদ আলি। তিনি বলেছেন, ‘‘ওই মহিলা শিক্ষিতা হয়েও পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোন না-করে বোনকে ফোন করলেন কেন? তাতে হয়তো বেঁচে যেতেন।’’ তেলঙ্গানার ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্র এ দিন সব রাজ্যকে ‘অ্যাডভাইসরি’ পাঠিয়ে মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনায় আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করতে বলেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডি জানান, তেলঙ্গানার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: রাঁচীতে ছাত্রীকে গণধর্ষণে ধৃত ১২
কল্লুরু গ্রামের একটি পশু-হাসপাতালে কাজ করতেন তরুণী। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ঘটনার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে প্রথমে গোচিবাওলিতে এক চর্মচিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের স্কুটারটি শামশাবাদ টোল প্লাজার কাছে রেখে ট্যাক্সি নিয়ে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে তিনি দেখা করতে যান। ফিরে এসে দেখেন, স্কুটারের পিছনের চাকাটি পাংচার হয়ে গিয়েছে।
হায়দরাবাদ শহর থেকে শামশাবাদ প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। তরুণী ওই টোল প্লাজা থেকে রাত সওয়া ৯টা নাগাদ বোনকে ফোন করে বলেন, দুই ট্রাকচালক তাঁকে সাহায্য করবে বলছে। তাঁর আপত্তি সত্ত্বেও টায়ার সারিয়ে দেবে বলে স্কুটার নিয়ে চলে গিয়েছে এক জন। বোন তাঁকে পরামর্শ দেন, স্কুটারটি রেখে ট্যাক্সি ধরে চলে আসতে। সে-ই শেষ কথা। পৌনে ১০টায় বোন আবার ফোন করে দেখেন, মোবাইল বন্ধ। পরের দিন সকালে শামশাবাদের আউটার রিং রোডের আন্ডারপাসের নীচে ওই চিকিৎসকের পোড়া দেহাংশ মেলে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ টোল প্লাজ়ায় তরুণী চিকিৎসককে স্কুটার রাখতে দেখেই তাঁকে ধর্ষণের ছক কষেছিল চার অভিযুক্ত। সেখানে বসে মদ খাচ্ছিল তারা। তরুণী ট্যাক্সিতে চলে যেতেই স্কুটারের চাকা ফাঁসিয়ে দেয় নবীন। তরুণী ফিরে আসার পরে আরিফ বলে, চাকা তারা সারিয়ে দেবে। স্কুটার নিয়ে শিবা চলে যায়। তখন আরিফ, নবীন এবং চিন্তকুন্ত টোল প্লাজ়ার কাছেই একটি ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে তরুণীকে। চাকা সারিয়ে ফিরে এসে ধর্ষণ করে শিবাও। তরুণীর মুখ চেপে ধরে আরিফ। তরুণী নিথর না-হয়ে যাওয়া পর্যন্ত মুখ থেকে হাত সরায়নি সে। এর পরে স্কুটারটি নিয়ে কয়েক বোতল পেট্রল কেনে দু’জন। অন্য দু’জন আরিফের লরিতে দেহ নিয়ে যায় আন্ডারপাসে। কিছুটা ডিজেল বার করা হয় তরুণীর স্কুটার থেকেও। এর পরে আন্ডারপাসের এক কোণে দেহ নামিয়ে তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পালায় তারা। পরের দিন ভোরে এক দুধ-বিক্রেতা সেখানে দেহটি জ্বলতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ কমিশনার ভি সজ্জনার বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ কাজে এসেছে।’’ আজ একই এলাকায় পাওয়া গিয়েছে আরও এক মহিলার মৃতদেহ। এর সঙ্গে চিকিৎসক খুনের যোগ আছে কি না, স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy