জন্মদিনে ‘সেবা’র মাধ্যমে বিশ্বরেকর্ড গড়তে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাঁর দল বিজেপি আজ ঘোষণা করল, নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনটাই এ বার থেকে পালন করা হবে ‘সেবা দিবস’ হিসেবে।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম জন্মদিনে নিজের রাজ্য গুজরাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন চিনা প্রেসিডেন্টকে। কিন্তু গোড়া থেকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর জন্মদিনে কোনও ঢাকঢোল, আড়ম্বর যেন না হয়। গত বছরও নিজের জন্মদিনটি প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালেই কাটিয়েছিলেন। সরকারের দু’বছর পার করার পর সেই নরেন্দ্র মোদীই এ বার নব কলেবরে নিজের জন্মদিন পালন করতে আসরে নামলেন। গুজরাতে তিনি তিন-তিনটি বিশ্বরেকর্ড গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর আজ সন্ধ্যায় মোদীর সেনাপতি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ঘোষণা করলেন, মোদীর জন্মদিনটি পালন হবে ‘সেবা দিবস’ হিসেবে। কোনও জীবিত ব্যক্তির জন্মদিন এ ভাবে পালন বিরল ঘটনা।
কী ভাবে হবে বিশ্বরেকর্ড?
জন্মদিনকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী এ বার ফের যাচ্ছেন গুজরাতে। সেখানে তিনি সময় কাটাবেন প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে। ১১ হাজার প্রতিবন্ধীর হাতে তুলে দেওয়া হবে বিভিন্ন সামগ্রী। যেটি একটি বিশ্বরেকর্ড হতে চলেছে। এরই পাশাপাশি এক হাজার প্রতিবন্ধীকে দেওয়া হবে কানে শোনার যন্ত্র, ১০০০ প্রতিবন্ধী হুইলচেয়ারে বসে নানা রূপ নেবেন, আর ১০০০ জন তেলের বাতি জ্বালাবেন একসঙ্গে। এর আগে আমেরিকায় একসঙ্গে ৩৪৬ জন হুইলচেয়ারে বসে একজোট হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় একসঙ্গে ৫০০ জনকে কানে শোনার যন্ত্র দেওয়া হয়েছিল। আলো জ্বালানোর প্রস্তুতি বিশ্বে এই প্রথম। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অফিসারদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই অনুষ্ঠানে।
এই অনুষ্ঠানের সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে আজ অমিত শাহ ঘোষণা করেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনকে ‘সেবা দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। দেশ জুড়ে সব কর্মী মানুষের সেবা করবেন। আমি নিজেও তেলঙ্গানায় গিয়ে স্বচ্ছতা অভিযানে সামিল হব। জনসেবার থেকে সন্তোষজনক কাজ আর হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীও সবসময় চান, উন্নয়নের ফল গরিব মানুষের কাছে পৌঁছনো প্রয়োজন। অন্ত্যোদয় বিচারধারার প্রতি দায়বদ্ধ থেকেই এই কাজ করতে হবে।’’
সামনের সপ্তাহেই কেরলে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির তিন দিনের বৈঠক হতে চলেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকী সূচনার ঘোষণাও হবে সেখান থেকে। সারা বছর ধরে দীনদয়ালের ‘অন্ত্যোদয়’ প্রকল্পের রেশ ধরে গরিব মানুষের সেবা করার দাওয়াই হবে বিজেপি কর্মীদের। প্রশ্ন হল, যে মোদী আগে নিজের জন্মদিন নিয়ে একদম ঢাকঢোল পেটানোর পক্ষে ছিলেন না, তিনি কী করে হঠাৎ ভোলবদল করছেন?
বিজেপি সূত্রের মতে, যে ভাবে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর গায়ে শিল্পবন্ধু তকমা সেঁটে দিয়েছেন, তার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদী নিজেকে ‘গরিব-দরদী’ হিসেবে মেলে ধরতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে রাহুল গাঁধী লাগাতার সুট-বুটের সরকার বলে মোদীকে কটাক্ষ করে চলেছেন তাঁর উত্তরপ্রদেশের যাত্রাপথে। দুনিয়ার রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে ‘নিজস্বী’ তুললেও কোনও দিন কোনও কৃষকের সঙ্গে তা তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি বলেও খোঁচা দিচ্ছেন। তার উপর লোকসভা ভোটের আগে সাধারণ মানুষের যে পাহাড়প্রমাণ প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল মোদীর উপরে, তাতেও এখন ভাটা পড়েছে। আমজনতাও এখন বলতে শুরু করেছেন, ‘সুদিন’ আর আসছে না। এ ব্যাপারে মোদীর হতাশা প্রকাশ্যে খোলসা করে বসে আছেন মন্ত্রিসভায় মোদীরই সতীর্থ নিতিন গডকড়ী। এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশে ‘সেবা’র ভাব প্রচার ও প্রসার করে নিজের ভাবমূর্তিকে নতুন মোড়কে নিয়ে আসতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন তো আছেই, পরের লোকসভা নির্বাচনের আগেও যাতে ভিতটি এখন থেকেই তৈরি করে রাখা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy