এশিয়ান গেমস। ছবি: রয়টার্স।
তাঁদের সতীর্থেরা যখন কোনও সমস্যা ছাড়াই দেশের জার্সিতে এশিয়ান গেমসে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে নামছেন, তখন অরুণাচল প্রদেশের নিয়েমান ওয়াংসু, ওনিলু টেগা ও মেপুং লামগুর কপালে শিকেই ছিঁড়ল না। হাংঝৌ এশিয়ান গেমসে খেলার জন্য ওই তিন উশু (কুংফু) খেলোয়াড়কে ভিসা দিল না চিন।
কারণ? চিনের বক্তব্য, অরুণাচলকে তারা বরবারই তিব্বতের অংশ বলে মনে করে। ‘দক্ষিণ তিব্বত’ আসলে চিনের অংশ। কাজেই প্রশ্নই উঠছে না ভিসা পাওয়ার। চিনের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে ভারত সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানান, চিনের এই বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদে দেশের ক্রীড়া ও তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এশিয়ান গেমস উপলক্ষে তাঁর নির্ধারিত চিন সফর বাতিল করেছেন।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, “চিন সব দেশের ক্রীড়াবিদদেরই হ্যাংঝাউ এশিয়াডে স্বাগত জানাচ্ছে। কিন্তু চিন সরকার তথাকথিত অরুণাচল বলে কোনও প্রদেশকে স্বীকার করে না। দক্ষিণ তিব্বত আদতে চিনের এলাকা।” উল্লেখ্য, ওই তিন খেলোয়াড়কেই জুলাই মাসে বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসের সময়ে স্টেপলড ভিসা দিয়েছিল চিন। তাই তাঁরা সে বারেও গেমসে অংশ নিতে পারেননি। উল্লেখ্য, এশিয়ান গেমসে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের যোগদানের স্বীকৃতি (অ্যাক্রেডিটেশন)-টিই ভিসার কাজ করছে। ওই তিন জনের ক্ষেত্রে তা ডাউনলোডই করা যায়নি।
এক্স হ্যান্ডলে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের যে বিবৃতি অরিন্দম পোস্ট করেছেন তাতে বলা হয়েছে, চিনের এই পদক্ষেপ পূর্ব পরিকল্পিত এবং তা এশিয়ান গেমসের আদর্শের পরিপন্থী। গেমসের নীতি-নিয়মে রয়েছে— সদস্য দেশের কোনও ক্রীড়াবিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা চলবে না। সেই নিয়ম মানছে না চিন। এ ভাবে কয়েক জন খেলোয়াড়কে নিশানা করে গেমসে তাঁদের অ্যাক্রেডিটেশন ও হ্যাংঝাউতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ভারতের কোনও নাগরিকের প্রতি জাতিগত, সম্প্রদায়গত বা অবস্থানগত কারণে বৈষম্য প্রদর্শন কখনও মানা হবে না। এই কাজের কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার ভারতের রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
শুক্রবার রাতেই ভারতীয় উশু দলের আরও ৮ জনের সঙ্গে চিনের উড়ান ধরার কথা ছিল অরুণাচলের তিন খেলোয়াড়ের। এঁদের মধ্যে মহিলা দলের মেপুং লামগুর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে তাঁর উদ্বিগ্ন পরিবার। ইটানগর থেকে তাঁর দাদা, পেশায় চিকিৎসক গান্ধী লামগু জানান, বোনের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়েছিল গত কাল, যখন জেনেছিলেন, ওঁদের চিনে যাওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘বোন এত কাঁদছিল যে, থামানো যাচ্ছিল না। এখন ওর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। ও যেন কোনও চরম সিদ্ধান্ত না নেয়।’’ বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে একটি সংবাদ সংস্থায় অলিম্পিক কাউন্সিল অব এশিয়া (ওসিএ)-র সাম্মানিক ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েই জিঝংয়ের একটি উদ্ধৃতিতে। সেখানে তিনি বলেছেন, ওই খেলোয়াড়দের ইতিমধ্যেই চিনে প্রবেশের ভিসা দেওয়া হয়েছে। যদিও এই বক্তব্য যাচাই করা যায়নি।
অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু বলেন, “অরুণাচলের খেলোয়াড়দের চিনের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। বেজিং প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক নিয়ম মানছে না, এশিয়ান গেমসের আদর্শও পালন করছে না। অরুণাচলবাসীরা সকলে মনে-প্রাণে ভারতবাসী। আমরা সকলে আমাদের তিন খেলোয়াড়ের পাশে দাঁড়িয়ে চিনের নিন্দা করছি। এটি কত বড় অন্যায়, তা বেজিংকে বুঝিয়ে ওই তিন জনের ভিসা পাওয়ার ব্যবস্থা করুক আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি।” অরুণাচলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “অরুণাচলের অবস্থান নিয়ে কোনও দ্বিমতই নেই। তা বরাবরই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অরুণাচলবাসী চিনের দাবির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমাদের দাবি, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থা চিনের বেআইনি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy