প্রতীকী ছবি।
সংসদেও হানা দিল করোনাভাইরাস!
বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে আসা ২৫ জন সাংসদের করোনা ধরা পড়েছে বলে আজ সংসদীয় সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। যাঁদের মধ্যে ১৭ জন লোকসভার এবং বাকি আট জন রাজ্যসভার সদস্য। আক্রান্ত সাংসদদের অধিকাংশ বিজেপিরই। সাংসদ ছাড়াও বেশ কিছু সংসদ কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীর শরীরে করোনার সন্ধান মিলেছে।
আজ থেকে শুরু হয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশন। তার আগে গত শনি ও রবিবার সংসদ চত্বরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অ্যান্টিজেন ও আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে প্রায় ২৫০০ নমুনা পরীক্ষা করে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। তা থেকেই জানা গিয়েছে, বিজেপির মীনাক্ষি লেখি, অনন্তকুমার হেগড়ে, প্রবেশ সাহেব সিংহ, রীতা বহুগুণা জোশী, রেল প্রতিমন্ত্রী সুরেশ আনগাদি, সুকান্ত মজুমদারের মতো ১৭ জন লোকসভা সাংসদ সংক্রমণের শিকার। অন্য দিকে, রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দীপেন্দ্র হুডা, নারানভাই রাঠওয়া, বিজেপির অশোক গাস্তি, অভয় ভরদ্বাজ, এডিএমকে-র এ নবনীতা কৃষ্ণন, আপের সুশীল গুপ্ত, টিআরএসের ভি রাও ও তৃণমূলের শান্তা ছেত্রীর শরীরে ভাইরাস রয়েছে।
সংসদের পরীক্ষায় পজ়িটিভ হয়ে রাজস্থানে ফিরে যান নাগৌরের আরএলপি সাংসদ হনুমান বেণীওয়াল। জয়পুরে ফের পরীক্ষায় দেখা যায় তিনি নেগেটিভ। ফলে করোনা পরীক্ষার ফল ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। আদতে পজ়িটিভ হয়েও কেউ সংসদে প্রবেশের ছাড়পত্র পেয়ে গেলন কি না, প্রশ্ন সেটাও।
আজই, সংসদ শুরুর আগে, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাংসদেরা সংসদীয় দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসায় তাঁদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বার রাজ্যসভা ও লোকসভা দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এমনকি শনি ও রবিবারেও হবে। সব সাংসদ তা মেনে নিয়েছেন।’’ তার পরেই সাংসদদের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে।
সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন দাবি করেন, লকডাউনের ফলে ১৪ থেকে ২৯ লক্ষ সংক্রমণ রোখা সম্ভব হয়েছে। মৃত্যু আটকানো গিয়েছে ৩৭ থেকে ৭৮ হাজারের কাছাকাছি। বিরোধীরা চার ঘণ্টার নোটিসে লকডাউন ঘোষণাকে অবৈজ্ঞানিক বললেও, হর্ষ বর্ধন পাল্টা বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়কে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন, পিপিই, মাস্ক, ভেন্টিলেটর উৎপাদনে আত্মনির্ভর হতে ব্যবহার করা হয়েছে।’’
কিন্তু হর্ষ বর্ধন মিনিট তিন-চার বলার পরেই হস্তক্ষেপ করেন স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি বলেন, ‘‘আপনার বক্তব্য অনেক বড়। গুরুত্বপূর্ণ অংশ পড়ে বাকি বিবৃতি সংসদে পেশ করে দিন।’’ শুনে হতভম্ব স্বাস্থ্যমন্ত্রী খানিক অসন্তোষের সুরেই বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এটিই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রত্যেক সাংসদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত থাকা উচিত...।’’ স্পিকার অবশ্য অনড়ই ছিলেন। তিনি ফের বলেন, ‘‘আপনি শুধু প্রধান অংশগুলি বলুন।’’ হর্ষ বর্ধন বলেন, তিনি দশ-পনেরো মিনিটে বক্তব্য শেষ করে দেবেন। এর পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারতে প্রতি দশ লক্ষে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হল যথাক্রমে ৩৩২৮ ও ৫৫। যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।’’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিবৃতির এক-তৃতীয়াংশ শেষ করার আগেই স্পিকার বলেন, ‘‘মন্ত্রীজি, আপনার বক্তব্য সংসদে পেশ করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।’’ হর্ষ বর্ধন ভাল করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরবর্তী বিষয় নিয়ে বলার জন্য অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের নাম ঘোষণা করে দেন স্পিকার।
স্পিকার আজ যে ভাবে হর্ষ বর্ধনকে চুপ করিয়ে দিয়েছেন, তা দেখে বিরোধীদের চেয়ে বেশি অবাক শাসক শিবির। অনেক বিজেপি নেতাই মনে করছেন, এর পিছনে কোনও অন্তর্নিহিত বার্তা থাকলেও থাকতে পারে। কারণ, তাঁদের মতে, গত তিন সপ্তাহে যে ভাবে ফি-দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে ব্যর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ফলে মন্ত্রক তথা মন্ত্রীর প্রতি আদৌও খুশি নন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy