ফাইল চিত্র।
ট্রেন চালাবে বেসরকারি সংস্থা। পথ বেঁধে দিল নীতি আয়োগ।
আয় বাড়াতে দেশের ১০০টি রুটের ১৫৬টি ট্রেন বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রক। সেই লক্ষ্যে নীতি আয়োগ গতকাল যে খসড়া নথি প্রকাশ করেছে, তাতে ১৫৬টি ট্রেনকে ডিভিশন ও গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের ভিত্তিতে ৭টি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে। নীতি আয়োগের বক্তব্য, কোনও ইচ্ছুক বেসরকারি সংস্থা ন্যূনতম একটি ও সর্বাধিক তিনটি ক্লাস্টারে ট্রেন চালাতে পারবে। যারা ইচ্ছুক, তাদের গোটা ক্লাস্টারের সবক’টি রুটেই ট্রেন চালাতে হবে। ইচ্ছেমতো কোনও ক্লাস্টারের লাভজনক রুটই শুধু বেছে নেওয়া যাবে না। তবে সংস্থাগুলিকে ফায়দা দিতে বেসরকারি ট্রেন ছাড়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে সেই রুটে ভারতীয় রেলের কোনও ট্রেন চালানো হবে না বলে জানানো হয়েছে খসড়ায়। রেলের একটি সূত্রের মতে, ওই নীতি মেনে প্রথম বেসরকারি সংস্থার ট্রেন ছুটবে আগামী বছরের মাঝামাঝি।
পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র পূর্ব রেলের হাওড়া স্টেশনটি ক্লাস্টার হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। হাওড়া থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া ১৮টি ট্রেনকে বেছে নেওয়া হয়েছে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। এর মধ্যে রয়েছে, হাওড়া-চেন্নাই (ফি দিন), হাওড়া-দিল্লি/আনন্দবিহার (ফি দিন), হাওড়া-পটনা-(ফি দিন), শালিমার-বেঙ্গালুরু (ফি দিন)। এবং শিয়ালদহ-গুয়াহাটিও (সপ্তাহে ২ দিন)।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই খসড়া প্রস্তাবকে চূড়ান্ত করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। রেল সূত্রের খবর, নীতি প্রস্তুত হলেই ডাকা হবে দরপত্র। তবে রেলের মতে, ২০২১ সালের আগে ওই রুটগুলিতে বাড়তি ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। রেলের মতে, যে পূর্ব ও পশ্চিম পণ্যবাহী করিডর তৈরি হচ্ছে তার কাজ এ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে আগামী বছরের শুরু থেকে সমস্ত মালগাড়ি কেবল ওই করিডর দিয়ে যাতায়াত করবে। ফলে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে সেই স্থানে ওই বাড়তি ট্রেনগুলি চালানো হবে। মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, ট্রেন চালাতে আগ্রহী সংস্থাগুলির ন্যূনতম মূল্য ৪৫০ কোটি হতে হবে। তবেই তারা দরপত্র ডাকার শর্ত পূরণ করবে। বিদেশি সংস্থারাও এতে অংশ নিতে পারবে বলে জানিয়েছে রেল। তবে আগ্রহী সংস্থাকে অন্তত ৩৫ বছর ট্রেন চালাতে ইচ্ছুক হতে হবে।
খসড়া নীতি অনুযায়ী, বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ইঞ্জিন ও কামরা দেবে রেল। সংস্থাগুলি প্রয়োজন মতো কামরাগুলিকে পুনর্নির্মাণ করে নিতে পারবে। সিগন্যালিং-সহ পরিচালনব্যবস্থা ও সুরক্ষার বিষয়টি দেখার দায়িত্বে থাকবে রেল। যার জন্য নির্দিষ্ট ভাড়া গুনতে হবে বেসরকারি সংস্থাকে। চালক ও গার্ডের দায়িত্ব থাকবে বেসরকারি সংস্থার হাতে। তবে এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থা যদি সাহায্য চায়, তা হলে রেলের নিজস্ব চালক ও গার্ডকে ওই ট্রেনগুলি চালাতে সাময়িক ভাবে ধার দেবে ভারতীয় রেল। ট্রেন চালানোর প্রশ্নে রেলের নিজস্ব ট্রেন ও বেসরকারি ট্রেনের মধ্যে বৈষম্য করা হবে না। প্রতিটি বেসরকারি ট্রেনে অন্তত ১৬টি কামরা থাকতে হবে। বেসরকারি ট্রেনগুলির সর্বাধিক গতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার।
বিরোধীদের মতে, নীতি আয়োগের ওই সিদ্ধান্ত রেলকে বেসরকারিকরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে। যদিও মন্ত্রকের যুক্তি, এ ছাড়া রেলে আর্থিক অক্সিজেন জোগানের আরও কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। প্রাথমিক ভাবে, ওই দেড়শো ট্রেন থেকে ২২,৫০০ কোটি টাকা তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল। কিন্তু তা আদৌ সফল হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অনেকের মতে, বেসরকারি ট্রেনগুলিতে প্রথমত স্লিপার শ্রেণির ভাড়া বর্তমান ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশি হবে। ফলে খুব দায় না থাকলে তাতে আমজনতা চাপবে না। দ্বিতীয়ত, বহু ট্রেনের বাতানুকূল শ্রেণির দ্বিতীয় শ্রেণির (কোনও ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণির) এখন যা ভাড়া, তা প্রায় সেই রুটের বিমানভাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। ফলে যাঁদের বাতানুকূল শ্রেণিতে যাওয়ার আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে, তাঁরা বেসরকারি সংস্থার ট্রেনে বেশি ভাড়া দিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে সম-দামে বা সামান্য বেশি ভাড়া দিয়ে বিমানে যাবেন। তাই শেষ পর্যন্ত বেসরকারি সংস্থাগুলি বিনিয়োগে উৎসাহী হয় কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে রেল মন্ত্রকের একাংশে। তবে রেল ইউনিয়নগুলি আগামী দিনে ওই বেসরকারিকরণ নীতির বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy