Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

বাবা-মা জেলে, মানসিক সমস্যা ১৪ মাসের মেয়ের

উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বেনিয়া বাগে গত ১৯ ডিসেম্বর সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন আর্যার বাবা রবি শঙ্কর এবং মা একতা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২৮
Share: Save:

ঘুমের মধ্যেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে ছোট্ট আর্যা। তার পরেই চোখ খুলে মায়ের খোঁজ। মাকে দেখতে না-পেয়ে প্রবল কান্না শুরু করে দিচ্ছে ১৪ মাসের এই শিশুকন্যাটি। তখন তাঁকে সামলানো রীতিমতো দুরূহ হয়ে পড়ছে পরিজনের। বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন আর্যার ক্রমশ মানসিক সমস্যাও তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। গত ১০ দিন ধরে জেলে আর্যার বাবা-মা। অপরাধ, তাঁরা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বেনিয়া বাগে গত ১৯ ডিসেম্বর সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন আর্যার বাবা রবি শঙ্কর এবং মা একতা। ওই দিনই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় একটি আদালত তাঁদের জামিনের আর্জি গত ২৩ ডিসেম্বর খারিজ করে দিয়েছে।

টানা দশ দিন ধরে মা-বাবাকে ছাড়াই রয়েছে আর্যা। যত দিন যাচ্ছে, ১৪ মাসের নাতনিকে সামলানো তত কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন আর্যার ঠাকুরমা শীলা তিওয়ারি। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা-মাকে গ্রেফতার করা পর থেকে ও ঠিক মতো ঘুমোতে পারছে না। এখনও মায়ের দুধ খায় তো, তাই ঘুমোনোর সময় মাকে খোঁজে। অনেক কষ্টে ঘুম পারাতে পারলেও, ঘুমের মধ্যে জেগে উঠে একতা-কে খোঁজে। তখন সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে।’’ একটু থামলেন শীলা। ‘‘আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি মা কাজে গিয়েছে, এখনই চলে আসবে। কিন্তু মিথ্যে বলে কত ক্ষণ ভুলিয়ে রাখা যায়’’, হতাশা ঝরে পড়ে ঠাকুরমার গলায়।

আরও পড়ুন: পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব উদ্ধবের ছেলেকে

আর্যার পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা হলেও বাবা-মাকে খুঁজতে থাকে শিশুটি। আর্যার পিসি দেবাদ্রিতার কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমি ওর খুব কাছের। আমার কাছেই সবসময় থাকে। কিন্তু আমি তো মায়ের বিকল্প নই। এক-দেড় ঘণ্টা পর পরই বাবা-মাকে খুঁজতে থাকে।’’ ঘুম পাড়ানোর মতোই ছোট্ট শিশুকে খাওয়ানোও বড় সমস্যার। ঠাকুরমা জানালেন, নাতনির খাওয়া-দাওয়াও কমে গিয়েছে। খেতে চায় না। গত এক সপ্তাহে আর্যার ওজনও কিছুটা কমেছে। দেবাদ্রিতা বলেন, ‘‘অনেক সাধ্যসাধনা করে দুধ, বিস্কুটের মতো কিছু খাওয়াতে পারি। বাইরে বেড়াতে নিয়ে যাই। অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলে। কিন্তু ওর মনে অবস্থাটা বুঝতে পারি।’’

বাবা-মায়ের অনুপস্থিতি আর্যার মনেও প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন শিশু মনস্তত্ত্ববিদেরা। এক মনস্তত্ত্ববিদের কথায়, ‘‘যে কোনও শিশুর অবলম্বন তার বাবা-মা। তাঁদের সঙ্গে যদি দীর্ঘ সময় দূরত্ব তৈরি হয়, তা হলে শিশুরা অ্যাকিউট ইমোশনাল ট্রমায় আক্রান্ত হতে পারে। আর্যার মানসিক অবস্থাও সে দিকে যেতে পারে।’’ ১৪ মাসের শিশুর পরিজনেরা এখন তাকিয়ে ১ জানুয়ারির দিকে। ওই দিনই দায়রা আদালতে রবি শঙ্কর-একতার জামিনের আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা।

অন্য বিষয়গুলি:

CAA NRC Uttar Pradesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy