রামলীলা ময়দানে সভার প্রস্তুতি দেখছেন মুকুল রায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েন। মঙ্গলবার রমাকান্ত কুশওয়াহার ছবি।
নেত্রী হাজির রাজধানীতে, হাজির নেতাও। রাত পোহালেই ঐতিহাসিক রামলীলা ময়দানে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক নয়া জুটির আনুষ্ঠানিক ইনিংস শুরু।
মঙ্গলবার সন্ধে। সাউথ অ্যাভিনিউয়ে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিসের সামনেটা তখন ভিড়ে সরগরম। ওই ভিড়ে নাকি আসনপ্রার্থীও রয়েছেন বহু । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়িটা ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পরেই কাড়া নাকাড়া-সহ একটা দল এসে পৌঁছল। এঁরা অণ্ণা হজারের সমর্থক, আসছেন মথুরা থেকে। শুরু হল উদ্দাম নাচ আর পেঁড়া বিতরণ!
তৃণমূল নেত্রী এ সব কতটা নজর করলেন, জানা নেই। তিনি আগাগোড়াই তুমুল ব্যস্ত। জাতীয় দল হিসেবে তৃণমূলকে মেলে ধরে আগামী সরকারের অন্যতম নির্ধারক শক্তি হয়ে ওঠাই তাঁর পাখির চোখ (যদিও অণ্ণা তাঁকে যোগ্যতম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীরই শংসাপত্র দিয়েছেন)। তাই রামলীলার প্রস্তুতির হাল-হকিকত যেমন খোঁজ নিচ্ছেন, তেমনই ইতস্তত জট দেখা দিলেই দ্রুত সমাধানে নেমে পড়ছেন।
যেমন বিনোদ বিন্নির ব্যাপারটা। পূর্ব দিল্লিতে আপ-এর প্রার্থী রাজমোহন গাঁধীর বিরুদ্ধে বহিষ্কৃত আপ নেতা বিন্নির দাঁড়ানোর যখন সব ঠিকঠাক, এমন সময়ে বেঁকে বসেছিলেন তিনি। গত কাল কিছুটা নাটকীয় ভাবেই বিন্নি জানিয়ে দেন, তৃণমূলের হয়ে লড়বেন না। সূত্রের খবর, অণ্ণার আশ্রয়ে তাঁর যাওয়া রুখতে সক্রিয় হয়েছিল বেশ কিছু শিবির। আজ মমতা এসেই বিন্নির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই মেঘ কেটেছে। তৃণমূলের টিকিটে লড়বেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিন্নি। এ ছাড়া, দক্ষিণ দিল্লি থেকে বর্ষীয়ান অভিনেতা বিশ্বজিৎকে দাঁড় করানো নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। মমতা চান বিশ্বজিৎ দাঁড়ান। কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্য ভোটের ধকল কতটা নিতে পারবে, সেটাও ভাবাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে।
পশ্চিমবঙ্গের বাইরে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি অবশ্য আগাগোড়াই অণ্ণা হজারে তথা তাঁর টিমের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন মমতা। একমাত্র বিন্নির মতো সমস্যা হলে তখনই সক্রিয় হচ্ছেন, প্রয়োজনমতো টিম-অণ্ণাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। আজ অবশ্য আর অণ্ণার সঙ্গে বৈঠক হয়নি মমতার। প্রবীণ নেতার দিল্লি পৌঁছতে বেশ রাত হয়। তাঁর সঙ্গে দেখা করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।
আগামিকাল রামলীলায় কী হবে?
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, সভা শুরু হবে গানের অনুষ্ঠান দিয়ে। ১১টা থেকে ১২টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। মমতার সঙ্গে এসেছেন গায়ক নচিকেতা। মমতাকে নিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় যে থিম-সং বাঁধা হয়েছে, তার হিন্দি সংস্করণটা গাইবেন তিনিই। রাজ্যসভার তারকা সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তী সভায় থাকবেন কি না, তা নিয়ে প্রবল কৌতূহল। যদিও কোনও পাকা খবর এখনও নেই।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর মূল সভা শুরু। তৃণমূল সূত্রের খবর, অণ্ণাকে পাশে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জনবিরোধী নীতি এবং দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে সংস্কারের ডাক দেবেন মমতা। অণ্ণার সতেরো দফা কর্মসূচির পাশাপাশি তৃণমূলের নিজস্ব কিছু কর্মসূচির কথাও বলবেন। তবে এক-একটি আসন ধরে বিভিন্ন রাজ্যের কোনও প্রার্থী-তালিকা ওই মঞ্চ থেকে ঘোষণা করবেন না মমতা। বরং অণ্ণার সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক বার্তা দেওয়াটাকেই তিনি আগামিকাল প্রাধান্য দিচ্ছেন।
কেউ কেউ বলছেন, বহু যুদ্ধের পোড়খাওয়া নেত্রী বিলক্ষণ জানেন যে, কেন্দ্রে তাঁর শক্তি যত বাড়বে, আখেরে রাজ্যের দাবি আদায়ে তত বেশি চাপ বাড়ানো যাবে। রেলমন্ত্রিত্ব ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে রাজ্যে ফিরে যাওয়ার পরেও কেন্দ্রে নিয়মিত দরবার চালিয়ে গিয়েছেন মমতা। তাঁর নির্দেশে সংসদের ভিতরে-বাইরে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন জারি রেখেছেন তৃণমূল নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের অধিকার যাতে খর্ব না হয়, তা নিয়েও মমতা জেহাদ ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে। এ বার সরাসরি ভোটের মঞ্চে সেই আক্রমণ শানাতে চলেছেন তিনি।
দিল্লির জনসভা সেরে পরশু কলকাতায় ফিরছেন মমতা। তার পর আগামী ২০ তারিখ মমতা-অণ্ণার যাওয়ার কথা গুজরাতে। মোদী-রাজ্যে দাঁড়িয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মমতা যদি তোপ দাগেন, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছেও সদর্থক বার্তা যাবে বলে মনে করছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে জাতীয় ভাবমূর্তি তৈরি করতে গিয়ে রাজ্যের প্রচারের কোনও ক্ষতি হোক, সেটাও চান না মমতা। তাই বিভিন্ন রাজ্যের প্রচারসূচি মাঝেমধ্যেই কাঁটছাঁট করছেন তিনি।
আপাতত অবশ্য শুধুই ‘দিল্লি চলো’। ব্রিগেডের মঞ্চে সেই ডাকই তো দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy