ভ্রমণরসিকদের পৌষ মাস পৌষালী আমেজে খানিক কুয়াশা ও মৃদু রোদ্দুরের আলতো সোহাগ। বছরের শুরুতেই শীতকালটার একটা আলাদা মাধুর্য আছে। নতুন বছর শুরুর সঙ্গেই গড়পরতা ভ্রমণবিলাসীর মন উদাস। শীতকাল মানে সত্যিই পৌষ মাস। হররা তোলা খুশিয়াল মনটা তখন শীতের আলসেমি গা-ঝাড়া দিয়ে পিকনিক আর বেরিয়ে পড়ার তালাশে তত্পর। মন উসকানি দেয় জাঁকিয়ে শীতকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ার অমোঘ আকর্ষণকে। নিদেনপক্ষে কাছেপিঠে চলে যেতে। দূরভ্রমণও হতে পারে, তবে সে সব ক্ষেত্রে আগেভাগে টিকিট বুকিং, হোটেল ঠিক করা, গাড়ি বুক করা কিংবা ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট হাতড়ানো—হাজারো ঝক্কি।
কুয়াশার লাজুক আলোয়ান মোড়া অপার আমন্ত্রণ তখন অনন্ত নিসর্গ পাহাড়ের কাছে। স্নিগ্ধ মনোরম সাগরতটের কাছে। আদিম রহস্য-রোমাঞ্চ ঘেরা সবুজ অরণ্যের কাছে। রাজকীয় ইতিহাসঋদ্ধ স্থাপত্যের সান্নিধ্যে। হিমেল ছলাকলায় মায়াবী শীত ডাকে, ‘আয়’...! সদ্য বিগত বছরের ধুলো উড়িয়ে যাওয়া একঘেয়ে ক্লান্ত মনটা চেনা গণ্ডি পেরিয়ে একটু হারাতে চায়। শীতার্ত অলস বেলায় জানুয়ারি মানেই রসেবসে কাটানো। জানুয়ারি মানেই ‘পিকনিক স্পেশাল’। মুম্বই মহানগরে হু-হু কাঁপন দিয়ে চাদরমুড়ি দেওয়ার শীত আসে না জেনেও বেড়াতে যাওয়ার জন্য মন উচাটন হয়। কমলালেবু, মিঠে রোদ্দুর, বাড়িতে শখ-শৌখিনতায় বানানো পিঠেপুলি, কড়াইশুঁটির কচুরি, ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখে রঙিন স্কার্ফ, শ্রাগ, হালকা সোয়েটার, দেদার মস্তি ও পায়ের তলায় নড়বড়ে সর্ষে।
মুরুদ-জঞ্জিরার ইতিহাসকথায়...
হিমেল দুপুরে ইতিহাস খুঁড়ে আরও এক ভ্রমণগল্প হতেই পারে আরবসাগরকূলে মুরুদ নামের অপরূপ অঞ্চলটি। মুরুদ আসলে মত্স্যজীবীদের নিরিবিলি গ্রাম। এখানে অতীতের নবাবদের স্মৃতিধন্য রাজপ্রাসাদটি আজও গরিমার স্বাক্ষর নিয়ে অবস্থান করছে। ভারত সরকার রাজপ্রাসাদটিকে সংরক্ষণ করে রেখেছে। মুরুদ এলাকায় ‘কোটেশ্বভরি’ ও ‘দত্তা’ নামে জাগ্রত দুটি মন্দির রয়েছে।
মুরুদের রাজাপুরী থেকে ফেরি নৌকায় সাগরঢেউয়ে দুলতে দুলতে ও স্থানীয় গাইডের মুখে দুর্গের বর্ণনা ও ইতিহাস শুনতে শুনতেই মিনিট দশেকের ব্যবধানে পৌঁছে যাওয়া যায় জঞ্জিরা দুর্গের প্রবেশপথে। ঘাট থেকে কিন্তু প্রবেশতোরণটি একেবারেই বোঝা যায় না। নৌকো একদম দুর্গের কাছে এসে পড়লে প্রবেশতোরণটি দৃষ্টিগোচর হয়। জলদস্যু ও স্থানীয় শত্রুর মোকাবিলা করার জন্যই এমন অদ্ভুত স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হয়েছিল দুর্গের প্রবেশদ্বারটি। সাগরজলের মাঝে ডিম্বাকৃতি জঞ্জিরা দুর্গটি ছিল জলসেনাদের ঘাঁটি। আরবি শব্দ ‘জঞ্জিরা’ মানে হল দ্বীপ। নীল সাগরজলের মাঝ-বরাবর পাথুরে জমিতে দুর্গের নয়নশোভন রূপ ও স্থাপত্য অদ্ভুত ব্যঞ্জনা এনে দেয়। মুরুদ থেকে কিঞ্চিত্ পাহাড়ি পথ ধরে রাজাপুরী ফেরিঘাট যাওয়া-আসার পথে দুর্গটির অভিজাত রূপ ক্যামেরায় টুকে রাখার মতোই! স্থানীয়রা এই প্রাচীন দুর্গটিকে বলেন ‘অজিনক্যা’। মরাঠি শব্দটির বাংলা তর্জমা করলে ‘অজেয়’। ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত জঞ্জিরা দুর্গটি ক্ষয়িষ্ণু প্রাসাদ ও রাজসিক বংশমর্যাদার ঐতিহ্যচিহ্ন নিয়ে বেবাক পড়ে রয়েছে। ইতিহাসের ভাঁজে ভাঁজে ছুঁয়ে আছে বিগত বহু যুদ্ধের সাক্ষী জঞ্জিরা দুর্গ। দুর্গের চৌহদ্দিতেই মিষ্টি জলের কুয়ো, ভগ্ন প্রাসাদ, নজরমিনার, অট্টালিকা, কাঠের পেল্লায় ভারী নকশাদার দরজা, পাথরের প্রশস্ত সোপান—কত কী! স্থানীয় মুসলিম গাইডু রোজগারের আশায় পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করে যাবে জঞ্জিরা দুর্গের তাবত্ স্মৃতিকথা। জলজ মজলিসে, শীত-সফরে, ইতিহাসকথায় কেটে যাবে মুম্বইয়ের উপকণ্ঠে মুরুদ-জঞ্জিরার চূড়ান্ত ভ্রমণ-আখ্যান!
প্রাচীনতার আস্বাদ: এলিফ্যান্টা
কবোষ্ণ রোদের আলতো সোহাগে মুম্বই উপকূল থেকে ফেরিযাত্রায় পৌঁছে যাওয়া যায় আরবসাগরের ঢেউ-ছলকানো এলিফ্যান্টা গুহায়। প্রাচীন কালে এর নাম ছিল ‘ঘরাপুরিচি লেনি’। এর অর্থ হল ‘গুহার শহর’। পর্তুগিজ জমানায় ১৫৩৪ সালে অঞ্চলটি আবিষ্কৃত হয়। প্রায় আড়াই কিলোমিটার ব্যাপ্ত দুটো পাহাড় নিয়ে ৫০০ ফুট উচ্চতার এলিফ্যান্টা কেভ অনেকটা হাতির মাথার মতো। গুহাটি খুবই বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল। ১৯৭০ সালে গুহাটি নতুন করে সংস্কার করা হয় এবং এখন এটি ইউনেসকো-র ‘বিশ্ব বিরাসত্ স্থল’ অর্থাত্ ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ তকমায় ভূষিত হয়েছে। সমুদ্রের জলে তোলপাড় তুলে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া-র জেটি থেকে লঞ্চ এগোতে থাকবে। ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকবে মুম্বইয়ের স্কাইলাইন। জল থেকে মাথা তুলে রয়েছে আরও কিছু পাথুরে চাতাল। মিঠে আমেজ নিয়ে সাগরের জোলো বাতাসের ঝাপটা গায়ে মেখে অচিরেই পৌঁছে যাওয়া এলিফ্যান্টা দ্বীপের পাদদেশে।
দেবাদিদেব মহাদেবকে উদ্দিষ্ট করে পঞ্চম থেকে অষ্টম শতকে মোট সাতটি গুহা নির্মিত হয়েছিল। পুরো পাহাড়টাই পোক্ত ব্যাসল্ট পাথরে নির্মিত। দুটি শাখা আছে এলিফ্যান্টা গুহার। প্রথম ৫টি হল হিন্দু গুহা এবং বাকি দুটি বৌদ্ধ গুহা, যাকে বৌদ্ধ মতে ‘স্তূপ’ বলা হয়। আরবসাগরের দিকে মুখ ফেরানো প্রথম গুহাটি প্রায় ১.৬ কিমি প্রশস্ত। সারি সারি থাম ও ছড়ানো দালান। দেওয়ালে নানা মূর্তি। এই মহামূর্তি প্যানেলে মহাদেবের ‘ত্রিমূর্তি’ খোদাই করা। মহাদেবের এই ত্রিমূর্তি হল একাধারে ‘ভৈরব’ অর্থাত্ প্রলয়, ‘তপ্তপুরুষ’ অর্থাত্ স্থিতি বা রক্ষাকারী এবং ‘বামদেব’ অর্থাত্ সৃষ্টির প্রতিভূ। সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়স্বরূপ শিবের পাষাণপ্রতিমা হিন্দুদের প্রার্থনাস্থল ছিল এক সময়ে। পুরো অঞ্চল জুড়ে শিব-পার্বতীর নানা পৌরাণিক কাহিনি পাথরে খোদাই করা রয়েছে। রয়েছে শিবের ‘অর্ধনারীশ্বর’ মূর্তি ও ‘গঙ্গাধর’ মূর্তি। এলিফ্যান্টা গুহার টিকিটঘরের কাছেই ছোট জাদুঘরে এই প্রাচীন গুহার ইতিকথা নথিবদ্ধ করা আছে।
বাকি গুহাগুলিও সামান্য এগিয়ে। ডান পাশে বাঁক নিয়ে একে একে ২, ৩, ৪, ৫ নামাঙ্কিত গুহা সমুদয়। দ্রষ্টব্য অবশ্য তেমন কিছু নেই। প্রাচীনতার ছাপ এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এলিফ্যান্টা গুহা থেকে ফিরতিপথে জেটির দিকে না নেমে, বাঁ-হাতি পথে কিছুটা সময় হেঁটে গেলে দেখা যাবে ‘ক্যানন হিল’। পর্তুগিজ জমানায় এখানে কামান বসানো ছিল। বছরের গোড়ায় ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে এই গুহাভ্রমণ এনে দেবে প্রাচীনতার আস্বাদ।
মিতালি জল-পাতায় আলিবাগ সৈকত...
অনেক কথা, অনেক সমুদ্রগান স্মৃতিমেদুর করে তুলতে পারে আলিবাগ সৈকতে ঢেউয়ের সঙ্গে গল্প করতে করতে। নোনা হাওয়া গায়ে মাখতে মাখতে স্মৃতির ঝুলি থেকে বেরিয়ে আসবে সমুদ্রগান। দূরের পর্দায় তখন অতীত গৌরবের সাক্ষ্য নিয়ে কোলাবা দুর্গ। বেলাভূমি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সাগরের মাঝে ছত্রপতি শিবাজি নির্মিত দুর্গটি ব্রিটিশ-পর্তুগিজ নৌ-সেনাদের ওপর নজরদারি ও জলদস্যুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য স্থাপিত হয়েছিল। জোয়ার ভাটার যাওয়া-আসা চলে আলিবাগ সৈকতে। ভাটার সময় জল দূরে সরে গেলে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে দুর্গে পৌঁছে যাওয়া যায়। আবার জোয়ারের সময় নৌকোয় যাতায়াতের প্রয়োজন হয়।
জাঁকিয়ে শীত না পড়ুক, অন্তত কমলালেবুর রসের মতো ফিনফিনে রোদে গা ভিজিয়ে নগর-কোলাহল দু’হাতে সরানো যায় আলিবাগ সৈকত চত্বরে। জল-রং ছড়িয়ে নীল সাগরজল জোয়ারের সময় এক্কেবারে ছাপিয়ে আসে পাড়ে। আবার ভাটার টানে সরে যায় একছুটে। আলিবাগ সৈকত জুড়ে আরবসাগরের দুষ্টুমি চলতেই থাকে।
মরাঠি শব্দ ‘আলিচা বাগ’ অর্থাত্ ‘আলিসাহেবের বাগান’। এক সময়ে এখানে সম্ভ্রান্ত ও সচ্ছল বেনে ইসরাইলি জিউস আলি-র নিজস্ব বাগানে প্রচুর আম ও নারকেল গাছ ছিল। সেই থেকেই স্থানীয়দের কাছে ‘আলিচা বাগ’ শব্দটি অপভ্রংশ হয়ে ‘আলিবাগ’ হয়ে গেছে। মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার কোঙ্কন উপকূলের আলিবাগ লাগোয়া গ্রাম রামনাথ। কাছেপিঠেই রেওয়ান্দা, নাগোল, কিহিম, চাওল, আকশি, থাল, আওয়াস, ভারসি। এই আটটি অঞ্চলকে একই সুতোয় বেঁধে বলা হয় ‘অষ্টগড়’।
যেহেতু তিন দিক সাগরজলে ঘেরা, তাই আলিবাগকে পর্যটকরা—মূলত মুম্বইয়ের পর্যটকরা আদর করে বলেন ‘মহারাষ্ট্রের গোয়া’। কিছু দূরে দূরেই আরও অনেকগুলি নিরিবিলি সৈকত আরবসাগরের এজমালিতে এন্তার সৌন্দর্য আর লাবণ্য নিয়ে পড়ে আছে কোঙ্কণ উপকূল জুড়ে। ঐতিহাসিক শহর আলিবাগ।
বাঁধনহারা জলকেলির বিনোদন-মেজাজের সঙ্গে ইতিহাসও ছড়িয়ে আছে আলিবাগের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তবে তার গভীরে ঢুকতে না চাইলেও অন্তত এই ভেবেই এখানে সম্মোহিত কিছু কাল কাটানো যায়—এই ভাল, এই নির্জনে ভেসে যাওয়া সমুদ্র বিহনে!
জুহু সৈকতে, ঘোর-লাগা মধ্যস্থতায়...
অথৈ জলের বুকে নিরবধিকাল অনন্ত স্রোতের আনাগোনা। সমুদ্রের পাশে পাশে পথ। মুম্বই মহানগরের স্বভাবসুলভ ব্যস্ততার মাঝেই জনপ্রিয় জুহু বিচ। দিগন্তের ক্যানভাসে এক পরিপূর্ণ অপরাহ্ণ ক্রমশই ডেকে আনে এক ভরাট সন্ধ্যাকে। ভিড় বাড়ে। মুম্বইকরদের বড়ই পছন্দের জায়গা জুহু সৈকত। এমনকী, বিশ্বের বৃহত্তম বিচ-গুলির মধ্যে নিজস্ব স্থান করে নিয়েছে জুহু। পর্তুগিজ আমলে এর নাম ছিল ‘জুভেম’। স্নিগ্ধ সাগরবেলায় ধীর লয়ে আছড়ে পড়ছে নিরবচ্ছিন্ন ঢেউ। অখণ্ড অবসরে সাগরের মায়াবী মুগ্ধতা। সমুদ্রমুখী কাফের স্টলে বসে শীতসকালে ধোঁয়া-ওঠা গরম কফির কাপে চুমুক দিয়ে সমুদ্রের লাবণ্য আর ব্যাপ্তি উপভোগ করা। নিজেকে হারানো, আবারও খুঁজে পাওয়া। সব সময়ে ভিড় ঠাসা জুহু। নানা বিনোদনী পশরায় সেজে থাকে সৈকতভূমি। মুম্বইয়া রকমারি খাবারদাবারের এলাহি হাতছানি। পানিপুরি, পাপড়ি চাট, ভেলপুরি, সেঁওপুরি, পাওভাজি, মসালাপাও, মিশেল পাও, ভুনা পনির। এ ছাড়া মকাইদানাও। নানান ফলের জ্যুস, ফালুদা, মিল্ক শেক, কুলফি, ক্যারামেল কাস্টার্ড, ভ্যানিলা উইথ হট চকোলেট ইত্যাদির লোভনীয় ককটেল! জুহু চৌপট্টিতে বালুকাবেলায় পায়ে পায়ে হেঁটে বেড়ানো নির্মল খুশিতে। ভোরসকালে জুহু থাকে স্থানীয়দের জগিং, প্রাণায়াম, দৌড়নোর হেফাজতে। বেলা গড়াতেই পর্যটকদের ভিড়। এখন তো শীতের মিঠে রোদ্দুর গায়ে মেখে বেশ জমে যাবে জুহু পর্ব। বালির প্যালেটে আরবসাগরের নীল জলের সীমানা। হাতের নাগালে মায়াময় সাগরবেলা। সফেদ বালির বুকে ঢেউয়ের খোলস ভাঙতে ভাঙতে বালুতট ছেড়ে ফিরে যাচ্ছে ঢেউ একই মসৃণতায়।
মিনি গোয়া নাগাঁও সৈকত...
এক দিনের টুকরো সফরে সাগরঘেঁষা কোনও স্থান হলে জমে ওঠে বেশ। তেমনই হল আরবসাগরের কোলে নাগাঁও বিচ। পর্যটকেরা অবশ্য এই সৈকতের এক আহ্লাদী নাম দিয়েছেন: ‘মিনি গোয়া—গোয়ালিবাগ’। আদিগন্ত স্ফটিকস্বচ্ছ জলরাশি। অপূর্ব সব কটেজ। গাছগাছালিতে ছাওয়া ‘বনীকরণ’ এলাকাটি নাগাঁও বিচে খুব রোমান্টিক। দূরত্ব তো আর বেশি কিছু নয়। মুম্বই থেকে সড়কপথে ১০০ কিলোমিটার আর মুম্বইয়ের গেট অব ইন্ডিয়া থেকে সাগরপথে ৬০ কিলোমিটার। ভাটার টানে জল যখন অনেকটাই দূরে সরে যায়, চোখে পড়ে জেলেদের মাছ ও কাঁকড়া ধরা। এখানে এসে সুস্বাদু ও মুখরোচক সাগরপারের খাবারের আস্বাদন নেওয়া যেতেই পারে। বর্ষা মরসুমের কিছু সময় ছাড়া সৈকতে হরেক রকম ওয়াটার স্পোর্টসেরও ব্যবস্থা আছে। জেট স্কাই রাইড, বেনানা রাইড, প্যারাসাইক্লিং, বাম্বার টিউব রাইড এমন মজাদার হুল্লোড়ে মেতে থাকেন নাগাঁও সৈকতে বেড়াতে আসা তামাম পর্যটক। বেলাভূমি যথেষ্ট সমতল হওয়ায় নাগাঁও সৈকত সমুদ্রস্নান ও জলকেলির জন্য উপযুক্ত। কিছুটা সময় থাকলে বিক্রম ইস্পাত চত্বরে বিড়লা মন্দিরও দেখে আসা যায়। দূর থেকেই নজরে আসবে সাদা গ্র্যানাইট পাথরের মন্দিরচূড়া। রাধাকৃষ্ণ, দুর্গা, শিবলিঙ্গ, শিবপার্বতীর সমাহারে সাজানো মন্দির। ‘স্মল হ্যামলেট’ বিশেষণে ডাকা হয় নাগাঁও সৈকতকে। হালকা ভিড়—যেখানে একাকী হওয়া যায় নাগরিক জীবন থেকে মুক্তি-কামনায়। পূর্ণতর চিত্রায়ণের মতো চোখে পড়বে জেলেদের সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়া ধরার চিত্রিত উপমা।
লোনা মাদকতা, কিহিম সৈকত...
প্রকৃতি ও প্রেমের পশরা সাজিয়ে কিহিম সৈকত। শীত শীত অবেলায় দিঘল হয় প্রকৃতির নিজের হাতে গড়া কিহিম সৈকত। অপূর্ব মনোলোভা প্রকৃতি চার পাশে। চোখ জুড়িয়ে যায়। মুম্বই থেকে মোটে ১৩৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কিহিম সৈকতের স্বর্গীয় সৌকর্ষ। বহু দূর পর্যন্ত গড়িয়ে গেছে সাগরজলের ভরা সংসার। মিহি বালুতট। আর এক পাশে নারকেল ও অন্যান্য গাছগাছালির হঠাত্ হঠাত্ হিমেল বাতাসে ঝরাপাতার সংলাপ। স্থানীয় এলাকাবাসীদের ঘরকন্না নিয়ে শান্ত গ্রাম। শুধু মাত্র স্বপ্নেরাই জেগে ওঠে। ঘুম পায় কিহিম-সৌন্দর্যে জুড়ে আসা চোখেও। কেবল সৈকত ধরেই মনমৌজি একলা অথবা দোকলা হেঁটে চলা। সাগরের অবিরাম তরঙ্গ-লহরী ছাড়া আর কি কোনও শব্দ নেই এখানে? ওই যে সবুজ ও পাশে—ওখানে বিরল প্রজাতির কিছু প্রজাপতির দেখা মেলে। পাখিরও। আর রঙিন একমুঠো গাঢ় সূর্যাস্ত। একটু একটনু করে দিনমণি বিদায় নিতেই আকাশে ভেসে ওঠে চাঁদ। সাগরজলে চাঁদের ছায়া দোল খায়। যেন ভেলকি দেখায়। বিস্তীর্ণ কিহিম তটভূমি, চাঁদভেজা সাগরজল, সাগরের বুকে জেগে থাকা সৈকত—সবই কেমন মায়া বলে মনে হয়!
জলছবি এঁকে যায় ঢেউ: মান্ডয়া সৈকত
মান্ডয়ার নির্জন সাগরতটে আপনমনে খেলে যায় ঢেউ। মিহি বালুতটে জলছবি এঁকে দিয়ে ফিরে যায় তারা। অনর্গল ভাঙা-গড়ার শব্দ আর নোনা হাওয়ার কানাকানিতে একটু উষ্ণতার পরশ নিয়ে মান্ডয়া সৈকত। মুম্বইয়ের নগরজীবন থেকে একটু মুক্তি খোঁজার ঠেক মান্ডয়া সৈকতে এসে ‘কী যে করব’ বুঝে ওঠাই দায়! নীল আকাশ মিশেছে সাগরজলে, তাতে মেঘের কারুকাজ সরিয়ে তির্যক রোদের বিচ্ছুরণ। জোয়ার-ভাটার খানিক খেলা বালিয়াড়ি জুড়ে। শীতসকালে পায়ের তলার অবকাশ—সৈকত ধরে হেঁটে যেতে মন্দ লাগে না। প্রতিটি স্রোতের শিহরন ছিনিয়ে নিতে পারে প্রকৃতি ও নির্জনতার ভাষা।
মুম্বইয়ের গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া-র মান্ডয়া জেটির জন্য নির্দিষ্ট ফেরি সার্ভিস বোটে চলে আসা যায় মান্ডয়া সৈকতে— রোজকার জীবন থেকে আলগা আয়াসে বিন্দু বিন্দু আলো মেখে এই শীতে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy