Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

মনমোহন বিদায় ভোজ রাহুলহীন, বিতর্ক

যে মানুষটিকে প্রধানমন্ত্রী পদের দিকে তাঁর মা সনিয়া এগিয়ে দিয়েছিলেন দশ বছর আগে, সেই মনমোহন সিংহের সম্মানে দেওয়া নৈশভোজে অনুপস্থিত রাহুল গাঁধী। তাঁর এই না-থাকা নিয়ে দলের মধ্যেই অনেকে ভুরু কুঁচকেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০৩:১১
Share: Save:

যে মানুষটিকে প্রধানমন্ত্রী পদের দিকে তাঁর মা সনিয়া এগিয়ে দিয়েছিলেন দশ বছর আগে, সেই মনমোহন সিংহের সম্মানে দেওয়া নৈশভোজে অনুপস্থিত রাহুল গাঁধী। তাঁর এই না-থাকা নিয়ে দলের মধ্যেই অনেকে ভুরু কুঁচকেছেন। বলেছেন, কিছু দিন আগেই মনমোহন সরকারের সঙ্গে রাহুলের মতভেদ ঘিরে বিতর্ক হয়েছিল। তার পরে মায়ের দেওয়া এই নৈশভোজে হাজির না থাকলে সেটা যে এক অর্থে অসৌজন্যেরই সামিল, সেটা কি তিনি বোঝেন না?

কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর দলীয় দফতর সূত্রে অবশ্য বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, নৈশভোজে যে থাকতে পারবেন না, সেটা তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গত ১০ তারিখই জানিয়ে দেন। তাই এর মধ্যে অসৌজন্য খোঁজাটা অর্থহীন। সম্ভবত রাহুল এ দিন দিল্লির বাইরে রয়েছেন। আগামিকাল তিনি আবার দিল্লি ফিরে দলীয় কাজেও যোগ দেবেন।

কংগ্রেসেরই একটি সূত্র বলছে, মনমোহনকে সম্মান দেখাতে নৈশভোজ আয়োজনের পিছনে সনিয়ার সঙ্গে রাহুলের মস্তিষ্কও ছিল। কারণ, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান জানানো হয়নি বলে বিতর্ক রয়ে গিয়েছে। এর জন্য কংগ্রেস-বিরোধীরা আঙুল তোলেন মূলত গাঁধী পরিবারের দিকেই। এ বার তাই সনিয়া-রাহুল চাননি, ভবিষ্যতে মনমোহন সিংহকে নিয়েও তাঁদের পরিবারের দিকে এমন অভিযোগ উঠুক। তা ছাড়া নরসিংহ রাওয়ের সঙ্গে মনমোহনের একটি মূলগত তফাতও রয়েছে। নরসিংহের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পিছনে সনিয়ার প্রত্যক্ষ অবদান ছিল না। মনমোহনের ক্ষেত্রে কিন্তু ঘটনাটা উল্টো। কংগ্রেস সভানেত্রী নিজেই তাঁকে রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যান এবং তাঁর নামই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুপারিশ করেন। এটা ঠিক, গত দশ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সনিয়ার সঙ্গে মনমোহনের মতভেদ তৈরি হয়েছে। কখনও তা প্রকাশ্যে এসেছে, কখনও দলীয় স্তরে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। যা নিয়ে বিরোধীরা এখনও কংগ্রেস নেতৃত্বকে খোঁচা দেন। এমনকী, এই অভিযোগও ওঠে, ক্ষমতার দু’টি কেন্দ্র থাকার ফলে উন্নয়নের কাজে গতি আনতে পারেনি সরকার। নীতিপঙ্গুত্বে আটকে গিয়েছে কাজ।

তবে সনিয়ার সঙ্গে মনমোহনের মতভেদ বা বিবাদ কখনও বন্ধ দরজার বাইরে সে ভাবে দেখা যায়নি, যা রাহুলের ক্ষেত্রে হয়েছিল। সম্প্রতি দাগি জনপ্রতিনিধিদের রেহাই দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আনা একটি অর্ডিন্যান্সকে ঘিরে রাহুল-মনমোহন মতভেদ প্রকাশ্যে এসে পড়ে। এবং তার পিছনে রাহুলই মূল কারণ। মনমোহন তখন বিদেশ সফরে। সেই সময় সাংবাদিক বৈঠক করে রাহুল বলেন, “ওই অর্ডিন্যান্স ছিঁড়ে উড়িয়ে দেওয়া উচিত!” এই ঘটনার পরে কেন্দ্র অর্ডিন্যান্সটি ফিরিয়ে নেয় ঠিকই, কিন্তু প্রশ্ন উঠে যায়, প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তাঁর সরকারের আনা অর্ডিন্যান্স সম্পর্কে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি এই কথা বলে কি মনমোহনেরই মর্যাদাহানি করলেন না? প্রধানমন্ত্রী পরে অবশ্য বিষয়টিকে সহজ করে দেখানোর চেষ্টা করেন। এ দিনও রাহুলের অনুপস্থিতির ফলে বিতর্ক হতে পারে ধরে নিয়েই তাঁর দফতর বিবৃতি প্রকাশ করে। তবু সেই বিতর্ক আটকানো যায়নি।

সনিয়া অবশ্য ব্যবস্থার ত্রুটি রাখেননি। দশ জনপথে ডাকা এই নৈশভোজে শুধু মৌখিক ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশই নয়, মনমোহনকে একটি মানপত্রও দেওয়া হল দলের তরফে। সেখানে লেখা হল, গত দশ বছর ধরে সরকারকে যোগ্য নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সর্বভারতীয় কংগ্রেস তাঁর প্রতি অসীম কৃতজ্ঞ। দলের ৩৮ জন নেতানেত্রীর সই করা একটি স্মারকও তাঁকে উপহার দেন সনিয়া। হাজির নেতানেত্রীদের অনেকেই মনমোহনের সঙ্গে ছবি তোলেন।

সব মিলিয়ে আবেগের যথেষ্ট উপাদান ছিল অনুষ্ঠানে।

এই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে রাহুল আরও একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। তা হল, যেখানে ভোটের পরে ফলপ্রকাশের আগে সর্বত্র টানটান উত্তেজনা, বিরোধী বিজেপি শিবিরে পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে সরকারে যাওয়ার জন্য ঘুঁটি সাজানোর, সেখানে কংগ্রেস মূল কান্ডারি কেন অনুপস্থিত? দলের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, আগামিকাল দলের সব মুখপাত্রকে নিয়ে নিজের ওয়ার রুমে বৈঠকে বসছেন রাহুল। তা ছাড়া, লালু প্রসাদ ছাড়া অন্য শরিক বা সম্ভাব্য শরিকদের সঙ্গে মা সনিয়াই যোগাযোগ রাখছেন। তাই রাহুলের উপস্থিতি খুব জরুরি নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

farewell party Dr. manmohan singh sonia gandhi rahul gandhi skip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy