Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

অ্যান্টনির তোপ দলের সংখ্যালঘু তোষণকেই

সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি নিয়ে বরাবরই কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। এ বার সেই বিতর্ক মাথা তুলল কংগ্রেসের অন্দরেও। যে সে নন, দলের তোষণের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দশ নম্বর জনপথের অন্যতম আস্থাভাজন এ কে অ্যান্টনি। কেরলের এই বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য, “কংগ্রেস বরাবর ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাস করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৪ ০১:৫৩
Share: Save:

সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি নিয়ে বরাবরই কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। এ বার সেই বিতর্ক মাথা তুলল কংগ্রেসের অন্দরেও। যে সে নন, দলের তোষণের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দশ নম্বর জনপথের অন্যতম আস্থাভাজন এ কে অ্যান্টনি।

কেরলের এই বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য, “কংগ্রেস বরাবর ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাস করেছে। অথচ সংখ্যালঘুদের প্রতি কংগ্রেসের বিশেষ ঝোঁক দেখে সমাজের একাংশ এখন বিভ্রান্ত। যাঁদের মনে সংশয় জেঁকে বসছে যে এই সাবেক দল আদৌ কি আর ধর্মনিরপেক্ষ রয়েছে! যার ফলে কেরলের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্যেও এখন মাথা তুলছে সাম্প্রদায়িক শক্তি।”

অ্যান্টনি নিজে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। তবু যে বার্তা তিনি দলের হাইকম্যান্ডকে দিতে চাইছেন, সেটা বুঝতে কারও অসুবিধে হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কংগ্রেসের উদার ও উচ্চবর্ণের নেতাদের মধ্যে একটা চাপা অসন্তোষ ছিলই। যাঁরা হাইকম্যান্ডের মুখের ওপর বলতে না পারলেও, ঘরোয়া ভাবে বলছিলেন যে, দলের ধর্মনিরপেক্ষতা আসলে সংখ্যালঘু তোষণেরই নামান্তর হয়ে উঠেছে। ঠিক যে রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই রাজনীতি সংখ্যাগুরুদের ভাবাবেগে আঘাত করছে বলেই হয়তো উদার হিন্দু সমাজও এখন কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের এই নেতারা লোকসভা ভোটে দেশ জুড়ে বিজেপির অনুকূলে মেরুকরণের জন্যও সরাসরি দলীয় নীতিকেই দায়ী করছেন।

সংখ্যালঘু তোষণ নিয়ে দলের অন্দরের এই ক্ষোভটাকেই কার্যত আজ সামনে নিয়ে এলেন অ্যান্টনি। এতে কংগ্রেসের ওই নেতারাও বল পেয়েছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মুসলিম নেতারাও। অ্যান্টনি প্রশ্ন তোলার পর, এ ব্যাপারে তাঁরা দলের মধ্যে বৃহত্তর বিতর্কের দাবি তুলছেন।

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সংখ্যালঘু সদস্য আজ বলেন, “কংগ্রেসের এই রোগ নতুন নয়। দলের একাংশ নেতা হাইকম্যান্ডকে এ বিষয়ে বরাবর বিভ্রান্ত করেছেন। এমনকী, দলের কিছু নেতার পরামর্শে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও এক বার তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, “দেশের রসদের প্রথম ভাগ পাওয়া উচিত সংখ্যালঘুদের।” তিনি এ-ও মনে করিয়ে দেন, সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও একাধিক কংগ্রেসশাসিত রাজ্য এবং ইউপিএ সরকার বারবার সংখ্যালঘু সংরক্ষণের জন্য সচেষ্ট হয়েছে। সংখ্যালঘুদের একাংশ এতে খুশি হলেও এর মাধ্যমে কার্যত সমাজের মধ্যে বিভাজনেও উস্কানি দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দর্শনের কারণেই কংগ্রেস ও তার সরকার সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা করতে সব রকম ভাবে সচেষ্ট হবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রকৃত উন্নয়ন ঘটানোর থেকে লোক দেখানো বেশি হয়ে গিয়েছে। এতে সংখ্যালঘুদের আস্থা পুরোপুরি অর্জন করা যায়নি। উল্টে সংখ্যাগুরুদের অনেকেই রুষ্ট হয়েছেন। বড় কথা হল, সংখ্যালঘুদের পক্ষেও এই বিভাজনটা ভাল নয়। কংগ্রেসের এই নেতারা এ ব্যাপারে দিগ্বিজয় সিংহ, রহমান খানদের সমালোচনাতেও এখন মুখর। তাঁদের বক্তব্য, সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে দিগ্বিজয়ের মতো নেতারা বাটলা হাউস কাণ্ডে কার্যত সন্ত্রাসবাদীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এই বাড়াবাড়ি বর্জন করাই উচিত ছিল।

নজির আরও আছে। লোকসভা ভোটের আগে দিল্লির জামা মসজিদের শাহি ইমাম বুখারির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, তা নিয়ে তখনই সরব ছিলেন কংগ্রেসের বহু নেতা। অ্যান্টনি মুখ খোলার পর এখন সেই প্রসঙ্গও উঠে আসছে। একই ভাবে সমালোচনা হচ্ছে মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস সরকারের ভূমিকারও। সেখানে বিধানসভা ভোটের মুখে পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ সরকার হঠাৎই সরকারি কাজে ও উচ্চ শিক্ষায় সংখ্যালঘুদের জন্য ৪% সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে কিছুটা ভারসাম্য রাখতে মরাঠি ভাষাভাষীদের জন্য ১৬% সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছেন পৃথ্বীরাজ। কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরই আশঙ্কা, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে মহারাষ্ট্রে।

কেবল সংখ্যালঘু তোষণ নয়, দলিত ও পিছিয়ে পড়াদের সংরক্ষণের প্রশ্নে রাহুল গাঁধীর ‘বাড়াবাড়ির রাজনীতি’ নিয়ে আশঙ্কা ছিল দলে। আর সেই কারণ, ভারসাম্য রাখতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পক্ষে জোরদার সওয়াল করেছিলেন দলের ব্রাহ্মণ নেতা জনার্দন দ্বিবেদী। তখন দ্বিবেদী ছিলেন কোণঠাসা। আজ কিন্তু ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বিষয়টি।

কিন্তু প্রশ্ন হল, অ্যান্টনির মতো প্রবীণ নেতা প্রকাশ্যেই আপত্তি তোলার পরেও কি কংগ্রেস তোষণের রাজনীতি থেকে সরে আসবে? এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “সেই সংশয়টা থেকেই যাচ্ছে। ইতিবাচক বিষয় একটাই। তা হল, লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির কারণ খতিয়ে দেখতে অ্যান্টনিরই নেতৃত্বে কমিটি গড়ে দিয়েছেন সনিয়া। হারের কারণ হিসেবে অ্যান্টনি এই তোষামদের রাজনীতিকে অন্যতম বিষয় হিসেবে যখন গুরুত্ব দিচ্ছেন, তখন দলে এ ব্যাপারে বিতর্কের মাধ্যমে একটা স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy