শুভ জন্মাষ্টমী, সনাতন তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যময় একটি দিন। হিন্দুশাস্ত্রমতে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মানব রূপে মর্তে আবির্ভাব ঘটে। আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে এই দিনে এক বৈরী সমাজে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের উদ্দেশ্যে নিরাকার ব্রহ্ম বাসুদেব ও দেবকীর সন্তান হিসেবে পৃথিবীতেভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। দ্বাপর যুগে ওই সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম ছিল। কতিপয় রাজা রাজধর্ম, কুলাচার, সদাচার ভুলে গিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, অন্যায়, অবিচারে মত্ত হয়ে উঠেছিলেন। মথুরার রাজা কংস পিতা উগ্রসেনকে উৎখাত করে নিজে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন।
একই রকম ত্রাসের শাসন চালিয়েছিলেন জরাসন্ধ, চেদিরাজ, শিশুপাল-সহ অনেক রাজা। রাজা জরাসন্ধ নাকি একাই ৮৬ জন যুব রাজাকে বলি দেওয়ার জন্য কারাগারে রেখেছিলেন। এ ছাড়া হস্তিনাপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন দুর্যোধন-দুঃশাসন। এ হেন অধর্ম-অবিচার নির্মূল করে ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীকৃষ্ণরূপে ভগবানের মর্তে আগমন। তাই শ্রীকৃষ্ণ মর্তে এসে একে একে কংস, শিশুপাল, জরাসন্ধ ও কৌরবদের দর্পচূর্ণ করে, তাঁদের পাপসৌধ ধ্বংস করে ধর্মরাজ্য স্থাপন করলেন। ওই অত্যাচারী রাজাদের মধ্যে একজন, কংসরাজের বোন দেবকীর গর্ভেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। দেবকীর অষ্টম সন্তানের হাতেই কংসের মৃত্যু হবে, এই দৈববাণী জেনে কংস দেবকী ও তাঁর স্বামী বাসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন। একে একে দেবকীর ছয়টি সন্তানকে ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র হত্যা করেন কংস। সপ্তম সন্তানের বেলায় দেবকীর গর্ভ স্থানান্তরিত হয় রোহিনীরগর্ভে। আর অষ্টম সন্তানরূপে জন্ম হয় শ্রীকৃষ্ণের। তাঁকে কংসের হাতে না দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর কথামতো কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকার রাতে ঝড়বৃষ্টিতে রেখে আসেন আরেক সদ্য মাতা যশোদার পাশে আর তাঁর কন্যাকে নিয়ে ফিরে আসেন কারাগারে। কংসরাজ শ্রীকৃষ্ণের সন্ধান না পেলেও হাল ছাড়েন না।
আরও পড়ুন: এ বারের জন্মাষ্টমী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কত তম জন্মতিথি জানেন?
কংসরাজ তখন ছয় মাস পর্যন্ত বয়সের সব শিশুকে হত্যা করার জন্য পুতনা রাক্ষসীকে পাঠান। পুতনা রাক্ষসী স্তনে বিষ মাখিয়ে বিষমাখা স্তন্য পান করানোর ছলে শিশুদের হত্যা করেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকে পুতনা রাক্ষসী মারতে ব্যর্থ হন। বরং স্তন্যপান কালে ঘাতক পুতনাই মারা যান। শৈশব থেকেই শ্রীকৃষ্ণ এরকম একের পর এক অতি মানবিক ঘটনা ঘটাতে থাকেন, যা লীলা হিসেবে আখ্যাত। লীলাচ্ছলেই শ্রীকৃষ্ণ ধ্বংস করেন কংস-সহ অত্যাচারী রাজাদের।
মর্তে শ্রীকৃষ্ণের ১২৫ বছরের মনুষ্যরূপী লীলাকে সময়ানুসারে বৃন্দাবন লীলা (১ থেকে ১১ বছর), মথুরালীলা (১১ থেকে ২৩ বছর), দ্বারকালীলা (২৩ থেকে ১২৫ বছর) এ ভাগে ভাগ করেছেন শাস্ত্রকাররা। বৈষ্ণব দর্শন বলে, রাধিকা-সহ ব্রজগোপীদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পরমাত্মা আর জীবাত্মার মধ্যকার সম্পর্ক প্রতিভাত। প্রেমরূপের বিপরীতে গীতায় আমরা পাই কর্মযোগের উপদেশক শ্রীকৃষ্ণকে। যাঁর মুখে নিষ্কাম কর্ম ও ব্রহ্মজ্ঞানে জীবসেবার বাণী। মহাভারতের আখ্যানে শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধের সারথী, রাজনীতির মন্ত্রক। শ্রীকৃষ্ণ একাধারে দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, যোদ্ধা, অনাথের নাথ ও অগতির গতি। নররূপী নারায়ণ ও মঙ্গলময় ঈশ্বর। সমস্ত গুণের আধার। প্রতিটি লীলাই তার ভিন্নভিন্ন গুণের প্রকাশ। ভিন্ন ভিন্ন কর্মের ও লক্ষ্যের বাস্তবায়ন। লীলাচ্ছলেই শ্রীকৃষ্ণ সৎ ধর্মের, সৎ কর্মের, সদাচারের, বাণী প্রকাশ করেছেন, যা লোকশিক্ষা হিসেবে সর্বস্থানে সর্বকালেই প্রাসঙ্গিক। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের এই দিনটি জন্মাষ্টমী উদযাপন করা হয়।
এখন জেনে নেওয়া যাক ১৪২৬ সনের (২০১৯ সাল) শ্রীশ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমীর দিন তারিখ ও সময়সূচি:
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:
অষ্টমী তিথি আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ৪ ভাদ্র ১৪২৬, বৃহস্পতিবার।
ইং তারিখ: ২২/০৮/২০১৯।
সময়: রাত্রি ৩টে ২৭ মিনিট থেকে।
অষ্টমী তিথি শেষ:
বাংলা তারিখ: ৫ ভাদ্র ১৪২৬, শুক্রবার।
ইং তারিখঃ- ২৩/০৮/২০১৯।
সময়: রাত্রি সাড়ে ৩টে পর্যন্ত।
শ্রীশ্রীকৃষ্ণজন্মাষ্টমীব্রতম:
বাংলা তারিখ: ৫ ভাদ্র ১৪২৬, শুক্রবার।
ইং তারিখ: ২৩/০৮/২০১৯।
নিশীথকাল রাত্রি ১১টা ৩৯ মিনিটের পরে রাত্রি ১২টা ২৭ মিনিটের মধ্যে শ্রীশ্রীকৃষ্ণদেবাবির্ভাব।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:
অষ্টমী তিথি আরম্ভ:
বাংলা তারিখ: ৬ ভাদ্র ১৪২৬, শুক্রবার।
ইং তারিখ: ২৩/০৮/২০১৯।
সময়: সকাল ৮টা ৯ মিনিট থেকে।
অষ্টমী তিথি শেষ:
বাংলা তারিখ: ৭ ভাদ্র ১৪২৬, শনিবার।
ইং তারিখ: ২৪/০৮/২০১৯।
সময়: সকাল ৮টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত।
শ্রীশ্রীকৃষ্ণজন্মাষ্টমীব্রতম:
বাংলা তারিখ: ৭ ভাদ্র ১৪২৬, শনিবার।
ইং তারিখ: ২৪/০৮/২০১৯।
নিশীথকাল রাত্রি সওয়া ১১টার পরে রাত্রি ১২টা ০৩ মিনিটের মধ্যে শ্রীশ্রীকৃষ্ণদেবাবির্ভাব।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নানা মতানুসারে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী ব্রতদিন নির্ণয় করতে গিয়ে শাস্ত্রে বলা হয়েছে,
"কৃষ্ণোপাস্যাষ্টমী ভাদ্রে রোহিণ্যাঢ্যা মহাফলা। নিশীথেহত্রাপি কিঞ্চেন্দৌজ্ঞে বাপি নবমীযুতা॥"
অর্থাৎ, ভাদ্র মাসে কৃষ্ণাষ্টমী উপবাস যোগ্য। রোহিণী নক্ষত্রযুক্তা হলে আরও অধিক ফলপ্রদ। আর নবমী তিথি সংযুক্তা হলে আরও অধিক ফলপ্রদ হয়। অর্থাৎ নবমী তিথি যুক্ত জন্মাষ্টমী অধিক শ্রেষ্ঠ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy