Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার সময়সূচি, নির্ঘণ্ট মাহাত্ম্য

শ্রীক্ষেত্র পুরীতে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। শুধু পুরীই নয়, দেশের অন্যান্য প্রান্তেও জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা পালিত হয় মহাসমারোহে। কিন্তু কী এই স্নানযাত্রা?

পার্থপ্রতিম আচার্য
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

ইংরেজি জুন মাসের পূর্ণিমার আঞ্চলিক নাম ‘জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমা’। হিন্দু মতে জগন্নাথদেব জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমাতে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সেই উপলক্ষ্যে একটা স্নানের ঘটনা ঘটেছিল বলে তার পর থেকে জ্যৈষ্ঠী পূর্ণিমার দিনে পূন্যস্নান পালন করা হয়। বর্তমান বছর, অর্থাৎ ১৪২৬ সনের স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে ২ আষাঢ়, ১৪২৬ এবং গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে ১ আষাঢ়, ১৪২৬, রবিবার, ইংরেজি ১৭ জুন ২০১৯।

শ্রীক্ষেত্র পুরীতে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। শুধু পুরীই নয়, দেশের অন্যান্য প্রান্তেও জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা পালিত হয় মহাসমারোহে। কিন্তু কী এই স্নানযাত্রা?

জ্যৈষ্ঠমাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্বয়ম্ভু মনুর ‌যজ্ঞের প্রভাবে প্রভু জগন্নাথ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই এই তিথিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসাবে পালন করার নির্দেশ দেন স্বয়ং মনুই। সেই জন্মদিন উপলক্ষ্যেই এই বিশেষ স্নান উৎসব পালিত হয়ে আসছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার একশো আটটি কলস ভর্তি সুশীতল জলে মহাস্নান হয়ে থাকে।

কথিত আছে, সমস্ত দেবদেবী যাতে জগন্নাথদেবের এই স্নানযাত্রা ভাল ভাবে দেখতে পারেন, সেই উদ্দেশে মহারাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন স্না‌নযাত্রাকালে স্নানবেদীর চারদিকে রত্মশোভিত চাঁদোয়া ও আবরণবস্ত্র দিয়ে আচ্ছাদিত করে দিতেন। পরবর্তীকালে স্নানবেদী জীর্ণ হয়ে পড়লে তা নতুন করে নির্মাণ করেন শ্রীঅনঙ্গভীমদেব।

আরও পড়ুন: ডিভোর্স এড়াতে কোন জন্মমাসের পাত্রপাত্রীকে বিয়ে করা উচিত (শেষ অংশ)

স্নান‌যাত্রার দিন চন্দন, আতর-সহ বিভিন্ন সুগন্ধী দিয়ে পবিত্র জল এনে রাখা হয় স্নানবেদীতে। সুগন্ধী ধূপ দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয় স্নানমঞ্চ। তারপর মন্দিরের দক্ষিণ কূপ থেকে স্নানের জল আনেন প্রভু জগন্নাথের সেবকরা। সেই জল সুগন্ধ দ্রব্যে সুবাসিত করে ‘পাবমানী’ মন্ত্রে সোনার কলস পরিপূর্ণ ও অধিবাস করেন গর্ভমন্দিরে। এ বার শুরু হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে স্নানমঞ্চে নিয়ে আসার প্রস্তুতি।

সুন্দর পট্টবস্ত্র দিয়ে ঢেকে জগন্নাথদেব-সহ বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে আসা হয় স্নানমঞ্চে। স্নানমঞ্চে নিয়ে আসার সময় চামর ও তালপাতা দিয়ে বাতাস করতে করতে তিন দেবতাকে বাতাস করা হয়। সকলে যাতে স্নানের অনুষ্ঠান ‌দর্শন‌ করতে পারেন, সে জন্য পুরী মন্দিরে একটি উঁচু বেদী করা হয়। যাতে পুরীর প্রশস্ত রাজপথ ‘বড়দণ্ড’ থেকেও সকলে প্রভুর স্নানযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে পারেন। অবশেষে মহা সমারোহে ভোরবেলা ব্রহ্মার সঙ্গে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার স্নান সম্পূর্ণ করা হয়।

স্নানের পর জগন্নাথ ও বলরামের হাতিবেশ বা গণেশবেশ হয়ে থাকে। স্বয়ং জগন্নাথদেব মহারাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মহাস্নানের পর তাঁর অঙ্গরাগবিহীন রূপ যেন কেউ না দেখেন। তাই স্নানযাত্রার পর থেকে ১৫ দিন পুরীর মন্দিরের দরজা সাধারণের জন্য বন্ধ থাকে।

কথিত আছে, এই সময়ে স্নানের পর জগন্নাথদেবের জ্বর হয়। জ্বর সারাতে দয়িতাপতিরা ওষুধপথ্য, অর্থাৎ মিষ্টি রসের পানা, বিশেষ পাচন ও নানা ধরনের মিষ্টান্ন ভোগ দেন। এই সময়ে মন্দিরে জগমোহনের পাশে ‘নিরোধনগৃহে’ অবস্থান করেন জগন্নাথদেব। এর পর যখন নবমূর্তিতে জগন্নাথদেব নানা বেশভূষায় সুসজ্জিত হয়ে দর্শন দেন তখন সেই উৎসবকে বলা হয় নেত্রোৎসব বা নবযৌবন উৎসব।

জগন্নাথদেবের এই মহিমা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। যা আজও সমান ভাবে দেশ-বিদেশের মানুষকে আকর্ষিত করে।

অন্য বিষয়গুলি:

Jagannath Deva Rashi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy