Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জ্যোতিষে সন্ধিক্ষণ বিন্দুতে জন্মানোর তাৎপর্য

জ্যোতিষ মনস্তত্ত্বে বলা হয়েছে, চরিত্রই আমাদের ভাগ্যকে গড়ে তোলে। তাই রাশি চরিত্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, প্রাশ্চাত্য জ্যোতিষ মূলত রাশি চরিত্র বিশ্লেষণভিত্তিক। রাশি চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গেলে রবির সঞ্চারের প্রতি লক্ষ্য রেখেই করা হয়ে থাকে। তার মানে রবি যখন এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন করে।

অসীম সরকার
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৮
Share: Save:

প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্য জ্যোতিষে ‘কাস্প’ বা সন্ধিক্ষণ বিন্দুর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ভাব বিচারে বা রাশিচরিত্র বিচারের ক্ষেত্রে। বলা হয়ে থাকে এই সন্ধিক্ষণের দিনগুলিতে যাদের জন্ম হয়ে থাকে তারা ভীষণ ভাবে স্পর্শকাতর মানসিকতার হয়। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গণ্যমান্য ব্যক্তি হয়ে থাকে। জ্যোতিষ মূলত দু’টি বিষয়, মনস্তত্ত্ব আর ভবিষ্যদ্বাণীর উপর গড়ে উঠেছে।

জ্যোতিষ মনস্তত্ত্বে বলা হয়েছে, চরিত্রই আমাদের ভাগ্যকে গড়ে তোলে। তাই রাশি চরিত্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, প্রাশ্চাত্য জ্যোতিষ মূলত রাশি চরিত্র বিশ্লেষণভিত্তিক। রাশি চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গেলে রবির সঞ্চারের প্রতি লক্ষ্য রেখেই করা হয়ে থাকে। তার মানে রবি যখন এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন করে।

যখন রবি এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে যাচ্ছে, অর্থাৎ দুটি রাশির মধ্যে বা সন্ধিক্ষণে যে দিনগুলি পড়ে তাকে অতিক্রম করে যায়, তখন এই দিনগুলিকে ‘কাস্প’ বা ‘কাসপাল পয়েন্ট’ বা সন্ধিক্ষণ বিন্দু বা সন্ধিক্ষণের দিনগুলি বলা হয়।

এই সন্ধিক্ষণের দিনগুলিতে যাদের জন্ম হয়ে থাকে তাদের চরিত্র বা প্রকৃতি বা রাশিচরিত্র দুটি রাশির কম্বিনেশনে গড়ে ওঠে। এই সকল সন্ধিক্ষণে জন্মগ্রহণ করলে তাদের মধ্যে মিশ্র রাশিচরিত্রের লক্ষ্মণ, অর্থাৎ দুটি রাশির দোষ ও গুণ মিশ্র ভাবে দেখা যায়।

আরও পড়ুন: রাশি অনুযায়ী কত বছর বয়সে বিয়ে করলে জীবন সুখে ভরে উঠবে জেনে নিন

যেমন ১৬ থেকে ২২ জানুয়ারির মধ্যে কারও জন্ম হলে তার মধ্যে মকরের দোষগুণ যেমন পাওয়া যাবে, তেমনই কুম্ভের চরিত্রগত দোষগুণ কিছুটা থাকবে। অর্থাৎ, ওই সময়ে জন্মগ্রহণ করায় জাতক/জাতিকার মধ্যে দু’টি রাশির চরিত্রের প্রতিফলন তার প্রকৃতিতে লক্ষ্য করা যাবে।

১২টি রাশি চরিত্রের মতো ১২টি সন্ধিক্ষণ বিন্দুর চরিত্র রয়েছে। এখানে আমরা সেই ১২টি সন্ধিক্ষণ বিন্দুর দিনগুলিতে যাদের জন্ম হয়েছে তাদের চরিত্রের বা প্রকৃতিগত দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করব। মনে রাখতে হবে, সন্ধিক্ষণ বিন্দু বা কাসপাল পয়েন্ট মানে কোনও একটি দিন নয়, কাসপাল পয়েন্টের বা সন্ধিক্ষণ বিন্দুর দিনগুলির মধ্যে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬টি দিন পড়ে।

এ বার বিভিন্ন ‘কাস্প’ চরিত্র বা সন্ধিক্ষণ চরিত্রগুলি উল্লেখ করব:

১) ১৬ থেকে ২২ জানুয়ারির মধ্যে যাদের জন্ম: এই সময়ে যাদের জন্ম তাদের ‘রহস্যময় সন্ধিক্ষণ’ বা ‘কাস্প অব মিস্ট্রি’ বলে। এই সময়ে জন্ম হলে মকর ও কুম্ভ রাশির দোষগুণগুলি মিলিত ভাবে জাতক/জাতিকার উপর প্রভাব ফেলে। মনে রাখতে হবে, মকর ও কুম্ভ উভয়েই শনির রাশি তবে মকরের মধ্যে প্রচন্ড শনির নেগেটিভ ভাব, দুঃখ, বিষণ্ণতা কাজ করে। আর কুম্ভের মধ্যে রয়েছে শনির আনন্দময়তা। এই সময়ে জন্ম হওয়ার জন্য জাতক/জাতিকার মধ্যে শনির নেগেটিভ ভাবের প্রভাব অনেক কম অনুভূত হবে।

২) ১৫ থেকে ২১ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে যাদের জন্ম: এই সন্ধিক্ষণের দিনগুলিতে যাদের জন্ম হয় তারা বেশিমাত্রায় ‘বোধিসম্পন্ন’ হয়ে থাকে। শনির তিতিক্ষা ও বৃহস্পতির মানবিকতা ও প্রসারতা তাদের চরিত্রের মধ্যে কাজ করে। এরা তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও বোধির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে, ফলে এই সন্ধিক্ষণের মানুষগুলি কমবেশি আধ্যাত্মিক মনোভাবাপন্ন বা দার্শনিক মানসিকতার হয়ে থাকে। ভারতবর্ষে অনেক আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ এই সন্ধিক্ষণে জন্মেছেন।

৩) ১৭ থেকে ২৩ মার্চের মধ্যে যাদের জন্ম: এই সন্ধিক্ষণের দিনগুলিতে যাদের জন্ম তাদেরক ‘কাস্প অব রিবার্থ’ বা ‘পুনর্জন্মের সন্ধিক্ষণ’ বলা হয়ে থাকে। এদের প্রকৃতিতে মীন ও মেষের মিলিত প্রভাব দেখা যায়। মীনের স্বপ্নালু ও কল্পনাপ্রবণ মন এবং মেষের এনার্জেটিক অ্যাটিচুড নিয়ে এরা জন্মগ্রহণ করে। এদের মধ্যে ইতস্তত ভাবও যেমন আছে আবার সব কিছু ছেড়ে সোজাসুজি চলার ক্ষমতাও আছে। এরা কমবেশি হঠকারী হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: ১, ১০ এবং ১৯ তারিখ জন্মানো মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি

৪) ১৬ থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে যাদের জন্ম: এই সন্ধিক্ষণকে ‘ক্ষমতার সন্ধিক্ষণ’ বলা হয়। এই সন্ধিক্ষণের দিনগুলিতে যাদের জন্ম তারা কমবেশি সকলেই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চায়। এরা সব ধরনের ক্ষমতা, যেমন অর্থ ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে নিজের আয়ত্ত্বে রাখতে চায়। এরা স্থির লক্ষ্যে নিজের কর্মপরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে থাকে। এরা জন্ম থেকে নেতৃত্ব দিতে ও সমষ্টির দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। এরা বৃষ ও মেষের সন্মিলিত প্রভাবে জন্মে থাকে।

৫) ১৭ থেকে ২৩ মে-র মধ্যে যাদের জন্ম: এরা বৃষ ও মিথুনের সন্মিলিত চরিত্র নিয়ে জন্মায় তাই এদের ‘এনার্জির সন্ধিক্ষণ’ বলা হয়। এরা অফুরন্ত এনার্জির উৎস, তাই এদের সকলকেই উদ্যোগী পুরুষ/নারী হতে দেখা যায়। সব সময় নতুন আইডিয়া ও ভাব নিয়ে কাজ করতে চায়।

৬) ১৭ থেকে ২৩ জুনের মধ্যে যাদের জন্ম: এই সন্ধিক্ষণকে ‘ম্যাজিকের সন্ধিক্ষণ’ বলে। এই কথা বলার কারণ, প্রাচীনকালে ও আজকের যুগে যারা ডাইনিবিদ্যা বা ব্ল্যাক আর্ট চর্চা করে তারা বিশ্বাস করে এই সন্ধিক্ষণের দিনগুলিতে কোনও ‘অভিচার প্রক্রিয়া’ প্রয়োগ করলে তা দ্রুত কাজ করে। তাই এই দিনগুলিতে যাদের জন্ম তারাও অতি স্পর্শকাতর মানসিকতার বা সাইকিক ভাবাপন্ন হয়ে থাকে। এদের চরিত্র হয়ে থাকে মিথুন ও কর্কটের সন্মিলিত চরিত্রের প্রভাবে।

৭) ১৯ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে যাদের জন্ম: এই সময়ে যাদের জন্ম, কর্কট ও সিংহের মিলিত প্রভাব তাদের প্রকৃতিতে প্রভাব ফেলে। তার জন্যে এরা খুব দ্বন্দ্বে ভোগে। কারণ কর্কট মানে জল আর সিংহ মানে আগুন। তাই এই সন্ধিক্ষণকে ‘অসিলেশন কাস্প’ বলে, কারণ এদের জীবনে দোদুল্যমানতা খুব বেশি মাত্রায় থাকে। এক দিকে প্রচন্ড স্পর্শকাতর, অন্য দিকে নিজেকে উন্মোচিত করা।

৮) ১৯ থেকে ২৫ অগস্টের মধ্যে যাদের জন্ম: এই সন্ধি সিংহ ও কন্যার প্রভাবে চলে। এরাও খুব বিপরীতধর্মী প্রবণতার মধ্যে চলে। এই সন্ধির দিনগুলিতে জন্ম নিলে তাদের নিজেকে সকলের সামনে খুলে ধরতে হয়। এখানে দ্বন্দ্ব বা বিপরীত ভাব ভীষণ ভাবে কাজ করে। কারও মধ্যে সিংহ রাশির চরিত্রের বিকাশ দেখা যায়, আবার কারও মধ্যে কন্যার চরিত্রের বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। এদের মধ্যে একটি বিরল গুণের বিকাশ দেখা যায়, যেমন এরা কখন নিজেদের ভাব গোপন রাখবে আর কখন নিজেদের ভাবকে প্রকট করবে তা নিপুণ দক্ষতায় করে থাকে।

৯) ১৯ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাদের জন্ম: এই সন্ধিক্ষণে জন্ম হলে কন্যা আর তুলার প্রভাবে তারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। এই সন্ধিক্ষণ ‘সুন্দরের সন্ধিক্ষণ’ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই সময়ের জাতক/জাতিকারা শিল্পী মনোভাবাপন্ন হয়ে থাকে। এরা উচ্চ রুচির মানুষ হয়ে থাকে।

১০) ১৯ থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে যাদের জন্ম: এই সন্ধিক্ষণ ‘নাটকের সন্ধিক্ষণ’ বলা হয়। কারণ, এই সন্ধিক্ষণ তুলার দক্ষতা আর বৃশ্চিকের সমস্তটা নিয়ে গড়ে উঠেছে। এই সন্ধিক্ষণের জাতক/জাতিকার মধ্যে ভাল ও মন্দের দ্বন্দ্ব, মন ও হৃদয়ের দ্বন্দ্ব, বুদ্ধি আর ভাবাবেগের দ্বন্দ্ব সব সময় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। এদের বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব সেই দ্বন্দ্বগুলিকে সব সময় ব্যালান্স করার চেষ্টা করে থাকে।

১১) ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে যাদের জন্ম: এই সন্ধিক্ষণকে ‘বিদ্রোহীর সন্ধিক্ষণ’ বলে। এরা প্রথাগত ভাবনাচিন্তার বিরোধী। যেখানে কোনও বিরোধ নেই সেখানেও এরা বিরোধ খুঁজে বের করতে পারে। এই সন্ধিক্ষণের জাতক/জাতিকারা গতিময় বৃশ্চিকের টেনশন ও ধনুর কর্মকুশলতার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। এই সন্ধিক্ষণের মানসিকতা খুব জটিল বলে চিহ্নিত হয়ে আছে।

১২) ১৮ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে যাদের জন্ম: এরা আসন্ন ও অনাগত ভবিষ্যৎকে বুঝতে পারে। এই সন্ধিক্ষণকে সাফল্যের সন্ধিক্ষণও বলা হয়ে থাকে। এখানে বৃহস্পতি ও শনির প্রভাব প্রাজ্ঞ ব্যক্ত্বিত্বের জন্ম দিয়ে থাকে। এরা বিবেচক ব্যক্তি বলে পরিচিত হয়। এরা আশাবাদী ধনুর আর বাস্তববাদী মকরের প্রভাবে গড়ে ওঠে।

অন্য বিষয়গুলি:

Cusp Birth Chart
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy