লোকলজ্জার ভয়ে যৌনজীবন সংক্রান্ত সুস্থ আলোচনা থেকে শত যোজন দূরে থাকেন অনেকেই। প্রতীকী ছবি।
আধুনিক যুগেও যৌনতা নিয়ে ঢাক ঢাক গুড় গুড়ের অন্ত নেই। দেশের জনসংখ্যা ক্রমশ ১৫০ কোটির দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু এখনও একটা বড় সংখ্যক মানুষ জনসমক্ষে যৌনতা এবং যৌনজীবন নিয়ে কথা বলতে সঙ্কোচ বোধ করেন। যৌনতা মানেই যেন তা কানে কানে ফিসফিস করে বলার বিষয়। ফলে যৌনজীবন সম্পর্কে সঠিক ধারণা অধরা থেকে যায়। সুস্থ যৌনজীবন সামগ্রিক ভাবেই ব্যক্তিজীবনে প্রভাব ফেলে। তবুও লোকলজ্জার ভয়ে যৌনজীবন সংক্রান্ত সুস্থ আলোচনা থেকে শত যোজন দূরে থাকেন অনেকেই।
যৌনতা এবং যৌনজীবন কোনও নিষিদ্ধ বিষয় নয়। সুস্থ ভাবে যৌনতার কথা আলোচনা করলে তাতে কোনও অসুবিধা নেই। ভালবাসার প্রকাশেই হোক কিংবা প্রজননের চাহিদায়, যৌনমিলন আর পাঁচটি জৈবিক প্রক্রিয়ার মতোই স্বাভাবিক। যৌনতাকে নিষেধের মোড়কে মুড়িয়ে রাখলে পালা দিয়ে বাড়তে পারে পুরুষতান্ত্রিকতা, হোমোফোবিয়া, লিঙ্গবৈষ্যেম্যের মতো বিষয়গুলি। তাই যৌনতার উপর থেকে নিষেধের পর্দা সরিয়ে দেওয়াই শ্রেয়। যৌনতা নিয়ে অকপট হওয়া জরুরি। তাতে মনের গোপনে থাকা দোলাচল কাটবে। মূলত সেই উদ্দেশ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে আনন্দবাজার অনলাইন কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে যোগাযোগ করেছিল স্ত্রীরোগ চিকিৎসক রঞ্জিত চক্রবর্তীর সঙ্গে।
যৌনরোগ নিয়ে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ নন অনেকেই। সচেতনতাও চোখে পড়ে না। নারী এবং পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই যৌনরোগের আশঙ্কা সমান। অসুরক্ষিত যৌন সংযোগের কারণেই এই রোগগুলি হয় মূলত। অনেকে মনে করেন, বিয়ের আগে যদি নিয়ম করে শারীরিক মিলন না হয়, সে ক্ষেত্রে যৌনরোগ হওয়ার ঝুঁকি কম। আবার অনেকের ধারণা, যখন কোনও পাকা সম্পর্ক তৈরি হয় বা বিয়ের পর সঙ্গীর সংখ্যা সাধারণত একাধিক না হলে যৌনরোগ হওয়ার ঝুঁকি প্রায় নেই। কিন্তু এই ধারণা কি আদৌ ঠিক?
চিকিৎসকের কথায়, ‘‘প্রথম কথা, আমাদের দেশে যৌনতা সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া সবে শুরু হয়েছে। এখনও অনেকের কাছেই যৌনতা একটা গুপ্ত বিষয়। আমরা স্বীকার করতে চাই না যে, এটা রোজকার জীবনের অংশ। আমাদের দেশে অবিবাহিত থাকাকালীন অনেকেরই নিয়মিত যৌনজীবন থাকে। তার ফলে এমন কিছু শারীরিক সমস্যা তৈরি হয় যা বন্ধ্যত্ব ডেকে আনতে পারে। আরও গুরুতর ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। যৌনতা একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ফলে এটি এড়িয়ে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। যৌনজীবন সক্রিয় না থাকলেও হতে পারে যৌনরোগ। কারণ সব সময় পরিকল্পনা করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয় না। কিছু ক্ষেত্রে হঠাৎ করে হয়। তাই বাবা-মায়েদের উচিত ছোট থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে সন্তানদের অবহিত করে রাখা। অসুরক্ষিত যৌন সংযোগ কতটা মারাত্মক হতে পারে, সেটাও বোঝাতে হবে। এ ছা়ড়াও অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ অবিবাহিত মেয়েদের জন্য ভবিষ্যতেও অনেক সমস্যা ডেকে আনতে পারে। তাই স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা জরুরি। এখন জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করার জন্য ‘এইচপিভি’ টিকা শুরু হয়ে গিয়েছে। ১০ বছরের ঊর্ধ্বে মেয়েরা এই টিকা নিতে পারবে। কিছু দিন পরে ছেলেদেরও হবে। এই টিকা সব মেয়েরই নিয়ে রাখা উচিত। যখন নেবে সেই সময় টিকা নেওয়ার কারণ এবং উপকারিতার বিষয়টিও জানিয়ে রাখা জরুরি।’’
কত বছর বয়স থেকে এই সংক্রান্ত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো উচিত? চিকিৎসক বলেন, ‘‘যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার তেমন কোনও নির্ধারিত বয়স নেই। তবে প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছরের পর থেকেই মূলত শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করা উচিত। সে ক্ষেত্রে যৌনরোগ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যপরীক্ষাগুলিও সেই সময় থেকেই যদি করা যায়, তা হলে অনেক সমস্যার ঝুঁকি কমে। যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে যে হেতু কথা বলতে লজ্জা বোধ হয়, অনেক সময় যৌনরোগের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান অনেকেই। আমি বলব এমনটা না করাই ভাল। বিষয়টি ব্যক্তিগত হলেও, চিকিৎসকের কাছে অন্তত খোলাখুলি কথা বলাই শ্রেয়। ২৪ থেকে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত বিবাহিত এবং অবিবাহিত মহিলাদের বছরে এক বার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা জরুরি।’’
প্রথম বার শারীরিক মিলনের আগে কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখা জরুরি? চিকিৎসক বলেন, ‘‘যৌনতাকে কখনওই ছেলেখেলা মনে করা উচিত নয়। উত্তেজনা থাকবে, কিন্তু পাশাপাশি সংযমও জরুরি। একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে আরও বেশি করে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ তো আছেই। কিন্তু কম বয়সে গর্ভপাত করালে তার প্রভাব পড়বে শরীরে। তাই মিলনের সময় সুরক্ষা নেওয়া জরুরি। কেউ যদি প্রথম বার সঙ্গমের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে এক বার পরামর্শ করে নেওয়াই শ্রেয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy