জলখাবার মানে রুটি-তরকারি বা লুচি-আলুর দম দিয়ে পেট ভরানো নয় বুঝেছেন অনেকেই। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বদল আসার পাশাপাশি হার্টের অসুখ, ক্লান্তি, অবসাদ ক্রমশই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদেরাও বলছেন, রোগবালাই দূরে রাখতে হলে, ডায়াবিটিস ঠেকাতে, হার্ট ভাল রাখতে শুধু খাওয়া জরুরি নয়, কী খাচ্ছেন সেটাও জরুরি। জলখাবার তাই শুধু পেট ভরানোর বিষয় নয়। বরং দিনের শুরুতে পাতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার, ভিটামিনের সঠিক সমন্বয় থাকা দরকার বলছেন পুষ্টিবিদেরা।
সকালে উঠে অনেকেই খান ওট্স। কেউ কেউ কিনোয়াও বেছে নেন। তবে চিরপরিচিত ডালিয়াও পুষ্টিগুণে কোনও অংশে কম নয়। কারও যদি ওট্স খেতে ভাল না লাগে বা নিয়মিত ওট্স একঘেয়ে মনে হয়, তা হলে দিনের শুরুর খাবার হিসেবে ডালিয়াও রাখতে পারেন। গম থেকেই তৈরি ডালিয়ায় রয়েছে সহজপাচ্য ফাইবার, ভিটামিন বি, আয়রন এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ।
আরও পড়ুন:
ওজন ঝরায়: ওজন কমাতে চাইলে ডালিয়া খাওয়া যায়। কারণ, এতে থাকে সহজপাচ্য ফাইবার। ফাইবার যেমন পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে, তেমনই পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে চট করে খিদে পায় না। এতে উল্টোপাল্টা বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। ২০১৯ সালে ‘দ্য জার্নাল অফ নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র বলছে, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং সঠিক ডায়েট পরিকল্পনা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: ডালিয়ায় থাকা ফাইবার পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এতে থাকা ফাইবার। শরীর সুস্থ রাখতে, গ্যাসের সমস্যা দূর করতে পেট পরিষ্কার থাকা খুব জরুরি। হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহজপাচ্য ফাইবার সাহায্য করে।
স্বাস্থ্য ভাল রাখে: ওজন কমাতে এবং শরীর ভাল রাখতে প্রোটিন খুব জরুরি। ডালিয়ায় কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাটের পাশাপাশি প্রোটিনও মেলে। বিপাকহার বৃদ্ধির জন্য, পেশি গঠনে প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। ডালিয়া যদি খিচুড়ি হিসাবে ডাল মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া যায় তা হলে এতে প্রোটিনের পরিমাণ আরও বাড়বে।
ডায়াবেটিকদের জন্য ভাল: ডালিয়ার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ফলে এই দানাশস্য খেলে চট করে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় না। তা ছাড়া এতে ফাইবার, প্রোটিনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খনিজও মেলে। এতে রয়েছে ‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট’। ওজন কমানোর জন্যও পুষ্টিবিদেরা ‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট’ জাতীয় খাবারই বেছে নিতে বলেন। ফলে ডালিয়া খেতে পারেন ডায়াবিটিসের রোগীরাও।
প্রদাহ কমায়: ডালিয়ায় থাকে বিটেইন নামে এমন এক উপাদান যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বশে রাখতে, ট্রাইগ্লিসেরাইডসের মাত্রা ঠিক রাখতে কার্যকর এই দানাশস্যটি।
যে কোনও বয়সেই ডালিয়া খাওয়া যেতে পারে। তবে লিভার, কিডনি বা অন্য কোনও অসুখ থাকলে বিষয়টি আলাদা। সে ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া দরকার। পুষ্টিকর খাদ্যের তালিকায় থাকা এই খাবার উপোসের দিনেও খাওয়া যায়। ডালিয়ার খিচুড়ি খুবই জনপ্রিয় পদ। এ ছাড়া উপমা, পোলাও, স্যুপ হিসাবেও তা খাওয়া চলে।