পেটের গোলমাল, যন্ত্রণা লেগেই আছে মানে ডায়েরিয়ার ওষুধ খেয়ে ফেললে হবে না। আবার দিনভর ক্লান্তিভাব, ঝিমুনিও হতে পারে অন্য কোনও রোগের লক্ষণ। শরীর সতর্ক করে অনেক আগেই। কেবল লক্ষণগুলি আলাদা করে চেনা যায় না। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিই বেশি চিন্তার। সংসার ও পেশা যতটা দায়িত্ব নিয়ে সামলান মেয়েরা, নিজের শরীরের ব্যাপারে ততটা যত্নশীল নন অনেকেই। ফলে ত্রিশ পার হওয়ার পর থেকেই নানা অসুখবিসুখ লেগেই থাকে। শুরু হয় হরমোনের গন্ডগোল। তাই আগে থেকে যদি উপসর্গগুলি চিনে স্বাস্থ্যের কিছু পরীক্ষা করিয়ে রাখা যায়, তা হলে বিপদের ঝুঁকি কমে অনেকটাই।
শরীরের বদলটা কিন্তু শুরু হয় ত্রিশ বছরের পর থেকেই। দেখবেন, পরিশ্রম সামান্য করলেই প্রচণ্ড ক্লান্তিবোধ হচ্ছে। সব সময়েই ঝিমুনি আসছে। অনেকেরই হয়তো এমন হয়। যদি কাজের চাপ বা ব্যস্ততার কারণে সাময়িক ভাবে হয়, তা হলে ঠিক আছে। কিন্তু যদি দেখেন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও ক্লান্তি ভাব যাচ্ছে না, তা হলে বুঝতে হবে অন্য রোগ বাসা বাঁধছে। এই ব্যাপারে মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডলের মত, অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঝিমুনি থাইরয়েড বা ডায়াবিটিসের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। আবার হার্টে কোনও সমস্যা হলে তার থেকেও এমন হতে পারে। ওজন বৃদ্ধি, হরমোনের তারতম্য, রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হলেও এমন হতে পারে।
আরও পড়ুন:
যদি দেখেন, পেটের গোলমাল লেগেই আছে, কিছু খেলেই গ্যাস-অম্বল হচ্ছে, পেটফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা হলে অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে বরং চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ, লাগাতার বদহজমের সমস্যা, পেটে প্রদাহ, যন্ত্রণা আলসার বা কোলন ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে।
মূত্রনালির সংক্রমণ যদি বারে বারে হয়, তা হলে সেটি কিডনির অসুখের ইঙ্গিত হতে পারে। আবার যদি দেখেন, কম খেয়েও ওজন বেড়ে যাচ্ছে, মুখে ব্রণের আধিক্য হচ্ছে, তা হলে সেটি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) বা থাইরয়েড ডিজ়অর্ডারের লক্ষণও হতে পারে।
ঋতুস্রাবের সময়ে অনেক মহিলাই তীব্র যন্ত্রণায় ভোগেন। কারও কারও ক্ষেত্রে সেই ব্যথা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, ঋতুস্রাবের পাঁচ থেকে সাত দিন আগে থেকেই যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, তা এন্ডোমেট্রিয়োসিসের লক্ষণ হতে পারে। জরায়ুর ভিতরের একটি স্তর হল এন্ডোমেট্রিয়াম। প্রতি মাসে জরায়ুর এই এন্ডোমেট্রিয়াম অংশের স্তর খসেই ঋতুস্রাব হয়। এই অংশটি যদি জরায়ুর বাইরে, তলপেটের যে কোনও জায়গায় বা শরীরের অন্য কোথাও চলে যায়, তখন সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে সিস্ট তৈরি হয়। এই রোগ থাকলে সন্তানধারণে সমস্যা হয়। তাই এই রোগের লক্ষণ দেখলে বাড়তি সতর্কতা নিতেই হবে।
ত্রিশ পেরোলেই তাই মেয়েদের নিময়িত প্যাপ স্মিয়ার’ টেস্ট, ম্যামোগ্রাম, লিপিড প্রোফাইল টেস্ট, থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট এবং হিমোগ্রাম করিয়ে রাখা ভাল। পাশাপাশি এইচপিভি পরীক্ষা করেও দেখা যায় ক্যানসারের ঝুঁকি আছে কি না।