দাদু-দিদা, দাদু-ঠাকুরমা, মা-বাবা, পিসি-কাকা, মামা-মাসি— চশমা ছাড়া কেউই চোখে ভাল দেখেন না। বোঝাই যাচ্ছে, চোখের সমস্যা একেবারে জিনগত। আর কিছু দিন পরেই যে বাড়ির খুদে সদস্যটির চোখে যে সেই ‘গয়না’ এসে পড়বে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তার উপর ফোন-নির্ভর জীবন। খাওয়া, পড়া, খেলা— এখন সবই হয় ফোনে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, চোখের সমস্যা যদি জিনগত হয়, তা হলে প্রতিরোধ করার উপায় নেই। তবে ছোট থেকে কিছু নিয়ম অভ্যাস করানো যায়, তা হলে এই সমস্যা খানিকটা হলেও রোধ করা যাবে।
আরও পড়ুন:
১) অভিভাবকেরা নিজেদের সুবিধার জন্য শিশুদের ঘরের মধ্যেই নানা ধরনের খেলনা দিয়ে বসিয়ে রাখেন। অনেক সময় ল্যাপটপ বা মোবাইলে কার্টুন বা অন্য কিছু চালিয়ে তাদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। স্বভাবতই দীর্ঘ ক্ষণ কম্পিউটার বা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলে তাদের চোখের উপর চাপ পড়ে। চিকিৎসকেরা বলছেন, চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে কাছের জিনিস দেখতে সমস্যা হতে পারে। কারও কারও দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যা ‘মায়োপিয়া’ নামে পরিচিত। এই ধরনের সমস্যা দূর করতে শিশুদের বাড়ির বাইরে খেলতে নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস করুন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটালে, মাঠেঘাটে খেলাধুলো করলে চোখের পেশি সহজে ক্লান্ত হয় না। উল্টে দৃষ্টিশক্তি ভাল হয়।
২) চোখের জন্য ভাল এমন খাবার ডায়েটে রাখতে হবে। ভিটামিন এ, সি, ই, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, লুটেইন এবং জ়িঙ্ক— চোখের জন্য ভাল। এখন প্রশ্ন হল এই সব উপাদান কোন কোন খাবারে থাকে? গাজর, লেবু, স্ট্রবেরি, বেলপেপার, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার শিশুদের প্রতি দিন খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
আরও পড়ুন:
৩) কী করলে চোখ ভাল থাকবে সেই পাঠও শিশুদের দিতে হবে। প্রতি দিন ঘুম থেকে উঠেই চোখ পরিষ্কার করতে হবে। যখন-তখন চোখ হাত দেওয়া যাবে না, রগড়ালে উল্টে সমস্যা বাড়বে। চোখে যাতে পেন, পেন্সিলের খোঁচা না লাগে সে বিষয়েও তাদের সতর্ক করতে হবে। মাঠে খেলার সময়ে চোখে ধুলোবালি ঢুকে যেতে পারে। চোখ না রগড়ে তৎক্ষণাৎ ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিতে হবে। অতিরিক্ত রোদ থেকেও চোখের ক্ষতি হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো শিশুদেরও রোদচশমা ব্যবহার করাতে পারলে ভাল হয়।
৪) খেলার ছলে চোখের ব্যায়াম করাতে পারেন। ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলা, চোখের মণি ঘোরানো, দু’হাতের পাতা ঘষে গরম করে সেই ভাপ চোখে নেওয়া কিংবা এক বার দূরের জিনিস দেখা আবার পর ক্ষণেই কাছের জিনিস দেখার মতো সাধারণ কিছু ব্যায়াম করার অভ্যাসে চোখের পেশি মজবুত হয়।
৫) পরিবারে কোনও সদস্যের চোখ সংক্রান্ত জটিল সমস্যা থাকলে কিংবা ডায়াবিটিস থাকলে বাড়ির খুদের মধ্যে তা জিনগত কারণেই সঞ্চারিত হতে পারে। গোড়ায় রোগ নির্ণয় করতে পারলে সমস্যা দ্রুত নিরাময় করা যায়। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর অবশ্যই চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।