সকালে ওঠার পর ঘুমের ভাব কাটাতে যুদ্ধ করতে হয় রোজ? ঘোরের মধ্যে সকাল শুরু করতে দেরি হয়ে যায়? এর ফলে সারা দিনের কাজের পরিকল্পনাতেও গোলমাল হয়ে যায়। নানা রকম টোটকা চেষ্টা করেও লাভ হয় না। সে ক্ষেত্রে কী করবেন? অনেকেই চা-কফির উপর নির্ভর করেন। কেউ বা তাড়াতাড়ি শৌচালয়ের কাজ সেরে ঠান্ডা জলে স্নান করে নেন। তবে কোনটি বেশি উপকারী, কার জন্য কোনটি ভাল, কফি, না কি ঠান্ডা জলে স্নান? চটজলদি ঘুমের আমেজ কাটাতে কোনটি বেশি কার্যকর?
প্রথমে দু’টির উপকারিতা আলাদা ভাবে জানতে হবে-
কফি
কফিতে রয়েছে ক্যাফিন, যা প্রাকৃতিক উদ্দীপকের কাজ করে। ক্যাফিন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে। ঘুমের ঘোরের নেপথ্যে কাজ করে অ্যাডিনোসাইন জৈবযৌগ। মস্তিষ্কে সেটির রিসেপ্টর অবস্থিত। ক্যাফিন সেই রিসেপ্টরটিকে বন্ধ করে দেয়। ফলে ঘোর কেটে যায়। সতর্কতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারে কফি। মন-মেজাজ ভাল করে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়। কফি খেলে আরামও পান অনেকে। কিন্তু কফির নেশা হয়ে গেলে সেটি মুশকিল। ক্যাফিনের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেলে নির্ভরশীলতা তৈরি হয়ে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে উদ্বেগের সমস্যায় অনুঘটকের কাজ করে কফি।

সতর্কতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারে কফি। ছবি: সংগৃহীত।
ঠান্ডা জলে স্নান
সকালে উঠে হঠাৎ শীতল জলে স্নান করলে শরীরে উত্তেজনা তৈরি হয়। এর ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, হৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবং শরীরে অক্সিজেনের প্রবেশ ঘটে বেশি পরিমাণে। রক্তপ্রবাহের গতি বৃদ্ধিতে মন খুব দ্রুত সতর্ক হয়ে ওঠে। এন্ডরফিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটে বলে মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। কিন্তু কারও কারও জন্য অস্বস্তি তৈরি করতে পারে এই কৌশলটি। আড়ষ্ট ভাব কাটাতে হঠাৎ গায়ে ঠান্ডা জল ঢেলে দিলে ছটফটানি শুরু হতে পারে শরীরে। ক্যাফিনের মতো অত তীব্র অভিঘাতও তৈরি করে না ঠান্ডা জল।

আড়ষ্ট ভাব কাটাতে হঠাৎ গায়ে ঠান্ডা জল ঢেলে দিলে ছটফটানি শুরু হতে পারে শরীরে। ছবি: সংগৃহীত।
তুলনামূলক আলোচনা
কফি খেলে সঙ্গে সঙ্গে ঘোর কেটে যায় না। ২০-৩০ মিনিট মতো সময় লাগে। ঠান্ডা জল গায়ে লাগলেই আড়ষ্টতা কেটে যায়। কিন্তু এখানেই সমস্যা, ঠান্ডা জল যত দ্রুত ঘোর কাটায়, তত দ্রুতই ঘোর ফিরিয়ে আনতেও পারে। স্নানের পরই কাজে ব্যস্ত হয়ে না পড়লে আবারও নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে শরীর। এ দিকে দেরিতে শুরু হলেও ক্যাফিনের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি।
কোনটি বেছে নেবেন
হাতে সময় থাকলে, সারা দিনের ব্যস্ততা থাকলে, এবং সর্বোপরি, খেতে ভাল লাগলে কফিই বেছে নেওয়া উচিত। কিন্তু যদি কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ঘোর কাটিয়ে ফেলার তাড়া থাকে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা থাকে, সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা জলে স্নান করে ফেলাই ভাল। অনেকে আবার যুগলবন্দিতে বিশ্বাসী। ঠান্ডা জলে স্নান করে ঘোর কাটিয়ে কফিতে চুমুক দেন। শরীর এবং মস্তিষ্ক, দু’টিই একসঙ্গে প্রস্তুত হয়ে যায় গোটা দিনের জন্য।